ঢাকা আইনজীবী সমিতির সদস্য অ্যাডভোকেট মো. শাহজালাল কিবরিয়া (৫৫) এবং কুড়িগ্রামের আইনজীবী এনামুল হক চৌধুরী চাঁদ (৭৫) মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
আজ মঙ্গলবার (২ মে) সকাল ৬টা ২০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শাহজালাল কিবরিয়া মারা যান। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, এক কন্যা ও এক পুত্রসহ অসংখ্য গুণগাহী রেখে গেছেন।
আইনজীবী শাহজালাল কিবরিয়া ঢাকা মহানগর পঞ্চম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর ও বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সদস্য ছিলেন।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকা জজ কোর্ট প্রাঙ্গণে মরহুমের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর তার মরদেহ ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার সারুতিয়া গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে দ্বিতীয় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।
আইনজীবী শাহজালাল কিবরিয়ার মৃত্যুতে ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মিজানুর রহমান মামুন, সাধারণ সম্পাদক খন্দকার গোলাম কিবরিয়া জোবায়ের গভীর শোক প্রকাশ করেন। এক শোকবার্তায় তারা মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।
এদিকে সোমবার (১ মে) বেলা ১১টা ২০ মিনিটে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আইনজীবী এনামুল হক চৌধুরী চাঁদ মৃত্যুবরণ করেন। পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এসএম আব্রাহাম লিংকন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এনামুল হক চৌধুরী চাঁদ কুড়িগ্রাম তথা উত্তরাঞ্চলে এক পরিচিত মুখ ও শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তিনি টিআইবি, কুড়িগ্রামের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
বিগত কয়েক মাস ধরে শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছিলেন। পরে ভারত থেকে চিকিৎসা নিয়ে দেশে ফেরেন। রবিবার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার সকালে মারা যান।
এই আইনজীবীর মৃত্যুর খবরে হাসপাতাল এবং তার বাসভবনে গিয়ে শোক জানিয়েছেন জেলার রাজনীতিক, আইনজীবী, সুধী ও সুহৃদগণ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও শোক জানিয়েছেন অনেকে।
পিপি আব্রাহাম লিংকন বলেন, ‘এক কিংবদন্তির বিদায় হলো। আমরা একজন বিচক্ষণ অভিভাবক হারালাম। তিনি শুধু একজন বিজ্ঞ আইনজীবী ছিলেন না, ছিলেন সমাজ সংস্কারক, বিশিষ্ট রাজনীতিক। কুড়িগ্রাম শহরে যে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার দাঁড়িয়ে আছে, সেটি প্রতিষ্ঠার অগ্রণী সৈনিক ছিলেন চাঁদ ভাই। চরাঞ্চলে কৃষি ও যোগাযোগ বিকাশেও তার অবদান রয়েছে। তাকে হারিয়ে আমরা শোকাহত।’
বিশিষ্ট এই আইনজীবীর মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন জেলা ও দায়রা জজ মো.আলমগীর কবীর, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. আলমগীর কবির শিপন, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মো.জাফর আলী, সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমান উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু, জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক সোহেল হোসনাইন কায়কোবাদ, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদ, প্রচ্ছদ কুড়িগ্রামসহ বিাভন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন।
এনামুল হক চৌধুরী চাঁদ ১৯৪৮ সালে কুড়িগ্রাম সদরের হলোখানা ইউনিয়নের ভ্যারভেরি মৌজায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি কুড়িগ্রাম শহরের খলিলগঞ্জ এলাকায় বসবাস করতেন। দীর্ঘ ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে আইন পেশায় নিয়োজিত এই আইনজীবী মৃত্যুকালে তিন ছেলে রেখে গেছেন।
মরহুমের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, সোমবার বিকাল ৫টায় জেলা আইনজীবী সমিতি ভবন চত্বরে আইনজীবীদের পক্ষ থেকে এবং বিকাল সাড়ে ৫টায় শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে মরহুমকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। রাত ৯টায় খলিলগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে জানাজা শেষে কেন্দ্রীয় কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে।