মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী : তিন লক্ষ ইয়াবা টেবলেট পাচারের মামলায় এক রোহিঙ্গাসহ ২ আসামীকে যাবজ্জীবন (৩০ বছর) কারাদন্ড প্রদান করা হয়েছে। একইসঙ্গে দণ্ডিত দুই আসামিকে ৪ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অর্থদন্ড অনাদায়ে উভয় দন্ডিতকে এক বছর করে বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করা হয়েছে।
কক্সবাজারের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল বুধবার (১৭ মে) এ রায় ঘোষণা করেন।
যাবজ্জীবন দন্ডিত আসামী কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মোঃ ইলিয়াছ ও নুর বাহারের পুত্র শরনার্থী মোঃ শফিক এবং অপর দন্ডিত আসামী টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্ষ্যং ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের তুলাতলী বালুখালী এলাকার আবদুল কাশেম ও নুর জাহানের পুত্র আবদুল করিম প্রকাশ করিম উল্লাহ। রায় ঘোষণার সময় দন্ডিত আসামীদ্বয় আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
রাষ্ট্রপক্ষে একই আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম ফরিদ এবং আসামীদের পক্ষে অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম-৪, অ্যাডভোকেট অনিল কান্তি বড়ুয়া ও অ্যাডভোকেট আবুল কাসেম বাবু মামলাটি পরিচালনা করেন।
একই কার্যালয়ের জেলা নাজির বেদারুল আলম ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমকে এসব তথ্য জানিয়েছেন।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ
২০২০ সালের ১০ জুলাই ভোর ৬ টার দিকে র্যাব-১৫ এর হোয়াইক্ষ্যং ক্যাম্প এর একটি টিম টেকনাফের হোয়াইক্ষ্যং ইউনিয়নের তুলাতলী বালুখালী এলাকায় এক অভিযান চালিয়ে মোঃ শফিক ও আবদুল করিম প্রকাশ করিম উল্লাহ কে আটক করে। পরে তাদের কাছ থেকে ৩ লক্ষ পিচ ইয়াবা টেবলেট উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনায় র্যাব-১৫ এর নায়েব সুবেদার মোঃ জাকির হোসেন বাদী হয়ে টেকনাফ থানায় ২০১৮ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে তিনজনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেন। যার টেকনাফ থানা মামলা নম্বর : ৫৬/২০২০ ইংরেজি, জিআর মামলা নম্বর : ৫৯৩/২০২০ ইংরেজি (টেকনাফ) এবং এসটি মামলা নম্বর : ১৪০২/২০২১ ইংরেজি।
বিচার ও রায়
মামলাটি বিচারের জন্য ২০২২ সালের ২৪ জানুয়ারী কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে চার্জ (অভিযোগ) গঠন করা। মামলায় ৭ সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ, সাক্ষীদের আসামীদের পক্ষে জেরা, রাসায়নিক পরীক্ষার রিপোর্ট যাচাই, আসামীদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ, যুক্তিতর্ক সহ বিচারের সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল বুধবার মামলাটির রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন।
রায় ঘোষণার দিনে আসামী মোঃ শফিক ও আবদুল করিম প্রকাশ করিম উল্লাহ কে ২০১৮ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ৩৬(১) এর ১০(গ) ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে কক্সবাজারের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল তাদেরকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রদান করেন।
যাবজ্জীবন দন্ডিত আসামী রোহিঙ্গা মোঃ শফিককে একইসাথে ৩ লক্ষ টাকা অর্থদন্ড এবং অপর দন্ডিত আসামী আবদুল করিম প্রকাশ করিম উল্লাহ কে এক লক্ষ টাকা অর্থদন্ড প্রদান করা হয়েছে। অর্থদন্ড অনাদায়ে উভয় দন্ডিতকে এক বছর করে বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করা হয়েছে।
রায়ে মামলার পলাতক আসামী টেকনাফের হোয়াইক্ষ্যং ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের কোনাপাড়ার মৃত লাল মিয়া প্রকাশ লালু চৌধুরীর পুত্র মোঃ ফারুক প্রকাশ লাব্বাইয়ার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ আদালতে প্রমাণিত না হওয়ায় তাকে বেকসুর খালাস প্রদান করা হয়।
মামলায় যাবজ্জীবন দন্ডিত আসামী রোহিঙ্গা মোঃ শফিক সাজা ভোগের পর তাকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য রায়ে কক্সবাজারের জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।