সারা দেশে তাপ প্রবাহে জনজীবন বিপর্যস্ত। এতে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। এরই মধ্যে হিট স্ট্রোকে ঢাকা জজ কোর্টের এক আইনজীবী মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। প্রয়াত আইনজীবীর নাম শফিউল আলম (আলা উদ্দিন) তিনি ঢাকা আইনজীবী সমিতির সদস্য।
জানা গেছে, আজ বৃহস্পতিবার (১১ মে) দুপুর সাড়ে ১২টায় মামালা শুনানি শেষে আদালত থেকে চেম্বারে ফেরার পথে অসুস্থ হয়ে পড়েন অ্যাডভোকেট শফিউল আলম। ঢাকা বারের কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান প্রচন্ড গরমে স্ট্রোক হয়েছে।
তবে অবস্থার অবনতি হলে সমিতির চিকিৎসকের পরামর্শে আইনজীবী সহকর্মীরা তাঁকে পার্শ্ববর্তী ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানকার কর্মরত ডাক্তার জানান, তিনি আর নেই।
হাসপাতালে নেয়ার আগের ঘটনায় প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা
অসুস্থ অবস্থায় শফিউল আলমকে হাসপাতালে নেয়ার আগের ঘটনায় প্রত্যক্ষদর্শী অ্যাডভোকেট মো: ওসমান গনি জানান, শুনানি শেষ করে মেট্রো বারের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলাম হঠাৎ এক আইনজীবী মাথা ঘুরে পড়ে যাচ্ছিলেন। তখন তাঁকে আমার সাথে আরেক আইনজীবী ধরে আছেন, আমি সাথে নিয়ে দাড়িয়ে থেকে মুখে মাথায় হালকা পানি দিয়ে মুখে হালকা চিনি দিয়ে অনেক কষ্টে রিক্সায় উঠালাম।
ঢাকা বারের হসপিটালে আনলাম ডাক্তারকে ডাকলাম। ডাক্তার দেখে বললেন, হিট স্ট্রোক করেছেন। তখন আইনজীবী হালকা কথা বললেন, মনে হলো স্বাভাবিক হচ্ছেন।
উনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, উনার ফাইল গাউন কোট কোথায়? আমি বললাম, সব আছে আপনি চিন্তা করবেন না। উনি বললেন, আমি জামিন করিয়েছি বেইল বন্ড জমা দেওয়া হয়নি। আমি বললাম, সমস্যা নাই দিতে পারবেন। আমি আলহামদুলিল্লাহ বললাম, ভাবলাম সুস্থ হয়েছে।
ডাক্তার বললেন, স্যালাইন খাওয়ান। গরমে এমন হয়েছে, আর আপনারা যে পোশাক পরেন! চিকিৎসকের পরামর্শে আমি স্যালাইন আনতে দিলাম এক ভাইকে। তখন উনি (প্রয়াত আইনজীবী) বললেন, ওয়াশরুমে যাবেন। ডাক্তার বললেন, ওয়াশরুমে নিয়ে যান।
ওয়াশরুমের কাজ শেষে উনার আর কোনো কথা নাই, আমি দৌড়ে ডাক্তারের কাছে গেলাম। ডাক্তার ডেকে আনার পর তিনি দেখে বললেন, উনার অবস্থা খারাপ। আপনারা তাড়াতাড়ি ন্যাশনালে (হাসপাতাল) নিন। আমি কোনো রকম রিক্সায় করে ন্যাশনালে নিলাম। কর্মরত ডাক্তার দেখে বললেন, উনি আর নেই। আমার শরীরটা কিছুক্ষণের জন্য হিম হয়ে গেলো।
আইনজীবীদের পোশাক হিট স্ট্রোকের অন্যতম কারণ!
হিট স্ট্রোকে সহকর্মীর অকাল মৃত্যুতে ঢাকার আদালত অঙ্গণে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। আইনজীবীরা মনে করেন এই মৃত্যুর অন্যতম কারণ ড্রেস কোড।
আইনজীবীদের বক্তব্য, আদালতে বিজ্ঞ বিচারক এবং বিজ্ঞ আইনজীবীগণের সাদা শার্ট/পোশাক ও ব্যান্ড পরিধান করা যথেষ্ট। ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস গরমে কীভাবে সাদা শার্ট/সাদা পোশাক, কোট, গাউন পরিধান করে সারাদিন বিচার কাজ পরিচালনা বা বিচার কার্যে অংশগ্রহণ করা সম্ভব? এটা একটা অমানুষিক ড্রেস।
বিজ্ঞ বিচারক যেমন এই গরমে সারাদিন বসে থেকে কাজ করতে হয়, তেমনি আইনজীবীদেরকে এই কোর্টে সেই কোর্টে দৌড়াতে হয়। সারাদেশের অধিকাংশ এজলাসে এসি নেই। ফলে এই ভয়ংকর গরমে গুমোট পরিবেশে বিচার কাজ পরিচালনা করতে হচ্ছে বলে জানা তাঁরা।
আইনজীবীরা বলেন, আজকে ঢাকা বারের একজন বিজ্ঞ আইনজীবী হিট স্ট্রোকে মৃত্যুবরণ করেছেন। ড্রেসের কারণে এটা হয়তো হয়নি। কিন্তু ড্রেস হয়তো অন্যতম কারণ ছিল। আমাদের বর্তমান ড্রেস শুধুমাত্র শীতকালের জন্য ৩/৪ মাসের জন্য প্রযোজ্য হতে পারে। কিন্তু বছরের অন্যান্য সময় তীব্র গরমে এই ড্রেস কোড পালন তীব্র কষ্টের, অস্বস্তিকর।
করোনাকালীন সময়ে ড্রেস কোড শিথিল করা হয়েছিল। তীব্র দাবদাহে অধস্তন আদালতের ড্রেস কোড শিথিলের বিষয়টি নিশ্চয়ই আমাদের সদাশয় কর্তৃপক্ষ বিনীত বিবেচনা করবেন বলে আশা তাঁদের।