মুহাম্মদ মনজিলুল আমিন : প্রত্যেক দেশের লিখিত সংবিধানে প্রস্তাবনা থাকে। প্রস্তাবনা সংবিধান প্রণয়নের ভূমিকা বা মুখবন্ধ হিসাবে কাজ করে। সংবিধানে লিপিবদ্ধ মৌলিক আইন সমূহকে এক নজরে বা সংক্ষেপে জানার জন্য যে ভূমিকা অংশ বা প্যারাগ্রাফ থাকে সেটাই প্রস্তাবনা।
সাধারণ সংবিধান প্রণয়নের পটভূমি, উদ্দেশ্য, জনগণ তথা সংবিধান প্রণেতাদের আকাঙ্ক্ষা ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বর্ণনা থাকে। তাই সংবিধান একটি ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ দলিল হিসাবে এবং সংবিধান ব্যাখার সহায়ক হিসাবে কাজ করে। ভারতের বিখ্যাত “কেসবানন্দ ভারতী” মামলায় এই নীতিটি প্রতিষ্ঠিত হয় যে প্রস্তাবনা সংবিধানের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
বাংলাদেশের সংবিধানেও একটি প্রস্তাবনা আছে। প্রস্তাবনার শুরুতে “বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম” বাক্যটি ব্যবহৃত হয়েছে। বাংলাদেশের সংবিধানের প্রস্তাবনা ৫টি অংশে বা প্যারাগ্রাফে লিখিত হয়েছে।
প্রস্তাবনার প্রথম অংশে বা প্যারায় ঘোষণা করা হয়েছে বাংলাদেশের জনগণের পরম অভিপ্রায়ের অভিব্যক্তি এই সংবিধান এবং বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের জন্মের কথাও বলা হয়েছে।
দ্বিতীয় এবং তৃতীয় অংশে বা প্যারায় রাষ্ট্র পরিচালনার মৌলিক ভিত্তি হিসাবে ৪টি মৌলিক নীতি জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতাসহ মোট ১১টি মৌলিক বৈশিষ্ট্য, উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য বলা রয়েছে।
মৌলিক বৈশিষ্ট, উদ্দেশ্য এবং লক্ষ্যসমূহ নিম্নরূপ –
১. আইনের শাসন (Rule of Law)
২. মৌলিক অধিকার (Fundamental Rights)
৩. রাজনৈতিক সাম্য
৪. সামাজিক সাম্য
৫. অর্থনৈতিক সাম্য
৬. রাজনৈতিক স্বাধীনতা
৭. সামাজিক স্বাধীনতা
৮. অর্থনৈতিক স্বাধীনতা
৯. রাজনৈতিক সুবিচার
১০. সামাজিক সুবিচার
১১. অর্থনৈতিক সুবিচার
এছাড়াও আরেকটি ঘোষণা রয়েছে চতুর্থ অংশে বা প্যারায় তা হলো- সংবিধানের পবিত্রতা রক্ষা, সমর্থন ও নিরাপত্তা বিধান করা জনগণের দায়িত্ব।
সর্বশেষ পঞ্চম প্যারায় সংবিধান রচনার ক্ষেত্রে জনগণ তথা জন প্রতিনিধিদের কর্তৃক সর্বসম্মত ঐক্যের ঘোষণা লক্ষনীয়। এতে আরো বলা হয়েছে যে আমরা বাংলাদেশের জনগণ ২৬ মার্চ, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জন করেছি এবং ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জন করি। বাংলাদেশের সংবিধান ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর (কার্তিক মাসের ১৮ তারিখ, ১৩৭৯) গণপরিষদে গ্রহণ করা হয়। ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর থেকে এই সংবিধান কার্যকর করা হয়।
বস্ততঃ আমেরিকার সংবিধানে প্রস্তবনা ১৭৮৯ সালে অনুরূপ শব্দাবলি ব্যবহার হয়েছিলো। পরবর্তীতে পৃথিবীর প্রায় সকল লিখিত সংবিধানে এরূপ শব্দের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়।
বাংলাদেশের সংবিধানের প্রস্তবনা একটি অতি উত্তম ভাষা সংবলিত প্রস্তাবনা। তবে রাজনৈতিক পথ পরিবর্তনের প্রেক্ষিতে প্রস্তবনায় কিছু পরিবর্তন হয়েছে।
লেখক : শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ, ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি। Email: monzilultamim@gmail.com