'বিচারপতি নাজমুল আহসান তাঁর ঐতিহাসিক রায়ের মধ্য দিয়ে বেঁচে থাকবেন'
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান মিজানের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী, স্মরণসভা ও স্মারক গ্রন্থের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য প্রদানকালে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী

‘বিচারপতি নাজমুল আহসান তাঁর ঐতিহাসিক রায়ের মধ্য দিয়ে বেঁচে থাকবেন’

বীর মুক্তিযোদ্ধা বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান মিজান একজন সফল মানুষ ছিলেন। একজন মানুষ হিসেবে যা হওয়া উচিত, যতটুকু পাওয়া উচিত তিনি তার সবটুকুই পেয়েছেন। তিনি তাঁর দেওয়া ঐতিহাসিক রায়ের মধ্য দিয়ে বেঁচে থাকবেন।

সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান মিজানের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী, স্মরণসভা ও স্মারক গ্রন্থের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে আজ রোববার (৫ ফেব্রুয়ারি) এসব কথা বলেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।

এদিন বিকেল সাড়ে ৪টায় সুপ্রিম কোর্ট অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধান বিচারপতি আরো বলেন, বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান মিজান একজন আদর্শ বাবা ছিলেন। স্বামী হিসেবেও তিনি সফল ছিলেন।

এসময় বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান মিজান তাঁর দেওয়া ঐতিহাসিক রায়ের মধ্য দিয়ে বেঁচে থাকবেন বলেও উল্লেখ করেন প্রধান বিচারপতি তাঁকে নিয়ে প্রকাশিত স্মারক গ্রন্থটি পড়ার আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানে আলোচনায় অংশ নেন আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, বিচারপতি বোরহান উদ্দিন, বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম, বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম, বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি জাহাঙ্গীর হসেন।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার এস. কে এম তোফায়েল হাসান।

বিচারপতি নাজমুল আহসানের সংক্ষিপ্ত জীবনী ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকম পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল।

জন্ম ও পরিচয়

নাজমুল আহসান মিজান ১৯৫৫ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বরিশাল জেলার হিজলা উপজেলার মেমানিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম ডাইয়া গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা আনোয়ার হোসেন তালুকদার প্রথম জীবনে স্কুল শিক্ষক ছিলেন। পরে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কমকর্তা হিসেবে চাকরি করেন। তার মায়ের নাম জাহানারা বেগম।

পড়াশোনা

তার শৈশব কাটে মেঘনা তীরের হিজলায়। পরে বাবার চাকরি সূত্রে কিছুদিন বসবাস করেন বরগুনার নলীতে। সেখানকার নলী উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ১৯৭০ সালে এসএসসি পাস করেন। বরিশাল সৈয়দ হাতেম আলী কলেজ থেকে এইচএসসি, সরকারি ব্রজমোহন কলেজ (বিএম) থেকে স্নাতক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। পরে তিনি এলএলবি পাস করে আইন পেশায় যোগ দেন।

মুক্তিযুদ্ধ, রাজনীতি ও কর্ম জীবন

১৯৮৬ সালের ১৮ মার্চ বরিশাল জেলা আদালতের আইনজীবী হিসেবে আইন পেশায় কাজ শুরু করেন নাজমুল আহসান মিজান। পরে তিনি হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। কিছুদিন তিনি ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ছিলেন। ২০১০ সালের ১৮ এপ্রিল হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান নাজমুল আহাসান মিজান। ২০১২ সালের ১৫ এপ্রিল তিনি বিচারপতি পদে স্থায়ী হন।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও বিচারপতি পদে নিয়োগ পাওয়ার আগে আইন পেশার পাশাপাশি দীর্ঘসময় নাজমুল আহসান মিজান বাম ধারার রাজনৈতিক সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বরগুনা ও স্বরূপকাঠির পেয়ারাবাগান এলাকায় মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন।

উল্লেখযোগ্য রায়

বিচারপতি হিসেবে তিনি অনেকগুলো ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ রায় ঘোষণা করেন। বিশেষ করে ‘দেশের সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের সব অনুষ্ঠানে বক্তব্য শেষে মুক্তিযুদ্ধের রণধ্বনি ‘জয়বাংলা’ স্লোগান উচ্চারণ করে বক্তৃতা শেষ করা, ‘বিচার আদালতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি টাঙানো,’ মুক্তিযোদ্ধাদের বীর মুক্তিযোদ্ধা সম্বোধন, বিনা দোষে কারাগারে আটকে থাকা জাহালমকে মুক্তির রায়গুলো উল্লেখযোগ্য।

মৃত্যু

বীর মুক্তিযোদ্ধা বিচারপতি নাজমুল আহসান ছিলেন দেশের বিচারাঙ্গনের একজন সুপরিচিত ব্যক্তিত্ব। গত বছর ৮ জানুয়ারি এফ আর এম নাজমুল আহাসান মিজানসহ মোট চারজন বিচারপতিকে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি।

নিয়োগপ্রাপ্ত বাকি তিন বিচারপতি হলেন- বোরহান উদ্দিন, এম ইনায়েতুর রহিম ও কৃষ্ণা দেবনাথ। পরদিন ৯ জানুয়ারি শপথ নেন এ তিন বিচারপতি। কিন্তু করোনা সংক্রমিত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকায় শপথ নিতে পারেননি বিচারপতি নাজমুল আহসান মিজান। পরে ২০২২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ভোরে তিনি রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।