ঋণের মূল টাকার পরিমাণ ৭৪ লাখ, মামলায় (জারি মোকদ্দমা) ৬১ কোটি ৬১ লাখ টাকা দাবি করায় প্রশ্ন তুলেছেন হাইকোর্ট। এসময় বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আবদুল জব্বারের উদ্দেশে আদালত বলেছেন, আপনার দিলে কি দয়া হয় না? বঙ্গবন্ধু কি কৃষকদের ওপর এমন শোষণ করার জন্য কৃষি ব্যাংক করেছিলেন?
নেত্রকোনোর অর্থঋণ আদালতের এক আদেশের বিরুদ্ধে করা একটি রিট আবেদনের শুনানিতে বৃহস্পতিবার (১৫ ডিসেম্বর) বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান ও বিচারপতি এ কে এম রবিউল হাসানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এসব কথা বলেন।
অর্থঋণ আদালতের দেওয়া আদেশের বিরুদ্ধে গত অক্টোবরে ওয়ারেস তালুকদার নামে এক ব্যক্তি রিটটি করেন। রিটের শুনানিতে গত বুধবার আদালত কৃষি ব্যাংকের এমডিকে বৃহস্পতিবার আদালতে হাজির হতে বলেন। সে মোতাবেক সকালে তিনি আদালতে হাজির হন।
এ সময় আদালতে রিট আবেদনকারী ও ঋণগ্রহীতা ওয়ারেস তালুকদার ওরফে ওয়ারেস মিয়ার পক্ষে আইনজীবী আবুল বাশার টুটুল শুনানিতে ছিলেন। এমডির পক্ষে ছিলেন আইনজীবী শেখ রিয়াজুল হক। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ওয়ায়েস আল হারুনী।
এমডির উদ্দেশে আদালত বলেন, ‘কিছু বিষয় দেখে অবাক ও বিস্মিত হয়েছি। আদালতের কাজ কেউ লাইন থেকে চলে গেলে, তাকে লাইনে তুলে দেওয়া। প্রশ্ন হচ্ছে ২০০৩ সালে অর্থঋণ আদালত আইন হয়েছে, যা ২০০৪ সালে কার্যকর হয়। বঙ্গবন্ধু কৃষকদের কথা চিন্তা করে কৃষকদের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য ব্যাংকটি করেন। আসল ঋণ ৭৪ লাখ, যার বিপরীতে ৬১ কোটি টাকা দাবি করা হয়েছে। ব্রিটিশ সরকার ও পাকিস্তান আমলে এমন শোষণ হয়নি। শোষণের দিক থেকে ব্রিটিশ ও পাকিস্তানের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছেন।’
একপর্যায়ে এমডির আইনজীবী শেখ রিয়াজুল হক বলেন, ঋণ পুনঃ তফসিল হয়েছে। এ পর্যায়ে ২০০৩ সালের অর্থঋণ আদালত আইনের ৪৭ ও ৪৭(৩) বিধান তুলে ধরেন আদালত। এর ভাষ্য, ঋণগ্রহীতাকে দেওয়া আসল ঋণের ওপর দায় এমনভাবে আরোপ করে আদালতে মামলা করা যাবে না, যাতে আদালতে উত্থাপিত ওই সমুদয় দাবি আসল ঋণ অপেক্ষা ২০০% (১০০+২০০=৩০০ টাকা) এর বেশি হয়। কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইচ্ছা করলে এই ধারা কার্যকর হওয়ার আগে এই ধারার বিধান অনুসরণ করতে পারবে।
এমডির উদ্দেশে আদালত বলেন, ‘আপনি সর্বোচ্চ জায়গায় বসে আছেন। দাবি আরোপে সীমাবদ্ধতা বিষয়ে ৪৭ ধারায় বলা আছে। ১৪ বা ২০ পার্সেন্ট যেটিই নেন না কেন, আইনের স্কিম দেখতে হবে। আপনার কি দয়া হয় না? দিলে যাতে দয়া হয়—এই দয়া করার জন্য জাতীয় সংসদ আইন পাস করেছে। ঋণের আসল অর্থের পরিমাণ কত? ঋণের আসল অর্থ ৭৪ লাখ টাকা। ৬১ কোটি টাকা দাবি করেছেন—এটি কী করলেন? আপনি জানেন প্রিন্সিপাল লোন (ঋণের আসল অর্থের পরিমাণ) অ্যামাউন্ট কত। ভবিষ্যতে সতর্ক থাকবেন, এমন যাতে আর না হয়। আপনি যদি সেই কৃষক হতেন, আপনার ছেলেমেয়েরা এই কোটি কোটি টাকার জন্য কোথায় যেত? অর্থনৈতিক চাপ মানুষ সহ্য করতে পারে না। উই আর সো শকড।’
আদালত আরও বলেন, বিষয়টি নিয়ে বসেন, স্টাডি করেন। ওই ঋণের পরে আবার ঋণ নিয়ে থাকলে যোগ করে তার পরে সুদসহ হিসাব করেন। যত টাকা হয় নেবেন, তবে ৪৭ ধারার বিধানের আলোকে। রাষ্ট্র যে বিধান করেছে, তার বাইরে যাবেন না। বঙ্গবন্ধু অনেক আশা নিয়ে কৃষি ব্যাংকটি করেছেন।
পরে আদালত রুলসহ আদেশ দেন। আইনের ৪৭ ও ৪৭(৩) ধারার আলোকে অর্থঋণ আদালতে থাকা মামলা (জারি মামলা) নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ঋণগ্রহীতার প্রতি গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আদেশ স্থগিত করা হয়েছে।
আদেশের সময় এমডির উদ্দেশে আদালত বলেন, অর্থঋণ আদালত আইনে আছে কতটুকু দাবি করতে পারবেন। এর বাইরে হলে কৃষক আর তখন ব্যাংকে ভিড়বেন না। ব্যাংকের সাইনবোর্ড দেখে ভয় পাবেন। কৃষি ব্যাংক যেন কৃষকের বন্ধু হয়।