আইনজীবীদের কল্যাণ তহবিলের স্থায়ী আমানতের (এফডিআর) ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে শরীয়তপুর জেলা আইনজীবী সমিতির বর্তমান সভাপতি আবু সাঈদ ও সাবেক সভাপতি জহিরুল ইসলামের সদস্য পদ স্থগিত করা হয়েছে।
২৪ এপ্রিল সোমবার কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় বর্তমান সভাপতি আবু সাঈদ উপস্থিত হননি। জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি কামরুল হাসানের সভাপতিত্বে সভায় আবু সাঈদ ও জহিরুল ইসলামের সদস্য পদ স্থগিত করা হয়। সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় তাঁরা দুজন শরীয়তপুরের কোনো আদালতে আইন পেশায় নিয়োজিত হতে পারবেন না।
আইনজীবী সমিতির কার্যকরী কমিটির সূত্রে জানা যায়, সমিতির কল্যাণ তহবিলের এফডিআরের ১ কোটি ৩০ লাখ ও এর লভ্যাংশের ৫০ লাখসহ মোট ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। ২০১৯ সাল থেকে ২০২১ সালের মধ্যে এসব টাকা আত্মসাৎ করা হয়। তখন সমিতির সভাপতি আবু সাঈদ ও সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম দায়িত্বে ছিলেন। বিষয়টি সামনে এলে বিভিন্ন ব্যাংকে খোঁজ নেওয়া হয়। কোনো ব্যাংকেই আইনজীবী সমিতির নামে এফডিআরের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি।
কার্যকরী কমিটির সদস্যদের সাথে ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডট কম এর আলাপ হলে তারা জানান, প্রাথমিক পর্যায়ে ওই দুজনের সমিতির সদস্য পদ স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ঘটনাটি তদন্তের জন্য পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে সাধারণ সভায় আলোচনা হবে। সাধারণ সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এ সময়ের মধ্যে তাঁরা শরীয়তপুরের কোনো আদালতে আইন পেশায় নিয়োজিত হতে পারবেন না।
আইনজীবী সমিতি সূত্রে জানা যায়, সমিতিতে ২৫৫ জন নিবন্ধিত আইনজীবী আছেন। তাঁদের ভোটে প্রতিবছর ১৫ সদস্যের কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটির নেতৃত্বে ওকালতনামা, নীল কাগজ বিক্রি, জামিননামা (বেইল বন্ড) বিক্রি, চারতলা ভবনের ৬২টি কক্ষের ভাড়া আদায় করা হয়। সমিতির আয়ের ওই টাকা সমিতির সদস্যদের কল্যাণের জন্য ব্যাংকে গচ্ছিত রাখা হয়। ২০১২ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত সময়ে বিভিন্ন ব্যাংকে ৬৫ লাখ টাকা এফডিআর করা হয়। ২০১৯ সাল পর্যন্ত আরও ৬৫ লাখ টাকা এফডিআর করা হয়। ২০১৯ সাল থেকে ২০২১ সালের মধ্যে এফডিআরের ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা ও এর লভ্যাংশের ৫০ লাখ টাকাসহ মোট ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ ওঠে। এ সময়ের মধ্যে আবু সাঈদ দুই দফা সভাপতি ও দুই দফা সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। আর জহিরুল ইসলাম একবার সভাপতি ও দুবার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এ বছর আবার আবু সাঈদ সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। গত ফেব্রুয়ারিতে নতুন সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন তাজুল ইসলাম। শপথ গ্রহণের পর তিনি সমিতির কল্যাণ তহবিলের কাগজপত্র বুঝে নেওয়ার সময় এফডিআরের খোঁজ নিতে গিয়ে আত্মসাতের তথ্য পান। বিষয়টি আইনজীবীদের সঙ্গে আলোচনা করেন। পরবর্তী সময়ে আইনজীবীদের চাপের মুখে আবু সাঈদ ৪০ লাখ টাকা ফেরত দেন।
পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটিকে আগামী ৮ মের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলে- বজলুর রশীদ আকন্দ, লুৎফর রহমান ঢালী, নজরুল ইসলাম, মৃধা নজরুল ইসলাম, শহিদুল ইসলাম সজীব। ১০ মে আইনজীবী সমিতির পরবর্তী সাধারণ সভা আহ্বান করা হয়েছে।