সোনালী ব্যাংকের চালান জালিয়াতির মামলার আসামি এক আইনজীবীর জামিন নামঞ্জুর করায় অন্য আইনজীবীরা আদালতে এজলাসের সামনে জড়ো হয়ে প্রতিবাদ করেছেন। একপর্যায়ে থানা ও গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) এসে ওই আসামিকে আদালত থেকে কারাগারে নিয়ে যায়।
জয়পুরহাট সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিশীত রঞ্জন বিশ্বাসের আদালতে সোমবার (৫ ডিসেম্বর) এ ঘটনা ঘটে।
ওই আসামির নাম আনিছুর রহমান (৪৭)। তিনি জয়পুরহাট সদর উপজেলার পশ্চিম পারুলিয়া গ্রামের মোকলেছুর রহমানের ছেলে।
আনিছুর রহমান জয়পুরহাট আদালতের আইনজীবী। তাঁকে অসত্য ও সাজানো মামলায় কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে দাবি করেন জয়পুরহাট জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহনুর রহমান।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, জয়পুরহাট সদর উপজেলার হিচমিতে অবস্থিত বিজলি ফিড মিলের মালিক আমানুল্লাহ মেসার্স ফিরোজা ট্রেডার্সের মালিক সোহেল রানার কাছে ব্যবসায়িক লেনদেনের টাকা পান। ২০১৭ সালে সোহেল রানা মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক জয়পুরহাট শাখায় থাকা তাঁর হিসাব নম্বরের ২৮ লাখ ১৬ হাজার টাকার একটি চেক আমানুল্লাহকে দেন। তিনি ২০১৭ সালের ১৮ অক্টোবর চেকটি ইসলামী ব্যাংক জয়পুরহাট শাখায় নিজ হিসাব নম্বরে জমা দেন।
সোহেল রানার মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের হিসাব নম্বরে উল্লিখিত পরিমাণ টাকা জমা না থাকায় চেকটি প্রত্যাখ্যাত হয়। ওই বছরের ৬ নভেম্বর সোহেল রানাকে টাকা পরিশোধের ৩০ দিন সময় বেঁধে দিয়ে লিগ্যাল নোটিশ দেওয়া হয়। নোটিশ পাওয়ার পরও সোহেল রানা টাকা পরিশোধ করেননি। এ ঘটনায় ২০১৮ সালের ২ জানুয়ারি তাঁর বিরুদ্ধে আদালতে ২৮ লাখ ১৬ হাজার টাকার চেক প্রত্যাখ্যান মামলা করেন আমানুল্লাহ।
চেক প্রত্যাখ্যান মামলায় দাবির অর্ধেক টাকা জমা দিয়ে জামিন আবেদন করতে হয়। নিয়মানুযায়ী গত বছরের ২৮ নভেম্বর সোনালী ব্যাংকের ১৪ লাখ ৮ হাজার টাকার একটি চালান আসামির জামিন আবেদনের সঙ্গে আদালতে জমা দেওয়া হয়। এরপর আদালত আসামি সোহেল রানার জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন।
মামলায় আসামি পক্ষের আইনজীবী ছিলেন আনিছুর রহমান। চলতি বছরের ১৭ জানুয়ারি বাদী তাঁর আইনজীবী গোলাম মোকারম চৌধুরীর কাছে জানান যে চালানমূলে ব্যাংকে টাকা জমা হয়নি। এরপর বাদীর আইনজীবী ট্রেজারিতে খোঁজ নিয়ে চালান জালিয়াতির সত্যতা পান। তিনি বিবাদী পক্ষের আইনজীবী আনিছুর রহমানকে বিষয়টি জানান। তিনিও খোঁজ নিয়ে ব্যাংক চালান জালিয়াতির সত্যতা পান।
এরপর আইনজীবী আনিছুর রহমান বাদী হয়ে তিনজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা চার-পাঁচজনকে আসামি করে থানায় একটি মামলা করেন। মামলাটি গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করার পর এর উপপরিদর্শক (এসআই) আমিরুল ইসলাম সেটি তদন্ত করেন।
এ মামলায় আসামি সোহেল রানার বড় ভাই আবদুল করিম, বোন পারুল বেগম, জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত নসু বাবু ও নাজমুল হককে গ্রেপ্তার করা হয়। তদন্ত কর্মকর্তা ‘তথ্যগত ভুল’ দেখিয়ে মামলাটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেন
চালান জালিয়াতির ঘটনায় গোয়েন্দা পুলিশের এসআই আমিরুল ইসলাম বাদী হয়ে চলতি বছরের ৮ নভেম্বর জয়পুরহাট সদর থানায় মামলা করেন। এ মামলায় আগের মামলার বাদী আইনজীবী আনিছুর রহমানসহ ছয়জনকে আসামি করা হয়। তবে আগের মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া আবদুল করিমকে মামলার আসামি করা হয়নি।
সোমবার দুপুরে মামলার আসামি আইনজীবী আনিছুর রহমান চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করেন। আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এ সময় আদালতে থাকা আইনজীবীরা এর প্রতিবাদ জানান। একপর্যায়ে থানা ও গোয়েন্দা পুলিশ আদালতে এসে আসামি আনিছুর রহমানকে কারাগারে নিয়ে যায়।
ব্যাংক চালান জালিয়াতির ঘটনায় আইনজীবী আনিছুর রহমান জড়িত নন দাবি করে জয়পুরহাট জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহনুর রহমান বলেন, ‘তিনি (আনিছুর রহমান) নিজেই বাদী হয়ে একটি মামলা করেছিলেন। সেই মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ। একই ঘটনায় গোয়েন্দা পুলিশ বাদী হয়ে আনিছুর রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে।’
সমিতির সম্পাদক বলেন, ‘আনিছুর রহমানকে পরিকল্পিতভাবে এ মামলায় জড়ানো হয়েছে। আজকে তাঁর জামিন আবেদন করা হয়েছিল। আদালত তা নামঞ্জুর করেছেন। অসত্য ও সাজানো মামলায় তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আমরা এ ঘটনার প্রতিবাদ করেছি।’
জয়পুরহাট আদালতের পুলিশ পরিদর্শক আবদুল লতিফ খান বলেন, এক আইনজীবী জামিন নামঞ্জুর করে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত। এ নিয়ে আদালতে উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশ এসে আসামিকে কারাগারে নিয়ে গেছে।
গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহেদ আল মামুন বলেন, ব্যাংকের চালান জালিয়াতির ঘটনার সঙ্গে আইনজীবীর আনিছুর রহমানের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। এ কারণে তাঁকে মামলার আসামি করা হয়েছে।
সূত্র : প্রথম আলো