ভারতের নতুন সংসদ ভবন উদ্বোধন করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তবে, নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বয়কট করেছেন বিরোধীরা। দেড় হাজার কোটি টাকার এই নতুন সংসদ ভবনকে ভারতের প্রতীক হিসাবে উল্লেখ করেছেন মোদি।
শুধু আয়তনের দিক থেকে নয়, স্থাপত্য এবং কারুকার্যের দিক থেকেও নজরকাড়া এই নতুন সংসদ ভবন। সংসদ ভবনের বিভিন্ন সামগ্রী নিয়ে আসা হয়েছে দেশটির এক-একটি বিশেষ স্থান থেকে। কার্পেট এসেছে উত্তরপ্রদেশের বিখ্যাত মির্জাপুর থেকে। মেঝে করার বাঁশ আনা হয়েছে ত্রিপুরা থেকে। পাথর নিয়ে আসা হয়েছে রাজস্থান থেকে।
রোববার, পূজা ও হোম-যজ্ঞের মাধ্যমে নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তবে উদ্বোধনের পরও দেশটিতে এ নিয়ে বিতর্ক চলছে। নতুন পার্লামেন্ট ভবনকে কফিনের সঙ্গে তুলনা করেছেন বিরোধী দল আরজেডি।
অন্যদিকে অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতিকে আমন্ত্রণ না জানানোর প্রতিবাদে বয়কটের ডাক দিয়েছে কংগ্রেস, বাম, তৃণমূল কংগ্রেস, আম আদমি পার্টিসহ ১৯ বিরোধী দল। গত ২৪ মে সম্মিলিতভাবে তারা এই বয়কটের ডাক দেয়। তবে লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ছিলেন।
করোনা মহামারি ও বেহাল অর্থনীতির মধ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোট ২৪ হাজার কোটি রুপির ‘সেন্ট্রাল ভিস্তা’ প্রকল্পের কাজ শুরু করেছিলেন। নতুন সংসদ ভবন সেই প্রকল্পেরই এক অংশ। সে সময় এ প্রকল্পের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে কথা ওঠে। জনস্বার্থের মামলাও হয়।
তবে সব বাধা ডিঙিয়ে, সব আপত্তি অগ্রাহ্য করে গড়ে তোলা হয় নতুন সংসদ ভবন। নতুন সংসদ ভবনে চেয়ার, টেবিল থেকে যেসব আসবাব রয়েছে তার পুরোটাই সেগুন কাঠের। আনা হয়েছে মহারাষ্ট্রের নাগপুর থেকে। গোটা ভবনে লাল-সাদা পাথরের যে কারুকার্য রয়েছে সেই বেলেপাথর আনা হয়েছে রাজস্থানের সারমাথুরা এলাকা থেকে।
ইতিহাস ঘাঁটলে জানা যায়, দিল্লির লালকেল্লা এবং হুমায়ুনের সমাধিতে যে বেলেপাথর ব্যবহার করা হয়েছে সেটিও রাজস্থানের সারমাথুরার। আবার সংসদ ভবনে কারুকাজে ব্যবহৃত সবুজ পাথর এসেছে রাজস্থানের উদয়পুর থেকে আর লাল গ্রানাইট এসেছে আজমিরের লাখা থেকে।
বর্তমান পার্লমেন্ট ভবনের পাশেই নতুন সংসদ ভবন তৈরি হয়েছে। নতুন এ ভবনের লোকসভায় ৮৮৮ জন এবং রাজ্যসভায় ৩০০ জন সংসদ সদস্য বসতে পারবেন। ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর নতুন সংসদ ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
৬৪ হাজার ৫০০ বর্গমিটার এলাকাজুড়ে তৈরি হওয়া ভারতের নতুন সংসদ ভবনটি চারটি তল বিশিষ্ট। নতুন এই পার্লমেন্ট ভবন নির্মাণে খরচ হয়েছে ১২৫০ কোটি রুপি। এটি নির্মাণে ব্যবহৃত হয়েছে ২৬ হাজার ৪৫ মেট্রিকটন স্টিল, ৬৩ হাজার ৮০৭ মেট্রিকটন সিমেন্ট।
ভারতের গণতান্ত্রিক ঐতিহ্যকে তুলে ধরার জন্য নতুন এই ভবনে এই রাজকীয় কনস্টিটিউশন হল থাকছে৷ এ ছাড়াও সংসদের সদস্যদের জন্য লাউন্জ, লাইব্রেরি, বিভিন্ন কমিটির ঘর, খাওয়া দাওয়ার জায়গা এবং সুবিস্তৃত পার্কিং স্পেস রয়েছে৷
সংসদ ভবনের অন্দরসজ্জায় ভারতের তিনটি জাতীয় প্রতীক পদ্ম, ময়ূর এবং বট গাছকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দাবি করেন, নতুন এই সংসদ ভবন প্রত্যেক ভারতীয়কে গর্বিত করবে। নতুন সংসদ ভবন ভারতের প্রতীক হয়ে উঠবে।