একটা সময় ছিল যখন দেশের অনেক মানুষ মনেই করতে পারতো না যে একজন নারী বিচারক হতে পারেন। ৪৮ বছর আগে দেশে নারী বিচারক ছিলেন মোটে একজন। সেই দেশের অধস্তন আদালতে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ নারী বিচারক বিচারিক কাজে যুক্ত রয়েছেন। বিচার বিভাগে নিয়োগ পরীক্ষায় মেধা তালিকায় এখন নারীরাই এগিয়ে থাকেন।
আইন মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, বর্তমানে অধস্তন আদালতে বিচারকের সংখ্যা দুই হাজারের বেশি। এর মধ্যে পুরুষ বিচারকের সংখ্যা ১৪শ এর বেশি, আর নারী বিচারকের সংখ্যা ৬০০ অতিক্রম করেছে।
দেশের বিচারাঙ্গনে পুরুষ বিচারকদের যাত্রা ১৯৭২ সালে শুরু হলেও নারীর যাত্রা শুরু হয়েছিল তার তিন বছর পর, ১৯৭৫ সালে। শুরুতেই পুরুষদের চেয়ে আমরা তিন বছর পিছিয়ে আছি। তবে বর্তমানে নারী বিচারকের সংখ্যা অনেক বাড়ছে। এটা কোনো নারী কোটায় নয়। বরং সম্মিলিত মেধাক্রম অনুসারেই নারীরা এগিয়ে যাচ্ছেন। এমনকি মেধাক্রমের প্রথম সারিতেই নারীদের অবস্থান।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অধস্তন আদালতে নারী বিচারকের সংখ্যা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। সেই হিসেবে দেশে নারী বিচারকের এ সংখ্যা পর্যাপ্ত। তবে তাদের প্রত্যাশা এ সংখ্যা আরো বাড়বে। বিচার কাজে নারীরা দক্ষতার সঙ্গে তাঁরা দায়িত্ব পালন করছেন। অধস্তন আদালতে এখন নারী বিচারকের সংখ্যা প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। সংশ্লিষ্টরা আশা করেন এই সংখ্যা ভবিষ্যতে সমান সমান হবে।
তবে উচ্চ আদালতে নারী বিচারক তুলনামূলক কম হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেন তারা। তারা বলেন, উচ্চ ও সর্বোচ্চ আদালতে আরো অনেক বেশি নারী বিচারক আসা উচিত। উচ্চ ও সর্বোচ্চ আদালতে বিচারপতি হওয়ার যোগ্যতা রাখেন, এমন অনেক নারী বিচারক অধস্তন আদালতে কর্মরত আছেন বলেও উল্লেখ করেন।
সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য
সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে নারীর ক্ষমতায়ন প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেছেন, আমাদের নারীরা অনেক এগিয়ে গেছেন। এক সময় নারীরাই বাংলাদেশের বিচার বিভাগে নেতৃত্ব দেবেন। তিনি বলেন, আমারা যখন জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষা নেই—তখন দেখেছি, পুরুষদের চেয়ে আমাদের নারীরা অনেক বেশি পরিশ্রমী।
আরও পড়ুন : এক সময় নারীরাই বাংলাদেশের বিচার বিভাগে নেতৃত্ব দেবেন : প্রধান বিচারপতি
এ বিষয়ে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেন, ‘গত কয়েক বছরে বিচারিক অর্থাৎ অধস্তন আদালতে নারী বিচারকের সংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি বিচারকাজে নারীরা ভালো করছেন। তবে উচ্চ আদালতে আরো নারী বিচারক হওয়া দরকার।’
বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ও আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা বলেন, দেশের উচ্চ আদালতে আরও নারী বিচারক আসা উচিত। নারীরা বিচারক হিসেবে খুব ভালো করছেন। এ জন্য জুডিসিয়ারিতে নারীদের সংখ্যা অনেক বেড়েছে।
আমার ধারণা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নারী বিচারকের সংখ্যা পুরুষের সমান হয়ে যাবে। এক সময় হয়তো সংখ্যার দিক দিয়ে পুরুষদের ছাড়িয়েও যেতে পারে। নারীরা জুডিসিয়ারিতে অনেক ভালো করছে, যোগ করেন বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা
বাংলাদেশের প্রথম নারী বিচারক ও বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা বলেন, বিচারপতি হওয়ার যোগ্যতা রাখেন এমন অনেক নারী বিচারক অধস্তন আদালতে কর্মরত আছেন। আছেন যোগ্য নারী আইনজীবীও।
৪১ বছরের দীর্ঘ বিচারিক জীবন থেকে সম্প্রতি অবসর নেয়া আপিল বিভাগের বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ বলেন, ‘দেশের বিচারাঙ্গনে পুরুষ বিচারকদের যাত্রা ১৯৭২ সালে শুরু হলেও নারীর যাত্রা শুরু হয়েছিল তার তিন বছর পর, ১৯৭৫ সালে। শুরুতেই পুরুষদের চেয়ে আমরা তিন বছর পিছিয়ে আছি। তবে বর্তমানে নারী বিচারকের সংখ্যা অনেক বাড়ছে। এটা কোনো নারী কোটায় নয়। বরং সম্মিলিত মেধাক্রম অনুসারেই নারীরা এগিয়ে যাচ্ছেন। এমনকি মেধাক্রমের প্রথম সারিতেই নারীদের অবস্থান।’