স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় দল হিসেবে মানবাধিকার লংঘনের অভিযোগে জামায়াত ইসলামীর বিচারে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধেনের প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দল হিসেবে মানবাধিকার লংঘনের কারণে বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন যথেষ্ট নয়। এটা সংশোধনের প্রক্রিয়া চলছে।
আজ শনিবার (৬ মে) রাজধানীর বিচার প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে সিনিয়র সহকারী জজদের ১৪৮তম রিফ্রেশার কোর্সের উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। বিচার প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আইন সচিব মো. গোলাম সারওয়ার বক্তব্য রাখেন।
আইন সংশোধন ছাড়া বিচার সম্ভব নয়
২০১৪ সালের গত ২৭ মার্চ দল হিসেবে জামায়াতের বিরুদ্ধে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রসিকিউশনের কাছে জমা দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। তখন আইনমন্ত্রী জানিয়েছিলেন আইন সংশোধন ছাড়া বিচার সম্ভব নয়।
এত বছরেও আইন সংশোধন না হওয়ায় জামায়াতের বিচারে সরকারের আন্তরিকতার ঘাটতি আছে কি না, সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, আপনাদের এটা মনে হওয়া তো আমাদের জন্য দুঃখের। তার কারণ হচ্ছে এই সরকারই কিন্তু মানবতা বিরোধী অপরাধীদের বিচার করেছে। তারা কিন্তু জামায়াতের হোতা ছিল। জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা ছিল। সেক্ষেত্রে আপনারা যদি মনে করেন সেই ব্যাপারে আমরা উদ্যোগী নই, সেটা আমাদের জন্য দুঃখজনক।
জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল নিয়ে বিচারাধীন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে চলমান মামলা নিয়ে আরেক প্রশ্নে আইনমন্ত্রী বলেন, ওটা সম্পর্কে কোনো বক্তব্য দেবো না। কারণ আমি বিচারাধীন বিষয়ে কোনো কথা বলি না। তাই বিচারাধীন বিষয় নিয়ে আমি কোনে কথা বলবো না।
জামায়াতের নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট
২০০৮ সালের ৪ নভেম্বর জামায়াতকে সাময়িক নিবন্ধন দেওয়া হয়। পরের বছর বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের তৎকালীন সেক্রেটারি জেনারেল সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী, জাকের পার্টির তৎকালীন মহাসচিব মুন্সি আবদুল লতিফ, সম্মিলিত ইসলামী জোটের প্রেসিডেন্ট মওলানা জিয়াউল হাসানসহ ২৫ জন জামায়াতের নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন।
রিটে জামায়াতের তৎকালীন আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, নির্বাচন কমিশনসহ চারজনকে বিবাদী করা হয়। তারা জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের আরজি জানান।
এ রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক (পরে প্রধান বিচারপতি) ও বিচারপতি মো. আবদুল হাইয়ের হাইকোর্ট বেঞ্চ ২০০৯ সালের ২৭ জানুয়ারি রুল জারি করেন।
রুলে বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীর নিবন্ধন কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত এবং গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৯০বি (১) (বি) (২) ও ৯০ (সি) অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চাওয়া হয়। ছয় সপ্তাহের মধ্যে বিবাদীদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
জামায়াতকে দেওয়া নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নিবন্ধন ২০১৩ সালের ১ আগস্ট সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে অবৈধ বলে রায় দেন বিচারপতি এম মোয়াজ্জাম হোসেন, বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি কাজী রেজা-উল-হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বৃহত্তর (লার্জার) বেঞ্চ।
সেসময় সংক্ষিপ্ত রায়ে আদালত বলেন, এ নিবন্ধন দেওয়া আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত। একইসঙ্গে আদালত জামায়াতকে আপিল করারও অনুমোদন দিয়ে দেন।
এ রায়ের স্থগিতাদেশ চেয়ে জামায়াতের করা আবেদন একই বছরের ৫ আগস্ট খারিজ করে দেন আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী।
পরে একই বছরের ২ নভেম্বর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হলে জামায়াত ইসলামী আপিল করে। বর্তমানে আপিলটি বিচারাধীন।