রাষ্ট্রপতি নির্বাচন প্রক্রিয়ার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন

রাষ্ট্রপতি নিয়োগের রিট খারিজ, আইনজীবীকে লাখ টাকা জরিমানা

মো. সাহাবুদ্দিনকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত ঘোষণা করে ইসির গেজেটের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিট খারিজের আদেশ বহাল রেখেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। এই খারিজ আদেশের ফলে হাইকোর্টের দেয়া আগের আদেশেই বহাল থাকলো।

আজ বৃহস্পতিবার (১৮ মে) সকালে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে ৮ বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ এই আদেশ দেন। বেঞ্চের অন্য ৭ জন হলেন- বিচারপতি মো. নুরুজ্জামান, বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, বিচারপতি বোরহান উদ্দিন, বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম, বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম, বিচারপতি আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন।

সেই সাথে রিটকারী আইনজীবীকে এক লাখ টাকা জরিমানা করেছেন আদালত। অযৌক্তিক রিট করে আদালতের সময় নষ্ট করায় আইনজীবী এম এ আজিজ খানকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন রিটকারি আইনজীবী এম এ আজিজ খান। আর রাষ্ট্র পক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন।

আপিল বিভাগের এ আদেশের পর অ্যাডভোকেট এম এ আজিজ খান বলেন, আদালতের আজকের আদেশে আমি অসন্তুষ্ট। তবে সর্বোচ্চ আদালতের রায় তো মানতেই হবে। আদালত যে জরিমানা করেছেন, সেই টাকাও পরিশোধ করব।

তবে, আপিল বিভাগের এই আদেশের বিরুদ্ধে রিভিউ করবেন কি-না, ভেবে চিন্তে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানান এ আইনজীবী।

এর আগে মো. সাহাবুদ্দিনকে রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) জারি করা প্রজ্ঞাপনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে প্রথম একটি রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এম এ আজিজ খান।

রিট দায়ের করার কারণ প্রসঙ্গে মার্চে আইনজীবী এম এ আজিজ খান বলেছিলেন, রাষ্ট্রপতি বাছাই প্রক্রিয়া সঠিকভাবে হয়নি। যাচাই-বাছাই ঠিকমতো হলে মো. সাহাবুদ্দিনকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করা হতো না। কারণ মো. সাহাবুদ্দিন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক কমিশনার ছিলেন। দুদক আইন ২০০৪ এর ৯ ধারা অনুসারে দুদকের সাবেক কমিশনার লাভজনক কোনো পদে অধিষ্ঠিত হতে পারেন না। এ বিষয়ে যাচাই-বাছাই করা হয়নি।

তিনি বলেছিলেন, এছাড়া প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, মো. সাহাবুদ্দিন রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছেন। তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। এ বক্তব্য সঠিক নয়। এ ক্ষেত্রে নির্বাচন আর নিয়োগের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। এ কারণে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন প্রক্রিয়ার বৈধতা চ্যালেঞ্জ ও গেজেটের কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে রিট করেছি।

এই রিটটি বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানির জন্য এলে বিচারপতি আহমেদ সোহেল বিষয়টি শুনাতে বিব্রত বোধ করে বিষয়টি প্রধান বিচারপতি বরাবর পাঠিয়ে দেয়ার আদেশ দেন।

পরবর্তীতে রিটটি বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানির জন্য নির্ধারণ করে দেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।

অন্যদিকে, রাষ্ট্রপতি পদে মো. সাহাবুদ্দিনকে নির্বাচিত ঘোষণা করে জারি করা প্রজ্ঞাপন চ্যালেঞ্জ করে আরেকটি রিট করেন আবদুল মোমেন চৌধুরী, কে এম জাবিরসহ সুপ্রিম কোর্টের ছয় আইনজীবী।

গত ১৫ মার্চ বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই দুটি রিট সরাসরি খারিজ (সামারিলি রিজেক্ট) করে দেন।

আদেশের অভিমতে হাইকোর্ট বলেন, ‘রাষ্ট্রের প্রধান হিসেবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ‘দ্য অফিস অব প্রফিট’ ধারণ করেন, কিন্তু এটি প্রজাতন্ত্রের কর্মে একটি লাভজনক (অফিস অব প্রফিট) পদ নয়। রাষ্ট্রপতির পদ গ্রহণের পদ্ধতি প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে অন্যদের নিয়োগের মতো নয়। তদুপরি প্রজাতন্ত্রের অন্যান্য কর্মে নিয়োজিত কর্মচারীদের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণের যেসব বিধান ও নিয়ম রয়েছে, সেগুলো রাষ্ট্রপতি ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।’

উল্লেখ্য, দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে গত ২৪ এপ্রিল শপথ নেন মো. সাহাবুদ্দিন। এইদিন বঙ্গভবনের দরবার হলে তাকে শপথ বাক্য পাঠ করান জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।