প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে বেসিক ব্যাংকের আলোচিত সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চুসহ ১৪৭ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট অনুমোদন করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। চার্জশিটে আসামিদের বিরুদ্ধে দুই হাজার ২৬৫ কোটি ৬৮ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে।
আজ সোমবার (১২ জুন) দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে এ চার্জশিট অনুমোদন দেওয়া হয় বলে সংস্থাটির সচিব মো. মাহবুব হোসেন জানিয়েছেন। মামলা দায়ের করার প্রায় আট বছর পর ৫৯ মামলার চার্জশিট অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
দুদক সচিব মাহবুব হোসেন বলেন, বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন কোম্পানি/প্রতিষ্ঠানের স্বত্বধিকারীসহ এজাহারে যাদের নাম এসেছে এবং তদন্তে নাম আসা আসামি কর্তৃক অসৎ উদ্দেশ্যে পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহারপূর্বক অপরাধমূলক বিশ্বাস ভেঙে অন্যায়ভাবে নিজেরা লাভবান হয়ে এবং অন্যকে লাভবান করে ভুয়া মর্টগেজ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে বেসিক ব্যাংক লি. থেকে ঋণ গ্রহণের মাধ্যমে দুই হাজার ২৬৫ কোটি ৬৮ লাখ ১৪৫ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
দুদক সচিব বলেন, দুদকের পাঁচজন তদন্তকারী কর্মকর্তা সর্বমোট ৫৯টি মামলা দায়ের করে। তদন্তকারী কর্মকর্তা উক্ত মামলাসমূহের তদন্ত শেষে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। সে প্রেক্ষিতে কমিশন কর্তৃক উক্ত মামলাসমূহের চার্জশীট দাখিলের অনুমোদন করেন।
২০০৯ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংকের গুলশান, দিলকুশা ও শান্তিনগর শাখা থেকে মোট সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার ঋণ অনিয়মের মাধ্যমে বিতরণের অভিযোগ উঠে। ঘটনাটির অনুসন্ধানে নামে দুদক।
ঋণপত্র যাচাই না করে জামানত ছাড়া জাল দলিলে ভুয়া ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ঋণদানসহ নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে বিধিবহির্ভূতভাবে ঋণ অনুমোদনের অভিযোগ ওঠে ব্যাংকটির তৎকালীন পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে।
প্রায় পাঁচ বছর অনুসন্ধান শেষে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা লোপাটের ঘটনায় ২০১৫ সালের ২১, ২২ ও ২৩ সেপ্টেম্বর তিন দিনে টানা ৫৬টি মামলা হয়। রাজধানীর মতিঝিল, পল্টন ও গুলশান থানায় দায়ের করা এসব মামলায় আসামি করা হয় ১২০ জনকে। এর মধ্যে ঋণগ্রহীতা ৮২ জন, ব্যাংকার ২৭ ও ভূমি জরিপকারী রয়েছেন ১১ জন।অনিয়মের মাধ্যমে দুই হাজার ৬৫ কোটি টাকার ঋণ দেওয়া হয় বলে এসব মামলায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
রাজধানীর গুলশান শাখা থেকে এক হাজার ৩০০ কোটি টাকা, শান্তিনগর শাখা থেকে ৩৮৭ কোটি টাকা, প্রধান শাখা থেকে প্রায় ২৪৮ কোটি টাকা ও দিলকুশা শাখা থেকে ১৩০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়। অভিযোগের বাকি অংশের অনুসন্ধান এখনও চলমান। এছাড়া বেসিক ব্যাংকসংক্রান্ত বিষয়ে আরও পৃথক চারটি মামলা করে দুদক।
জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য বাচ্চুকে ২০০৯ সালে বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। ২০১২ সালে তার নিয়োগ নবায়নও হয়। ঋণ কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠলে ২০১৪ সালে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী ফখরুল ইসলামকে অপসারণের পর চাপের মুখে থাকা বাচ্চু পদত্যাগ করেন।