তাঁর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখিয়ে বিচারপ্রক্রিয়ায় বাধা দিচ্ছেন আইনজীবীদের একাংশ। এই মর্মে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা বিক্ষোভকারী আইনজীবীদের বিরুদ্ধে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা করলেন।
শুধু তা-ই নয় বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে আদালতের অবমাননার রুলও জারি করেছেন তিনি। স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে দায়ের করা এই মামলাটির শুনানি হবে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তবের ডিভিশন বেঞ্চে।
হাইকোর্টের বিচারপতি মান্থার বিরুদ্ধে সোমবার (৯ জানুয়ারি) থেকেই বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন আইনজীবীদের একাংশ। এই মুহূর্তে বিচারপতি মান্থার বেঞ্চে বিচারাধীন রাজ্যের বেশ কয়েকটি মামলা। তার অনেকগুলি আবার বেশ গুরুত্বপূর্ণও।
এই পরিস্থিতিতে আদালত চত্বরে বিচারপতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখানোয় সোমবার ৪০০টি মামলার বিচারপ্রক্রিয়া থমকে যায়। কারণ ১০০টি মামলার আইনজীবীই এসে পৌঁছননি বিচারপতির এজলাসে।
আজ মঙ্গলবারও (১০ জানুয়ারি) প্রায় একই অবস্থা হয়। সেই প্রেক্ষিতেই আদালতের কাজে বাধা সৃষ্টির অভিযোগ আনেন বিচারপতি মান্থা।
উল্লেখ্য, সোমবার বিচারপতির বিরুদ্ধে আইনজীবীদের বিক্ষোভ একটা সময়ে হাতাহাতির পর্যায়ে পৌঁছয়। পাশাপাশি তাঁর নামে পোস্টারও পড়ে। সেই পোস্টারের বক্তব্য ছিল— ‘‘বিচারপতি মান্থা বিচার প্রক্রিয়ার কলঙ্ক।’’
যদিও কেন এই অভিযোগ তা স্পষ্ট নয় পোস্টারে। কারা সেই পোস্টার ফেলেছিল জানা যায়নি তা-ও। এরপরে মঙ্গলবার আইনজীবীদের সংগঠন বার অ্যাসোসিয়েশনের বেশ কয়েক জন সদস্য বিচারপতি মান্থার এজলাস বয়কটেরও ডাক দেয়। একটি প্রস্তাব এনে বিচারপতির এজলাস না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা। যা নিয়ে মঙ্গলবার সকাল থেকে হাইকোর্ট চত্বরে শুরু হয় তুমুল গণ্ডগোল।
মঙ্গলবার এ ব্যাপারে প্রধান বিচারপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা করার প্রস্তাব দেন হাইকোর্টের কয়েক জন আইনজীবীই। বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য, সপ্তাংশু বসুর মতো আইনজীবীরা আদালতকে বলেন, ‘‘যা হচ্ছে তা ভাল হচ্ছে না। বিষয়টি নিন্দনীয়। এ ব্যাপারে অদালত অবমাননা রুল জারি করে বিক্ষোভকারীদের কাছে জবাব চাওয়া উচিত।’’
কেন্দ্রের সলিসিটর জেনারেল বিল্বদল ভট্টাচার্য কেন্দ্রীয় বাহিনী এনে বিক্ষোভ থামানোর প্রস্তাবও দেন। বিল্বদল বলেন, ‘‘তিনি সেই ব্যবস্থা করে দিতে পারবেন।’’
কিন্তু হাইকোর্ট তখনই এ বিষয়ে কোনও মতামত জানায়নি। বরং আদালত কক্ষে বিক্ষোভরত আইনজীবীদের ধমক দিয়ে সাবধান করে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘এই ঘটনা রেকর্ড করতে বাধ্য করবেন না। কারণ সেটা হলে আপনাদের জন্য ভাল হবে না।’
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার সকাল থেকে এই বিক্ষোভকারী আইনজীবীরা বিচারপতি মান্থার এজলাসে যাননি। কাউকে যেতেও দেননি। শেষে মামলার শুনানি থমকে যাওয়ায় একটা সময় বিচারপতি মান্থা তাঁর এজলাসের বাইরে পুলিশি নিরাপত্তা বাড়ানোর নির্দেশ দেন।
বিচারপতি মান্থা বলেন, কেউ যেন তাঁর এজলাসে ঢুকতে বাধা না পান। কিন্তু তাতেও পরিস্থিতির বিশেষ উন্নতি হয়নি। এর পরই বিচারপ্রক্রিয়ায় বাধা দেওয়ার অভিযোগ করেন বিচারপতি মান্থা।
অন্য দিকে, বিচারপতি মান্থার এজলাস বয়কটের ঘটনায় প্রধান বিচারপতির কাছে দুঃখপ্রকাশ করেন রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়। তিনি প্রধান বিচারপতির এজলাসে গিয়ে বলেন, যা ঘটেছে তাতে আমি লজ্জিত। এটা দুঃখজনক। জবাবে প্রধান বিচারপতি তাঁকে জানিয়েছেন এই বিষয়ে আগেই সংগঠিত সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত ছিল।
সূত্র : আনন্দনাজার