দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিদের নামে ভুয়া জামিন আদেশ বানানোর সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
সিআইডির সিরিয়াস ক্রাইমের একটি টিম গত সোমবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) মাগুরা থেকে এই জালিয়াত চক্রের সদস্যদের গ্রেফতার করেছে। সিআইডি প্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়া তাদের গ্রেফতারের বিষটি নিশ্চিত করেছেন।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন- জালিয়াত চক্রের সদস্য হাইকোর্ট বিভাগের সাবেক জমাদার মো. দাউদ এলাহী, সাবেক কারারক্ষী শেখ আব্দুল মাজেদ ও আশরাফুজ্জামান ওরফে রনি।
জানা গেছে, ২০১১ সালে মাগুরার আদালতে পাওয়া ১১টি ভুয়া জামিন আদেশের তদন্তে বেরিয়ে আসে এমন চাঞ্চল্যকর জালিয়াত চক্রের সন্ধান। এ ঘটনায় ২০১৫ সালে শাহবাগ থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। দীর্ঘ ৭ বছর থানা পুলিশ ও দুদকের তদন্তের পর মামলাটি সিআইডিতে স্থানান্তরিত করা হয়। অবশেষে সিআইডির হাতে ধরা পড়েন এই চক্রের তিন সদস্য।
সিআইডি জানায়, ২০১১ সালে মাগুরা জজকোর্ট পরিদর্শনে যান সুপ্রিম কোর্টের তৎকালীন বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী (বর্তমানে প্রধান বিচারপতি)। তিনি কিছু মামলার নথি পরীক্ষা করে দেখতে পান ১১টি মামলায় সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের জামিন আদেশ প্রতারণা ও জাল জালিয়াতির মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে।
তিনি বিষয়টি হাইকোর্টের তৎকালীন ডেপুটি রেজিস্ট্রার মো. মাহফুজুল করিম আকন্দকে অনুসন্ধান করার জন্য নির্দেশ দেন। যার প্রেক্ষিতে তদন্তকারী কর্মকর্তা রফিক ও দাউদ এলাহীকে অভিযুক্ত করে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।
পরে হাইকোর্ট বিভাগের তৎকালীন কোর্ট কিপার মো. আব্দুল ওয়ারেছ বাদী হয়ে ২০১৫ সালে শাহবাগ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলাটি দীর্ঘ ৭ বছরেরও বেশি সময় ধরে থানা পুলিশ ও দুদক তদন্ত করে।
পরবর্তীতে পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে মামলাটি সিআইডিতে হস্তান্তরিত হয়। তদন্তের ধারাবাহিকতায় এই জালিয়াত চক্রের তিন সদস্যকে মাগুরা থেকে গ্রেফতার করে সিআইডি।
গ্রেফতারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে সিআইডি জানায়, গ্রেফতার দাউদ এলাহী ঘটনার সময়ে হাইকোর্ট বিভাগের জমাদার হিসেবে কর্মরত থাকাকালে একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক ও জালিয়াত চক্র গড়ে তোলেন।
এই চক্র হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিদের নামে ভুয়া জামিন আদেশ তৈরি করে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মামলার বিশেষ করে সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের অর্থের বিনিময়ে জামিন পাইয়ে দেয়ার কাজ করতেন।
গ্রেফতার শেখ আব্দুল মাজেদ ও আশরাফুজ্জামানসহ পলাতক আসামিরা দীর্ঘদিন ধরে গুরুত্বপূর্ণ ও সাজাপ্রাপ্ত মামলার আসামিদের জামিন আদেশ তৈরি করে প্রতারণা করে আসছিলেন।
এই চক্রের সদস্যদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। পলাতক অন্য আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলেও জানায় সিআইডি।