বাংলা একাডেমি আয়োজিত চলতি ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে আয়োজিত বই মেলায় আদর্শ প্রকাশনীকে স্টল বরাদ্দ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। তবে এক্ষেত্রে বিতর্ক ওঠা তিনটি বই বিক্রি ও প্রদর্শনী না করার শর্ত জুড়ে দিয়েছেন আদালত।
এ সংক্রান্ত এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে আজ বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে রিটের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার অনীক আর হক। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সেলিম আজাদ।
বাংলা একাডেমির আপত্তি জানানো তিনটি বই হচ্ছে, মির্জা ফখরুলের মেয়ের জামাতা ফাহাম আব্দুস সালামের লেখা ‘মিডিয়োক্রিটির সন্ধানে’, লেখক জিয়া হাসানের ‘উন্নয়ন বিভ্রম’ এবং লেখক ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব-এর ‘অপ্রতিরোধ্য উন্নয়নের অভাবনীয় কথামালা’।
এর আগে গতকাল মঙ্গলবার (৭ ফেব্রুয়ারি) যে তিনটি বই নিয়ে বাংলা একাডেমি আপত্তি জানায়, ওই বইগুলো স্টলে রাখা হবে না, এই মর্মে মুচলেকা দাখিলের জন্য আদর্শ প্রকাশনীকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি বাংলা একাডেমির আপত্তি থাকা তিনটি বই আদালতে দাখিল করতে বলা হয়।
ওইদিন শুনানিতে হাইকোর্ট প্রশ্ন রেখে বলেন, যে তিনটি বই নিয়ে বাংলা একাডেমি আপত্তি জানিয়েছে, ওইগুলো বাদ রেখে আদর্শ প্রকাশনীকে বইমেলায় স্টল বরাদ্দ দিলে সমস্যা কোথায়? আমরা মনে করি সমস্যা থাকার কথা না।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীকে উদ্দেশ্য করে বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবীরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন।
আদালতে রিটের পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার অনীক আর হক আদর্শ প্রকাশনীকে বইমেলায় স্টল বরাদ্ধ দেওয়ার আর্জি জানান। তিনি বলেন, যে বইয়ের বাংলা একাডেমি আপত্তি জানিয়েছে স্টলে সে বই রাখা হবে না।
এ সময় সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সেলিম আজাদ আদর্শ প্রকাশনীকে স্টল বরাদ্ধ দেওয়ার আপত্তি জানান।
স্বত্বাধিকারীর রিট
আদর্শ প্রকাশনীকে স্টল বরাদ্দ না দেওয়ার সিদ্ধান্তের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে গত ২ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়। প্রকাশনীটির স্বত্বাধিকারী মো. মাহবুবুর রহমান বাদী হয়ে রিটটি দায়ের করেন।
রিট আবেদনে আদর্শ প্রকাশনীকে স্টল বরাদ্দ না দেওয়া কেন অবৈধ ঘোষণা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারির আরজি জানানো হয়। একইসঙ্গে দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রকাশনীটিকে স্টল বরাদ্দ দিতে নির্দেশনা চাওয়া হয়।
রিট আবেদনে বলা হয়, শুধুমাত্র একটি বইয়ের জন্য কাগজে-কলমে মেলাতে পুরো প্রকাশনীর অংশগ্রহণ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অথচ সে বইটি ব্যান্ড বা ব্ল্যাক লিস্টের নয়। বাংলা একাডেমি আইন ২০১৩ অনুযায়ী তাদের এমন সিদ্ধান্তের কোনও বৈধতা নেই।
একইসঙ্গে প্রতিবছর একাডেমি থেকে যে নীতিমালা করা হয়, তারও ব্যত্যয় ঘটিয়ে সিদ্ধান্ত দিয়েছে বাংলা একাডেমি। তাদের এমন সিদ্ধান্ত সংবিধানের বাক স্বাধীনতার বিরোধী বলেও আবেদনে উল্লেখ করা হয়।
রিটে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক ও সভাপতিসহ চার জনকে বিবাদী করা হয়।