গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের (গাসিক) মেয়র পদ থেকে জাহাঙ্গীর আলম পদত্যাগ করেছেন। তাই মেয়র পদ থেকে বরখাস্তের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে তার দায়ের করা রিটের কার্যকারিতা হারিয়েছে। এ রিট এখন আদালতে চলতে পারে না।
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদ থেকে জাহাঙ্গীর আলমকে সাময়িক বরখাস্তের বৈধতা নিয়ে জারি করা রুলের শুনানিতে আজ মঙ্গলবার (২ মে) বিচারপতি জাফর আহমেদ ও বিচারপতি মো. বশির উল্লাহ’র হাইকোর্ট বেঞ্চে এ কথা বলেন রাষ্ট্রপক্ষ।
আদালতে জাহাঙ্গীরের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট এম কে রহমান ও ব্যারিস্টার বেলায়েত হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নওরোজ রাসেল চৌধুরী।
শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, গত ২৬ এপ্রিল গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন জাহাঙ্গীর আলম। এখন তিনি আর পদে নেই। রুল যথাযথ ঘোষণা করলেও তিনি আর পদে ফিরতে পারবেন না। সুতরাং এই রিট আর চলে না। রুলটি অকার্যকর হয়ে গেছে।
অন্যদিকে আদালতে জাহাঙ্গীর আলমের আইনজীবী এম কে রহমান বলেন, এই রিটে পদত্যাগ ইস্যু নয়। ইস্যু হচ্ছে তাকে বরখাস্ত করা। আদালতের কাছে ইস্যু হলো সেই বরখাস্তটা আইন সম্মত হয়েছে কি না। পরবর্তী সময়ে কী হয়েছে না হয়েছে সেটা এখানে (এই রিটে) আসবে না। রিটটি অকার্যকরও হবে না।
পরে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদ থেকে জাহাঙ্গীর আলমকে সাময়িক বরখাস্তের বৈধতা প্রশ্নে জারি করা রুলের রায়ের দিন তৃতীয় দফা পিছিয়ে ১৪ মে দিন ধার্য করেন আদালত। মেয়র পদ থেকে পদত্যাগের পর রিটের কার্যকারিতা আছে কি না, এ বিষয়ে শুনানির জন্য উভয়পক্ষকে প্রস্তুতি নিয়ে আসতে বলেছেন আদালত।
দুই দফা পিছিয়ে রায় ঘোষণার দিন ছিল আজ
গত ৪ এপ্রিল রাষ্ট্রপক্ষের সময় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দুই দফা পিছিয়ে জাহাঙ্গীর আলমকে সাময়িক বরখাস্তের সিদ্ধান্তের বৈধতা নিয়ে রুলের রায় ঘোষণার জন্য ২ মে দিন ধার্য করা হয়।
গত ২৮ মার্চ এ রুলের চূড়ান্ত শুনানির পর ৩০ মার্চ রায়ের জন্য রাখেন আদালত। কিন্তু ওইদিন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের পক্ষে শুনানি করতে আবেদন করেন রাষ্ট্রপক্ষ। সে আবেদন গ্রহণ করে রায় ঘোষণা পিছিয়ে মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) দিন রাখেন। এদিনও রাষ্ট্রপক্ষের সময় আবেদনে রায় ঘোষণা পিছিয়ে ২ মে দিন ধার্য করেন আদালত।
গত ১৫ মার্চ গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদ থেকে জাহাঙ্গীর আলমকে সাময়িক বরখাস্তের বৈধতা প্রশ্নে জারি করা রুলের শুনানি শুরু হয়।
এর আগে গত বছরের ২৩ আগস্ট গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদ থেকে জাহাঙ্গীর আলমকে সাময়িক বরখাস্তের সিদ্ধান্ত কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।
এ রুল জারি করেন বিচারপতি জাফর আহমেদ ও বিচারপতি মো. আক্তারুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ। স্থানীয় সরকার সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের দুই সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
গত বছরের ১৪ আগস্ট পদ ফিরে পেতে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া জাহাঙ্গীর আলম। রিটে তাকে সাময়িক বরখাস্তের আইনগত বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা হয়। জাহাঙ্গীর আলমের পক্ষে এ রিট দায়ের করেন ব্যারিস্টার মশিউর রহমান সবুজ।
পেছনের কথা
২০২১ সালের ২৫ নভেম্বর মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের নিয়ে কটাক্ষ করার অভিযোগে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার হওয়া জাহাঙ্গীর আলমকে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদ থেকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
ওইদিন নিজ দপ্তরে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, গাজীপুরের মেয়র পদ থেকে জাহাঙ্গীর আলমকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। সেখানে একজনকে ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে।
মেয়রের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলোকে কেন্দ্র করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করার কথাও জানান স্থানীয় সরকার মন্ত্রী।
মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের নিয়ে কটাক্ষ করার অভিযোগে ২০২১ সালের ২৫ নভেম্বর মেয়র জাহাঙ্গীরকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়।
এর মধ্যে গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সিদ্ধান্ত অনুসারে ভবিষ্যতে সংগঠনের স্বার্থপরিপন্থি ও শৃঙ্খলা ভঙ্গ না করার শর্তে জাহাঙ্গীর আলমের ক্ষমা ঘোষণা করে দলটি। গত ২১ জানুয়ারি সে ক্ষমা ঘোষণার চিঠি পান জাহাঙ্গীর আলম।
প্রসঙ্গত, গত ৩ এপ্রিল গাজীপুর সিটির ভোটের তফসিল ঘোষণা করেন নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মো. জাহাঙ্গীর আলম। এই সিটিতে ভোটগ্রহণ ২৫ মে। নির্বাচনে অংশ নিতে মনোনয়নপত্র উত্তোলন করে তা জমা দেন জাহাঙ্গীর আলম। তবে ঋণ খেলাপির অভিযোগে জাহাঙ্গীরের মনোনয়নপত্র বাতিল করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।