দীর্ঘ এক মাস ধরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুই বিচারক ও নাজির মমিনুল ইসলামের শাস্তির দাবিতে কোর্ট বর্জন কর্মসূচি পালন করছে আইনজীবীরা। এতে অচল হয়ে পড়ছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিচার ব্যবস্থা।
এসময় জেলা জজ শারমিন নিগার এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১–এর বিচারক মোহাম্মদ ফারুককের আদালতে যাওয়া থেকে বিরত ছিলেন আইনজীবীরা। তবে দাবি পূরণ না হওয়ায় বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে এবার সব আদালত বর্জন করেছে আইনজীবী সমিতি। এতে বুধবার থেকে বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তি আরও বেড়েছে।
আদালতে ঘুরে দেখা যায়, বুধবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে আদালত চত্বরে বিচারপ্রার্থীদের সমাগম থাকলেও আইনজীবী দেখা যায় নি। তবে বিচার প্রার্থীরা জানতেন না বুধবার থেকে আবারও আদালত বর্জন করবেন আইনজীবীরা। বিষয়টি জেনে অনেক বিচারপ্রার্থী হতাশাগ্রস্থ হয়েছে। দূর-দূরান্ত থেকে আসা বিচারপ্রার্থীরা আদালত প্রাঙ্গণে এসে ঘুরে আবারও ফিরে যাচ্ছেন।
বিচার প্রার্থীরা ইচ্ছেকৃতভাবে ফিরে যাচ্ছে না, আইনজীবীরা আদালতের প্রতিটি প্রবেশ দ্বারে দাঁড়িয়ে আদালত থেকে বের করে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে বিচার প্রার্থীদের। তেমনটি অভিযোগ করেন সরাইল উপজেলা অরুয়াইল থেকে আসা সালমা বেগম।
তিনি অভিযোগ করেন, স্বামীর জামিনের আবেদন করতে আসলে আদালতে ভিতর ঢুকতেই ধমকিয়ে বের করে দেয়া হয়েছে তাকে। চার শিশু সন্তান নিয়ে দীর্ঘ দেড় মাস যাবত এই আদালতে চত্বরে ঘুরছেন স্বামী কাউসারকে জামিন করানোর জন্য। তবে আইনজীবী ও বিচারকদের দ্বন্দ্বে স্বামীর জামিন না করাতে পেরে শিশু সন্তান নিয়ে পথে বসার মত অবস্থা তাদের।
সালমা বেগম বলেন, ‘৬ মাস আগে প্রতিবেশী এক মহিলা তার স্বামী কাউসারের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। আর সেই মামলায় জেল খাটছে তার স্বামী। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী হওয়ায় স্বামীকে জামিন করানো জন্য হন্য হয়ে ঘুরছে আদালতে।
গত ৩ জানুয়ারি আদালতে হাজির করানো হয়েছিল। মামলায় প্রতিবেশী মহিলার সঙ্গে আপোষ করা হলেও সেদিন আইনজীবী না থাকায় তার স্বামীর জামিন হয় নি। তবে আদালতের বিচারক বলেছিলেন পিপি সাহেবের স্বাক্ষর নিয়ে আসলে জামিন দেয়া হবে। কিন্তু সেদিন ৫০০০ হাজার টাকা দিয়ে পায়ে ধরে কান্নাকাটি করলে তিনি স্বাক্ষর দেননি।
বুধবার তার স্বামীর মামলা শুনানি ছিল। কিন্তু সকালে আদালতে প্রবেশ দ্বারে ঢুকতে গেলেই কয়েকজন আইনজীবী আদালতের কাজ বন্ধ রয়েছে বলে সালামকে ধমকিয়ে আদালত ভবন থেকে বের করে দেয়। এ সময় সাথে ছিল তার চার শিশু সন্তান।’
শুধু সালমা নয়, সরাইল রসূলপুরের মুমিনুল হক, কসবা উপজেলা শাহাদৎ মিয়া, আখাউড়া উপজেলা মনোয়ারা বেগম, বাঞ্ছারাপুরের ইলিয়াস মিয়া, নবীরনগর উপজেলা কৃষ্ণনগর গ্রামের ইছা মিয়া সহ আরও বেশ কয়েকজনকে আইনজীবীদের পথ আটকে দেয়ার কারণে আদালত থেকে ফিরে যেতে হয়েছে।
আদালত থেকে ফিরিয়ে দেয়ার কারণ জানতে চাইলে আইনজীবী সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট বশির আহমেদ খান বলেন, ‘আমাদের দাবি অনুযায়ী আদালত বর্জন চলছে। কার্যক্রম যেন না নিতে পারে সেক্ষেত্রে ব্যবস্থা নিচ্ছি। আইনজীবী ছাড়া সরাসরি যেন কোনো পিটিশন না নেয় সেই বিষয়ে আমরা প্রয়োজন ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
এ ব্যাপারে আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. মোস্তফা কামাল বলেন, ‘আদালতে বিচারক, কর্মকর্তা ও কার্মচারীগণ উপস্থিত রয়েছেন। বিচারকার্যের জন্য সবাই প্রস্তুত রয়েছেন। বিচার চেয়ে আদালতের কাছে দারস্থ হওয়া আইনগত অধিকার। তবে বিচারপ্রার্থীদের আদালতে আসতে না দেয়া সম্পূর্ণ বেআইনী।’
সূত্র : নিউজ বাংলা