ব্যক্তি, গোষ্ঠী ও দলীয় স্বার্থে সংবিধানের ব্যবহার কখনো শুভ হতে পারে না। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আমাদের সংবিধানের রক্ষক তাই সংবিধানের পবিত্রতা ও মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখতে নির্বাহী, আইন ও বিচার বিভাগকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। বিচার বিভাগ ও আইনজীবীদের এক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে।
আজ শনিবার (১৭ ডিসেম্বর) বাংলাদেশের সংবিধান প্রবর্তনের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এসব কথা বলেন। এদিন বিকেল সাড়ে ৩টায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) এ অনুষ্ঠান আয়োজন করে সুপ্রিম কোর্ট।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাষ্ট্রপতি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সংবিধানে একটি সাধীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠার কথা উল্লেখ করেছিলেন। যেখানে সুপ্রিম কোর্ট ও অধস্তন আদালত সমূহ নিজ নিজ এখতিয়ার ও সীমার মধ্যে স্বাধীনভাবে আইন অনুসারে বিচারকাজ পরিচালনা করবে।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্নের প্রথম ধাপ নিশ্চিত হয় যখন ১৯৭২ সালের ১৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট তার যাত্রা শুরু করে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই মানবাধিকার রক্ষা, ন্যায় বিচার নিশ্চিতের পাশাপাশি শান্তি ও সংকটে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট সংবিধানের অবিভাবক ও রক্ষক হিসেবে মর্যাদাপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি সোনার বাংলার স্বপ্নদ্রষ্টা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে। সংবিধান বিরোধী ইমডেমনিটি অধ্যাদেশ পাশ করে জাতির পিতার হত্যার বিচারের পথ বন্ধ করে দেয়। সুপ্রিম কোর্ট ইমডেমনিটি অধ্যাদেশকে সংবিধান বিরোধী ঘোষণা করে এবং জাতির পিতার হত্যাকারীদের বিচার করে সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করেছে।
এছাড়া বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর স্বাধীনতা বিরোধীরা দেশে সামরিক শাসন জারির মাধ্যমে সংবিধানকে নানানভাবে কাটাছেঁড়া করে গণতন্ত্রকে চিরতরে হত্যা করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু জনতার প্রতিরোধের মুখে স্বৈরশাসকদের পতন হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
রাষ্ট্রপতি বলেন, স্বৈরশাসকরা তাদের পতনের পূর্বে অবৈধভাবে সংসদকে ব্যবহার করে সংবিধানের পঞ্চম ও সপ্তম সংশোধনী পাশের মাধ্যমে তাদের সমস্ত কুকীর্তিকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু বাংলাদেশ সংবিধানের পঞ্চম ও সপ্তম সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা করে দেশের মানুষের গণতান্ত্রিককে প্রতিষ্ঠা করেছে।
তিনি বলেন, সংবিধান বিরোধী যেকোন তৎপরতা মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা বিরোধী চক্রান্ত রুখে দিতে জনগণকে সজাগ থাকতে হবে। গণতন্ত্রের চর্চা ও মূল্যবোধের বিকাশ যর বাড়বে সংবিধানের কার্যকারিতা ও মর্দাযাও তত বেশি বৃদ্ধি পাবে।
এ সময় তিনি দল মত নির্বিশেষে সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে দেশে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।
প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, শ্রীলঙ্কার প্রধান বিচারপতি জয়ন্ত জয়সুরিয়া, বাংলাদেশের সাবেক প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেন, অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ আমিন উদ্দিন, সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির এবং আপিল বিভাগের বিচারপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. নুরুজ্জামান প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিবৃন্দ, মন্ত্রীপরিষদের সদস্যবৃন্দসহ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।