যশোরের চৌগাছার চাঞ্চল্যকর শিশু মারুফ হোসেন হত্যা মামলায় বিচারিক আদালতে (অধস্তন আদালত) খালাস পাওয়া ১০ আসামির মধ্যে চারজনকে মৃত্যুদণ্ড, একজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন হাইকোর্ট।
অধস্তন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে দায়ের করা আপিল আংশিক মঞ্জুর করে বিচারপতি সহিদুল করিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গত বুধবার (৩ মে) এ রায় দিয়েছেন।
নিহত মারুফ হোসেন উপজেলার জগদীশপুর ইউনিয়নের স্বর্পরাজপুর গ্রামের মালয়েশিয়া প্রবাসী মহিদুল ইসলাম তোতার ছেলে ও স্বর্পরাজপুর দাখিল মাদরাসার সপ্তম শ্রেণির ছাত্র ছিলো।
আদালতে আপিলকারী পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী এম এ মুনতাকিম ও চৌধুরী সামসুল আরেফিন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বশির আহমেদ।
আপিলকারীর আইনজীবী জানান, যে চার আসামিকে হাইকোর্ট মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন তাঁরা হলেন মো. সুলাইমান মণ্ডল, আবুল বাশার, মো. বাবু ও আজাহারুল ইসলাম ওরফে বুড়ো। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে মো. হজরত আলি মণ্ডলকে।
এই ৫ জনসহ ১০ আসামির সবাইকে খালাস দিয়েছিলেন বিচারিক আদালত। খালাস পাওয়া অপর পাঁচজন হলেন মো. বিল্লাল হোসেন, মো. টুটুল মণ্ডল, শফিকুল ইসলাম, খলিল মণ্ডল ও মো. ইকরামুল হোসেন। তাঁদের খালাসের আদেশ বহাল রাখা হয়েছে বলে এই আইনজীবী জানান।
রায়ের পর আইনজীবী চৌধুরী সামসুল আরেফিন বলেন, মারুফকে কারা অপহরণ করে হত্যা করেন, তা আসামি আজাহারুল ইসলামের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এসেছে। এই জবানবন্দি সাক্ষী দিয়ে সমর্থিত। অথচ বিচারিক আদালত তা বিবেচনায় না নিয়ে নৃশংস ওই হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের বেকসুর খালাস দিয়েছেন।
তিনি বলেন, স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি, চাক্ষুষ সাক্ষীর সাক্ষ্য ও পারিপার্শ্বিকতা বিবেচনায় নিয়ে হাইকোর্ট চারজনকে মৃত্যুদণ্ড ও বয়স বিবেচনায় একজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন।
উচ্চ আদালতের রায়ের পর গণমাধ্যমের কাছে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন মা আবেরুন নেছা। তিনি বলেন, ‘সম্পত্তি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে সৎভাতিজা আমার ছোট ছেলেকে (১৩) নিয়ে যায়। সাত দিন পর বাগানে তার শরীরের টুকরা টুকরা অংশ পাই। খুলনা থেকে সব আসামি বেকসুর খালাস পায়। স্বামী দেশের বাইরে থাকেন। তাই ছেলে হত্যার বিচার পেতে হাইকোর্টে আপিল করেছিলাম। হাইকোর্ট চারজনের মৃত্যুদণ্ড ও একজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন। রায়ে সন্তুষ্ট, কার্যকর হলে আমি খুশি।’
নথিপত্র থেকে জানা যায়, ২০১৬ সালের ১০ আগস্ট সকালে চৌগাছা উপজেলার স্বর্পরাজপুর গ্রামের মহিদুল ইসলামের ছেলে মো. মারুফ হোসেন বাড়ি থেকে বাজারে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হয়। এরপর খোঁজ করেও তার কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।
পরে ১৬ আগস্ট চৌগাছা থানার কান্দি মৌজায় অবস্থিত এক ব্যক্তির বাগানে মাথাবিহীন হাত–পা কাটা লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় পরদিন হজরত আলিসহ সাতজনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে চৌগাছা থানায় হত্যা মামলাটি করেন মোছা. আবেরুন নেছা।
ছেলে হত্যা মামলায় ২০১৯ সালের ২৬ মে খুলনার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল রায় দেন। রায়ে ১০ আসামিকে খালাস দেওয়া হয়। এ রায়ের বিরুদ্ধে মামলার বাদী আবেরুন নেছা ওই বছরই হাইকোর্টে আপিল করেন।