ব্রাহ্মণবাড়িয়া নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক (জেলা জজ) মোহাম্মদ ফারুকের বিরুদ্ধে আইনজীবীদের নিয়ে আপত্তিজনক মন্তব্য করার অভিযোগ উঠেছে। এর প্রতিবাদে গতকাল রোববার (১ জানুয়ারি) থেকে ওই বিচারকের আদালত বর্জন করেন আইনজীবীরা।
আইনজীবীরা জানান, ওই বিচারককে প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত তাঁরা আদালত বর্জন করবেন। গত ২৬ ডিসেম্বর জেলা আইনজীবী সমিতির কার্যকরী পরিষদের সভা হয়। সভায় ১ জানুয়ারি থেকে মোহাম্মদ ফারুকের আদালত বর্জনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
কয়েকজন আইনজীবী ও নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, রোববার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা জজ) এজলাসে উঠলেও আইনজীবীরা আদালতের কোনো কার্যক্রমে অংশ নেননি। আইনজীবীরা ওই আদালত বর্জন করেন।
আইনজীবী সমিতি সূত্রে জানা গেছে, গত ১ ডিসেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা জজ আদালতের শেষ কার্যদিবস ছিল। ওই দিন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক মোহাম্মদ ফারুকের আদালতে একজন আইনজীবী বিলম্বে একটি মামলা দাখিল করেন। কিন্তু বিলম্ব হওয়ার কারণে ওই আদালতের বিচারক মামলাটি গ্রহণ করেননি।
তখন উপস্থিত আইনজীবীরা বিচারককে বলেন, মামলার বাদী আইনজীবীদের মতো আইন জানেন না। তাই দেরিতে আদালতে এসেছেন। এখন (১ ডিসেম্বর) মামলাটি না নিলে এক মাস পর মামলার আবেদন করতে হবে। এতে বাদীপক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মামলাটি নেওয়ার অনুরোধ করলেও বিচারক শোনেননি। পরে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সশরীর ওই বিচারকের এজলাসে গিয়ে মামলাটি নেওয়ার অনুরোধ করেন। তখন বিচারক তাঁদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন বলে অভিযোগ ওঠে।
জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি তানবীর ভূঁইয়া বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া আইনজীবী সমিতি ও আইনজীবীদের নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর আদালত বর্জন করেছেন আইনজীবীরা।
জেলা ও দায়রা জজ, চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও উচ্চ আদালতের রেজিস্ট্রারকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। কিন্তু এক মাস হলেও বিষয়টির কোনো সুরাহা হয়নি। তাই তাঁরা আদালত বর্জন করেছেন। ওই বিচারককে প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত আইনজীবীরা আদালত বর্জন অব্যাহত রাখবেন বলেও জানান সমিতির সভাপতি।
এ বিষয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক মোহাম্মদ ফারুক বলেন, ‘আমি আজ (রোববার) আদালত করেছি। এজলাসে উঠেছি। সুপ্রিম কোর্টের অধীনে আমাকে আদালতে যেতে হয়। কালও যাব। আইন একটি স্বাধীন পেশা। আইনজীবীরা যদি আদালতে না আসেন তাহলে কী আর করা।’
মোহাম্মদ ফারুক আরও বলেন, ‘১ ডিসেম্বর আমার আদালতে যতগুলো মামলা উঠেছিল, নিয়মানুযায়ী সব দেখেছি এবং কাজ শেষ করেছি। ওই দিন সন্ধ্যায় কয়েকজন আইনজীবী কয়েকটি মামলা নিয়ে আমার আদালতে আসেন। তাঁরা আমাকে একটি মামলা গ্রহণ করতে বলেন।’
তিনি বলেন, ‘আদালতের অন্য কাজে ব্যস্ত থাকায় মামলা নিতে পারব না জানিয়ে তাঁদের পরে আসতে বলি। কারণ, আইনানুযায়ী সকাল সাড়ে নয়টার মধ্যে বিচারকের এজলাসে ওঠার আগে আদালতে মামলা দাখিল করতে হয়।’