এক নারীকে হত্যায় অভিযুক্ত ব্যক্তিকে জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট। তবে শর্ত হলো নিহতের নাবালক সন্তানের নামে চার লাখ টাকার এফডিআর করতে হবে আসামিকে। বুধবার (১২ এপ্রিল) সেই শর্ত মেনেই এফডিআর হয়েছে।
রাষ্ট্রপক্ষ বলছে, এই জামিনের ফলে মূল মামলার বিচারে কোনো প্রভাব পড়বে না। বরং এতে শিশুর প্রতি মানবিকতার অনন্য নজির স্থাপন করেছেন উচ্চ আদালত।
২০২০ সালের ২৩ মার্চ পরকীয়ার জেরে ওই নারীকে হত্যার অভিযোগে খিলগাঁও এলাকার বাসিন্দা জনৈক রমজান ঢালিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর থেকে আসামি রমজান ঢালি কারাগারে।
একাধিকবার আবেদন করার পর গত ৩০ মার্চ জামিন দেন হাইকোর্ট। তবে জামিনে দেওয়া হয় অদ্ভুত শর্তে। নিহত নারীর ছেলে শিশু আমিনুল ইসলাম নয়নের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে চার লাখ টাকা এফডিআর করার নির্দেশ দেন বিচারক।
সেই মোতাবেক বুধবার সোনালী ব্যাংকের সুপ্রিম কোর্ট শাখায় এফডিআর করতে শিশু নয়নকে হাজির করে পুলিশ। এই এফডিআরে আইনি অভিভাবক করা হয় রাষ্ট্রের এক আইন কর্মকর্তাকে।
রমজানের আইনজীবী মোতাহার হোসেন সাজু বলেন, বাচ্চার (শিশু নয়ন) ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে আদালতের মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি এখানে কাজ করেছে। ১৮ বছর হলে এই টাকাটা নিয়ে যেন সে কিছু একটা করতে পারে।
সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মিজানুর রহমান বলেন, শিশুটি অর্থনৈতিক ও সামাজিক নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে আদালত এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আমি মনে করি সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে একটা অসহায় শিশুর জন্য এটি ভালো পদক্ষেপ।
মিজানুর রহমান আরও বলেন, শিশু নয়নের বাবা আবুল কালামকে এফডিআরে নমিনি এবং আমাকে আইনি অভিভাবক উল্লেখ করা হয়েছে। তাদের গ্রামের বাড়ি মাদারীপুরে।
জীবনে প্রথমবার হাইকোর্টে এসেছে আমিনুল ইসলাম নয়ন। ১৬ বছর বয়সি ছেলেকে দেখতে স্বাভাবিক মনে হলেও বছর দুয়েক আগের এক স্মৃতি তার জীবনের জন্য হয়ে আছে চরম দুর্বিষহ। মা চলে যাবার পর নয়নের আর লেখাপড়া হয়নি। আগামী দুই বছর পর যখন বয়স ১৮ হবে তখন এই এফডিআর ভেঙে ব্যবসা করার কথা জানায় সে।
নয়ন জানায়, আম্মুকে তো আর ফেরত পাব না। যে টাকাটা দিয়েছে সেটা দিয়ে ব্যবসা করব।
রাষ্ট্রপক্ষ বলছে, এ জামিনের ফলে মূল মামলার বিচারে কোনো প্রভাব পড়বে না। আসামি খালাস পেলেও ফেরত চাইতে পারবে না জামিনের জন্য দেয়া ৪ লাখ টাকা।