রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুমাইয়া আজিজের বাসায় খাবার সরবরাহ করতে গিয়ে ফুডপান্ডার এক ডেলিভারি ম্যানের বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী আইনজীবী কর্তৃপক্ষের কাছে লিগ্যাল নোটিশ দিয়ে জবাব চান।
তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জবাব না পাওয়ায় ফুডপান্ডার বিরুদ্ধে মামলা করতে যাচ্ছেন তিনি। ফৌজদারি অপরাধের জন্য মামলা ও হাইকোর্টে ক্ষতিপূরণ চেয়ে রিট করার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
আজ বুধবার (১০ মে) সুপ্রিম কোর্টে এ সংক্রান্ত সার্বিক বিষয় নিয়ে গণমাধ্যমে কথা বলেন ব্যারিস্টার সুমাইয়া আজিজ। তিনি বলেন, ফুডপান্ডা রাজধানী জুড়ে খাবার ডেলিভারি সার্ভিস হিসেবে কাজ করছে। তাদের একটি লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছিলাম। গ্রাহক নিরাপত্তা বিষয়ক কিছু তথ্য চেয়ে। আজ পর্যন্ত তারা কোনো জবাব দেয়নি।
ব্যারিস্টার সুমাইয়া বলেন, ফুডপান্ডা কীভাবে ডেলিভারি ম্যান নিয়োগ দিয়ে থাকে, তাদের অতীতের তথ্য কীভাবে যাচাই করছে সে বিষয়ে কোনো তথ্য গ্রাহকদের কাছে নেই। এছাড়াও রাইডার বা ফুড ডেলিভ্যারি ম্যানদের মাধ্যমে কোনো অপরাধ হলে গ্রাহক হিসেবে ফোনে কখনো ফুডপান্ডাকে পাওয়া যাবে না। শুধু তাদের একটা চ্যাট বক্স আছে সেখানে আপনি লিখতে পারবেন। তারা মন চাইলে জবাব দেবে। রাইডার বা ডেলিভারি ম্যান যদি কোনো অপরাধ করেন সেই মুহূর্তে ইমারজেন্সি সার্ভিস হিসেবে ফুডপান্ডার কোনো সেবা নেই।
লিগ্যাল নোটিশ পাঠানোর কারণ প্রসঙ্গে এ আইনজীবী বলেন, গত ৯ এপ্রিল ফুডপান্ডার একজন রাইডার ফুড ডেলিভারি করার সময় বাড়ির ভেতর থেকে কিছু টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়। তিনি আরও কিছু নিয়ে গেছেন কিনা তাও জানতে পারিনি। সঙ্গে সঙ্গে আমরা সেই রাইডারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলাম, তখন রাইডার আমাদের নম্বরটা ব্লক করে দেন। বিষয়টি তখনই ফুডপান্ডাকে জানিয়ে তাদের প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলতে চাই। তারপর থেকে ফুডপান্ডা আজ পর্যন্ত কোনো যোগাযোগ করেনি।
তিনি বলেন, ঢাকা শহরে এক কোটির বেশির মানুষ বসবাস করছেন। তারা এই মানুষ নিয়ে মনোপলি বিজনেস করছে। তাদের গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৪০ লাখ। গত ৯ এপ্রিল ছিল রমজানের সময়। প্রচুর পরিমাণে ওয়ার্কিং ফ্যামিলি আছে। যারা হয়তো ছোট বাচ্চা রেখে যাচ্ছে। হাউজ ওয়াইফ রেখে যাচ্ছে। বৃদ্ধ বাবা মা রেখে যাচ্ছেন। যারা হয়তো ডিজিটালি পেমেন্ট করে দিচ্ছেন। খাবারটা হয়তো ডেলিভারি ম্যান দিয়ে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে গ্রাহকদের নিরাপত্তা কী। এটার কোনো জবাব বা সঠিক তথ্য ফুডপান্ডা আমাদের দিতে পারেনি।
ফুডপান্ডার ডেলিভারি ম্যানের চুরির ঘটনায় ১৫ এপ্রিল লিগ্যাল নোটিশের মাধ্যমে কর্তৃপক্ষকে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেন ব্যারিস্টার সুমাইয়া আজিজ। পরদিন ১৬ এপ্রিল তারা চিঠি দিয়ে ১৪ দিনের সময় চান। লিগ্যাল নোটিশে ৩টা শর্ত ছিল।
এক. যার বাড়ি থেকে রাইডার চুরি করে পালিয়েছে তাকে যেন অবশ্যই একটা অ্যাপোলজি লেটার দেওয়া হয়।
দুই. ঈদের পর যেন একটা কাস্টমার কেয়ার খোলা হয় বা একটা নম্বর দেওয়া হয়। সেখানে মানুষ তাদের অভিযোগগুলো জানাতে পারে।
তিন. হয়রানির জন্য সিকিউরিটি হিসেবে ১০ লাখ টাকা পেনাল্টি চাওয়া হয়।
ফুডপান্ডা কাস্টমারদের নিরাপত্তা নিয়ে ন্যূনতম চিন্তিত না উল্লেখ করে এই আইনজীবী আরও বলেন, যার বাড়ি থেকে রাইডার চুরি করে পালিয়েছে তাকে যেন অবশ্যই একটা অ্যাপোলজি লেটার দেওয়া হয়। এটা যেকোনো কোম্পানির দায়িত্ব। কিন্তু তারা সেটা করেননি। ফুডপান্ডা নিজেও অপরাধী হয়ে গেল এ কাজের মাধ্যমে।
তিনি বলেন, কাস্টমার কেয়ার খোলার বিষয়টি বলেছিলাম যেন মানুষ তাদের অভিযোগগুলো জানাতে পারে। কিন্তু এটাও তারা করেননি।
ব্যারিস্টার সুমাইয়া বলেন, তারা শুধু একজন আইনজীবীর মাধ্যমে জানিয়েছিলেন ১৪ দিন সময় দরকার। এ সময়ের পর তাদের আবার একটি রিমাইন্ডার লেটার দেওয়া হয়েছিল। ১৪ দিন সময় অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। তারা কোন জবাব দেননি। আমরা এখন ফুডপান্ডার বিরুদ্ধে মামলায় যাব। তাদের এমডি থেকে শুরু করে কেউ এই চুরির দায় এড়াতে পারেন না।