রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) সার্ভার থেকে প্রায় ৩০ হাজার গ্রাহকের গায়েব হয়ে যাওয়া নথির মধ্যে ২৬ হাজার ৭৭৭ নথি উদ্ধার করা হয়েছে বলে উচ্চ আদালতকে অবহিত করা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার (২ মে) বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি মোহাম্মদ শওকত আলী চৌধুরী সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চে রাজউকের পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়।
রাজউকের আইনজীবী ইমাম হাসান আদালতকে জানান, হ্যাকাররা সার্ভার থেকে নথি হ্যাক করেছিল।
এ বিষয়ে অ্যাডভোকেট ইমাম হাসান গণমাধ্যমকে জানান, ২০১৯ সালের মে মাস থেকে টেকনো হ্যাভেন কোম্পানি লিমিটেডকে আমাদের ভূমি সংক্রান্ত নথি অনলাইন সিস্টেম করার জন্যে দায়িত্ব দেয়া হয়। তারা আমাদের সফটওয়্যার দিয়েছে এবং সব কিছু মেইনটেইন করে আসছে।
কিন্তু বাংলাদেশ এবং ইন্দোনেশিয়া থেকে ২ জন হ্যাকার সফটওয়্যার থেকে ৩০ হাজার নথি হ্যাক করে আমাদের সব ডেটা মুছে ফেলে। এটি ডিটেক্ট করার পরেই সব তথ্য আবার রিকভার করা হয়। ভবিষ্যতে যেন এমন না হয় সেকারণে রাজউকের পক্ষ থেকে বুয়েটকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে এই বিষয়ে আরও অনুসন্ধান করা হচ্ছে বলেও জানান রাজউকের আইনজীবী।
এর আগে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) সার্ভার থেকে প্রায় ৩০ হাজার গ্রাহকের নথি গায়েব হয়ে যাওয়ার ঘটনা অনুসন্ধানে ৩ সদস্যের কমিটি গঠন করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
কমিটিতে দুদকের উপপরিচালক সুভাষ চন্দ্র দত্ত, সহকারী পরিচালক মো. আশিকুর রহমান, পরিচালক (সিস্টেম অ্যানালিস্ট) মো. রাজিব হাসানকে রাখা হয়েছে। মো. রাজিব হাসান কমিটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এই কমিটি এরইমধ্যে অনুসন্ধান শুরু করেছে। কমিটি গঠনের কথা জানিয়ে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন হাইকোর্টে দাখিল করা হয়েছে।
গত ২ জানুয়ারি রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) সার্ভার থেকে প্রায় ৩০ হাজার গ্রাহকের নথি গায়েব হয়ে যাওয়ার ঘটনায় রাজউকের ব্যাখ্যা তলব করেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে এই ঘটনা অনুসন্ধানে দুদককে নির্দেশ দেওয়া হয়।
বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান এ বিষয়ে পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক।
পত্রিকায় প্রকাশিত এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) সার্ভার থেকে প্রায় ৩০ হাজার গ্রাহকের নথি গায়েব হয়ে যাওয়ার ঘটনাটি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় থেকে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন অনুবিভাগ-১) মো. অলিউল্লাহ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে রাজউককে একটি কমিটি গঠন করতে বলা হয়েছে। এই কমিটি সাত কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত শেষ করে মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দেবে।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, নথি গায়েবের ঘটনায় সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে কি না, তদন্ত কমিটি তা বের করবে। একই সঙ্গে এ ঘটনায় কারা জড়িত কিংবা কোনো কারিগরি ত্রুটি ছিল কি না, সেটি অনুসন্ধান করবে কমিটি। পাশাপাশি কেউ ষড়যন্ত্র করে এ ঘটনা ঘটিয়েছে কি না, সেটিও দেখা হবে।
রাজউকের সার্ভার থেকে ভবন নির্মাণের অনুমোদন সংক্রান্ত প্রায় ৩০ হাজার গ্রাহকের আবেদনের নথিপত্র গত ৬ ডিসেম্বর গায়েব হয়ে যায়।