ধর্ষণ মামলায় অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ডিএনএ রিপোর্ট দেয় সিআইডির ফরেনসিক ডিপার্টমেন্ট। কিন্তু সেই রিপোর্ট আমলে না নিয়ে সাক্ষীদের সাক্ষ্য আমলে না নিয়ে আসামিকে খালাস দেয় কক্সবাজারের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল। সেই খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন ভিকটিম। এখন ট্রাইব্যুনালের খালাসের রায় বিচার বিশ্লেষণের জন্য মামলার নথি তলবের আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
ধর্ষণের অভিযোগে এমরানুল হকের বিরুদ্ধে মামলা করেন এক নারী। ওই মামলায় অভিযোগ করা হয় যে, ২০১৮ সালের ২০ সেপ্টেম্বর স্বামীর অনুপস্থিতিতে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে জিম্মি করে অভিযুক্ত ব্যক্তি ওই নারীকে ধর্ষণ করেন। এই ঘটনায় মামলা করতে গেলে কক্সবাজারের রামু থানা মামলা নেয়নি। পরে ধর্ষণের অভিযোগে কক্সবাজার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এ মামলা করেন তিনি। এই মামলায় বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে ট্রাইব্যুনাল। মামলা বিচারাধীন থাকাবস্থায় ওই নারী এক সন্তানের জন্ম দেন।
এরপর সন্তানের পিতৃত্ব নির্ধারণের জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন তিনি। ট্রাইব্যুনাল ওই নারীর সন্তানের পিতৃত্ব নির্ধারণে ডিএনএ পরীক্ষার নির্দেশ দেয়। এরপর কক্সবাজার জেলার পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) আদালতের আদেশ মোতাবেক ওই শিশুর পিতৃত্ব নির্ধারণে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য সিআইডিতে আবেদন করেন।
ওই আবেদন মোতাবেক ২০২০ সালে ওই নারী অর্থাৎ মামলার বাদী ও তার সন্তান এবং আসামির নমুনা সংগ্রহ করে সিআইডির ফরেনসিক ডিএনএ ল্যাব। পরীক্ষা শেষে সিআইডির দেওয়া প্রতিবেদনে বলা হয়, এটা সুদৃঢ়ভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে এমরানুল হক ওই নারীর গর্ভজাত সন্তানের জৈবিক পিতা।
এই মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ ও যুক্তিতর্ক শেষে গত ৫ জানুয়ারি রায় ঘোষণা করে ট্রাইব্যুনাল। ট্রাইব্যুনালের বিচারক জেলা ও দায়রা জজ মো. নূরে আলম রায়ে বলেছেন, ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬১ ধারায় দেওয়া জবানবন্দিতে সাক্ষীরা উল্লেখ করেননি যে, আসামি বাদীর বাড়িতে এসে তাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেছে বা এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। বাদী তার স্বামী, ছেলে ও মেয়ে ব্যতীত কোন নিরপেক্ষ সাক্ষীকে আদালতে উপস্থাপন করে নাই। অধিকন্তু বাদী লিখিতভাবে বলেছে, কোন সাক্ষীকে আদালতে উপস্থাপন করবে না। অর্থাৎ ধরে নেওয়া যায় যে, নিরপেক্ষ সাক্ষীরা তার পক্ষে সাক্ষ্য প্রদান করবে না এই ভাবনায় সে নিরপেক্ষ সাক্ষীদেরকে আদালতে উপস্থাপন করেনি।
রায়ে বলা হয়, বাদী ৪০ বছর বয়স্ক মহিলা। আসামির বয়স ২১ বছর। অর্থাৎ এই আসামি সম্পর্কে তার দেবর হওয়ায় তাকে ফাঁদে ফেলে একটা গোপন সম্পর্ক করে, যা আদালতের নিকট প্রতীয়মান হয়। অর্থাৎ বাদী আসামিকে প্রলুব্ধ করে সন্তানের জন্ম দিয়েছে। যেখানে তার পূর্ণ মাত্রায় সমর্থন ছিল। ফলে এটা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(১) ধারা মতে ধর্ষণের অপরাধ নয়।
এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন ওই নারী। তাকে আইনগত সহায়তা দেয় সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটি। ওই আপিলের শুনানি নিয়ে বিচারপতি ফরিদ আহমেদ ও বিচারপতি মো. আতোয়ার রহমানের দ্বৈত হাইকোর্ট বেঞ্চ মামলার নথি তলবের আদেশ দেন।
আদালতে ভিকটিমের পক্ষে শুনানি করেন লিগ্যাল এইড কমিটির প্যানেল আইনজীবী চঞ্চল কুমার বিশ্বাস। তিনি বলেন, ডিএনএ রিপোর্ট ও সাক্ষীদের সাক্ষ্য আমলে না নিয়েই আসামিকে ধর্ষণ মামলায় খালাস দিয়েছেন বিচারক। পাশাপাশি রায়ে বিচারক কিছু অপ্রাসঙ্গিক মন্তব্য করেছেন। যা অনুচিত এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন অনুযায়ী বেআইনি।
সূত্র : ইত্তেফাক