মশা নিয়ন্ত্রণে বিশেষজ্ঞের মতামত শুনবেন হাইকোর্ট
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এক বিমানযাত্রী মশা দ্বারা আক্রান্ত

মশা নিয়ন্ত্রণে বিশেষজ্ঞের মতামত শুনবেন হাইকোর্ট

ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকায় মশা নিয়ন্ত্রণের উপায় জানতে বিশেষজ্ঞের মতামত শুনবেন হাইকোর্ট। এজন্য একজন মশাবিশেষজ্ঞের মতামত জানতে চেয়েছেন উচ্চ আদালত।

এ সংক্রান্ত এক রিট আবেদনের শুনানির সময় আজ সোমবার (১৩ মার্চ) বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

মশাবিশেষজ্ঞ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশারকে আগামী ২ এপ্রিল বেলা সাড়ে ১১টায় আদালতে আসতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশেনের (ডিএনসিসি) সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে ওই দিন একই সময়ে আদালতে উপস্থিত হতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আদালতে রিটকারী আইনজীবী মো. তানভীর আহমেদ নিজেই শুনানি করেন। বেবিচকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী সাইফুর রশীদ। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী রিমি নাহরীন। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।

আদালতে আজ শুনানিতে যা হল

এ বিষয়ে শুনানির শুরুতে আজ আইনজীবী তানভীর আহমেদ বলেন, ‘বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের দাখিল করা জরিপ প্রতিবেদন স্পষ্টভাবে বোঝা যায় না। এ সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পেতে অধ্যাপক কবিরুল বাশারের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনি জানান, বিমানবন্দর এলাকায় মশার উপস্থিতি আছে। বিমানবন্দরের মধ্যে একটি জায়গায় ১০ হাজার লার্ভা আছে, যা উদ্বেগজনক। বিমানবন্দরসংলগ্ন সিটি করপোরেশনের এলাকার মধ্যেও লার্ভা আছে।

আদালত বলেন, কবে জরিপ করা হয়েছে? তখন তানভীর আহমেদ বলেন, গত ডিসেম্বরে। অবস্থার উন্নতি হলো কি না, তা–ও প্রতিবেদনে উল্লেখ নেই।

এসময় বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের পক্ষে আইনজীবী সাইফুর রশীদ বলেন, ‘উন্নতি আছে। সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি।’

আদালত বলেন, ‘তাহলে প্রতিফলন দেখান। পরীক্ষায় আপনি শূন্য পেলেন, তাহলে কীভাবে বুঝব আপনি খুব খেটে পড়াশোনা করেছেন?’

তখন সাইফুর রশীদ বলেন, ‘দুই বছর ধরে জরিপ করা হচ্ছে, সুপারিশ অনুসারে কাজ করা হচ্ছে।’ একপর্যায়ে আদালত বলেন, কোনো ডেভেলপমেন্ট নেই।

শুনানির একপর্যায়ে আইনজীবী তানভীর আহমেদ বলেন, বিশেষজ্ঞ হিসেবে অধ্যাপক কবিরুল বাশারের মতামত আদালত চাইলে শুনতে পারেন।

আদালত বলেন, ‘তাহলে কোথায় কী সমস্যা আছে, ওনাকে শুনি।’

তখন সাইফুর রশীদ বলেন, সামনে দুটি অবকাশ আছে। ঈদের (ঈদুল ফিতর) পরে হলে ভালো হতো।

আদালত বলেন, ‘বৃষ্টির মৌসুম আসছে, তখন সমস্যা বেশি হবে। ঈদ ও রমজানে কি মানুষ বসে থাকে? বৃষ্টি শুরু হলে মশার উপদ্রব বাড়বে।’

পরে আদালত ওই আদেশ দেন।

গণমাধ্যমে রিটকারী আইনজীবী যা বললেন

চলতি মাসের ৬ তারিখ আদালতে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মশার ধরন, উৎপত্তিস্থল ও লার্ভার উপস্থিতি বিষয়ে জরিপ এবং মশার উৎপাত নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ ও কার্যক্রমের অগ্রগতিবিষয়ক প্রতিবেদন তুলে ধরেন বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশেনের আইনজীবীরা।

প্রতিবেদন উপস্থাপনের পর রিট আবেদনকারী আইনজীবীকে তাঁর মতামত দিতে বলে শুনানির জন্য ১৩ মার্চ দিন রাখেন। আজ শুনানির ধার্য দিনে রিট আবেদনকারী তাঁর বক্তব্যসহ প্রস্তাব আদালতে তুলে ধরেন।

রিটকারী আইনজীবী তানভীর আহমেদ বলেন, সিটি করপোরেশন ও বেবিচক এখন পর্যন্ত চারটি সমীক্ষা (সার্ভে) প্রতিবেদন দিয়েছে আদালতে। সর্বশেষ ৬ মার্চ যে প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা যায়, বিমানবন্দর ও আশেপাশের এলাকায় মশার ঘনত্ব উল্লেখ নেই। তার মানে বিগত সময়ের চেয়ে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। তাছাড়া সমীক্ষার সুপারিশ অনুযায়ী মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম কতটুকু বাস্তবায়ন হয়েছে সেটিও প্রতিবেদনে উল্লেখ নেই।

অ্যাডভোকেট তানভীর আহমেদ বলেন, এ কারণে দুটি প্রতিবেদন নিয়েই আপত্তি তুলেছিলাম। তখন আদালত আমার মতামত জানতে চেয়েছিলেন। আমি আবেদন করে সিটি করপোরেশন ও বেবিচকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও জাবির শিক্ষক কবিরুল বাশারের মতামত নিতে আরজি জানিয়েছিলাম। আদালত সে অনুযায়ী আদেশ দিয়েছেন।

মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ

২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ‘শাহজালাল বিমানবন্দর: মশার পরান বধিবে কে?’ শিরোনামে ও ‘ছেঁকে ধরে ঝাঁকে ঝাঁকে মশা’ শিরোনামে একই বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি একটি জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

এরপর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মশার উপদ্রব থেকে সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় নির্দেশনা চেয়ে ২০১৯ সালের ৩ মার্চ হাইকোর্টে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. তানভীর আহমেদ।

রিটের প্রাথমিক শুনানির পর ১২ মার্চ হাইকোর্ট রুল দেন। রুলে শাহজালাল বিমানবন্দরে যাত্রী, দর্শনার্থীসহ অন্যদের মশার উপদ্রব থেকে রক্ষায় কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয়তা ও উদাসীনতা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, জানতে চাওয়া হয়।

পরবর্তী সময়ে গত বছরের নভেম্বরে হাইকোর্ট বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ ও উত্তর সিটি করপোরেশনকে একসঙ্গে বসে বিমানবন্দরে মশা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন। নির্দেশনা বাস্তবায়ন বিষয়ে আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।

এর ধারাবাহিকতায় মশার ধরন, উৎপত্তিস্থল ও লার্ভার উপস্থিতি বিষয়ে জরিপ এবং কার্যক্রম জানিয়ে পৃথক প্রতিবেদন দাখিল করেন বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ ও উত্তর সিটি করপোরেশনের আইনজীবী।