মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী : কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য অ্যাডভোকেট এস.এম জসিম উদ্দিন’কে পুলিশ গ্রেপ্তার করার পর কক্সবাজারের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল এর আদালত থেকে জামিন পেয়ে মুক্তি লাভ করেছেন।
কক্সবাজারের ঈদগাঁহ থানায় রোববার (৮ জানুয়ারি) রাতে দায়েরকৃত একটি মামলায় পুলিশ তাঁকে একই রাতে গ্রেপ্তার করেছিলো। মামলায় হত্যার উদ্দেশ্যে মারধর করে হুমকি, চুরি ও আঘাত করার অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, শনিবার (৭ জানুয়ারি) সন্ধ্যা ৭ টা ১০ মিনিটের দিকে কক্সবাজারের ঈদগাঁহ উপজেলার নতুন অফিস বাজার আমিন সুপার মার্কেটের সামনে পারিবারিক বিরোধের জের ধরে একই ইউনিয়নের উত্তর নাপিতখালী গ্রামের মৃত ইসলাম আহাম্মদ এর পুত্র অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন (৩৫) এবং তাঁর ভাই আমানুল হক (৪০) একই এলাকার এম. মনজুর আলমকে মারধর করে। হুমকি দিয়ে নগদ সাড়ে তিন হাজার টাকা কেড়ে নেয়।
এ ঘটনায় আহত এম. মনজুর আলমের পুত্র মোহাম্মদ মনজুরুল হাসান তাহসিন (২৩) বাদী হয়ে রোববার রাত ১২ টা ১৫ মিনিটে ঈদগাঁহ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। যার ঈদগাঁহ থানার মামলা নম্বর : ২/২০২৩ ইংরেজি এবং জিআর মামলা নম্বর ২/২০২৩ ইংরেজি (ঈদগাঁহ)। ধারা : ১৪৩/৩৪১/৩২৩/৩২৬/৩০৭/৩৭৯/৫০৬/৩৪ ফৌজদারী দন্ড বিধি। মামলায় উল্লেখিত ২ জন কে এজাহারভুক্ত আসামী এবং ৩/৪ জনকে অজ্ঞাত আসামী করা হয়।
এ মামলায় অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে রোববার সকালে আদালতে চালান দেয়। আদালতে আনার পর প্রথমে কক্সবাজারের আদালত নম্বর ৬ এর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ এহসানুল ইসলাম এর কোর্টে অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিনের জামিন আবেদন করা হয়। বিচারক জামিনের আবেদনটি শুনানী শেষে অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিনের জামিন না মঞ্জুর করে তাঁকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন।
একইদিন বিকেলে কক্সবাজারের সিনিয়র জেলা ও দায়রা মোহাম্মদ ইসমাইল এর আদালতে ১২৯/২০২৩ নম্বর ফৌজদারী মিস মামলা মূলে অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন এর জামিন আবেদন করা হয়। বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল জামিনের আবেদনটি শুনানী শেষে জামিন মঞ্জুর করলে অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিনে একইদিন সন্ধ্যায় মুক্তি পান।
জেলা ও দায়রা জজ আদালতে ফৌজদারী মিস মামলায় অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিনের জামিন আবেদন শুনানীতে তাঁর নিয়োজিত আইনজীবীদের পাশাপাশি একই আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম ফরিদও আদালতে জামিন প্রদানের পক্ষে সহায়তা করেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিনের নিয়োজিত আইনজীবী ও কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সহ সাধারণ সম্পাদক (সাধারণ) অ্যাডভোকেট সাহাব উদ্দিন সাহিব অভিযোগ করেছেন, ঘটনাস্থলে বাদীপক্ষের লোকজন আগে থেকে ওৎপেতে থেকে অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিনের উপর সশস্ত্র হামলা চালায়। এসময় অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন আত্মরক্ষার চেষ্টা করলে উভয়পক্ষের মধ্যে ধ্স্তাধস্তি হয়। হামলায় অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন আহত হন।
অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন আহত অবস্থায় শনিবার রাত সাড়ে ৮ টার দিকে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসলে সেখানেও দলবদ্ধ সন্ত্রাসীরা হামলা করতে আসে। তখন অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন হাসাপাতালের পুলিশ ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়।
এসময় কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সহ সাধারণ সম্পাদক (সাধারণ) অ্যাডভোকেট সাহাব উদ্দিন সাহিব নিজে গিয়ে অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিনকে সমিতির জিম্মায় নিয়ে আসতে চাইলে হাসপাতাল পুলিশ নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিনকে শনিবার রাত ৯ টার দিকে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় সোপর্দ করে।
প্রতিপক্ষের হামলায় আহত অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিনকে তিন ঘন্টারও বেশি সময় কক্সবাজার সদর মডেল থানায় বসিয়ে রেখে রোববার রাত ১২টা ১৫ মিনিটে ঈদগাঁহ থানার ওসি মোহাম্মদ গোলাম কবির প্রতিপক্ষের মামলটি এন্ট্রি করে অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিনকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখান এবং সদর মডেল থানা থেকে আহত অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিনকে ঈদগাঁহ থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
অ্যাডভোকেট সাহাব উদ্দিন সাহিব আরো অভিযোগ করেন, যেখানে মামলা করার কথা অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিনের। সেখানে প্রতিপক্ষের মামলা এন্ট্রি হওয়ার তিন ঘন্টা আগে থেকে অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিনকে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় বসিয়ে রেখে পরে তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানোর ঘটনা খুবই নিন্দনীয়। যা পুলিশের কর্মকান্ডকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিনের গ্রেপ্তার নিয়ে পুলিশের এ ধরনের নেতিবাচক ভূমিকার কথা রোববার সকালে আদালত পাড়ায় ছড়িয়ে পড়লে আইনজীবীসহ সংশ্লিষ্ট সকলে ক্ষোভে ফেটে পড়েন এবং এর তীব্র নিন্দা জানান। পুলিশ ঘটনা তদন্ত না করে প্রতিপক্ষের একতরফা মামলা এন্ট্রি করায় আইনজীবীরা এর প্রতিবাদ জানান।
এদিকে, জামিনে মুক্ত হওয়ার পর অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন পিপি অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম ফরিদ, তাঁর পক্ষে লড়ে যাওয়া আইনজীবীগণ সহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।
পিপি অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম ফরিদ জামিন লাভের পর এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “ছোট ভাই অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিনকে কারাগারে রেখে আমি পিপি এড. ফরিদ বিছানায় ঘুমাতে যেতে পারিনা। তোমাদের ছাড়া আমি অচল, তাই সকালে বাড়ি থেকে বের হয়ে সন্ধ্যায় তোমাকে নিয়ে বাড়ি ফিরলাম। আমি প্রতারণা, নাফরমানি, বেইমানী, ব্ল্যাকম্যালিং শিখিনি। তোমাদের বিশ্বাস আমার চলার পাথেয়।”