ঢাকা জেলার ডেমরার শারীরিক প্রতিবন্ধী মো. সুমনকে ৯০ দিনের মধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
এ বিষয়ে জারি করা রুল নিষ্পত্তি করে রোববার (১৮ জুন) বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে সুমনের পক্ষে বিনা পয়সায় মামলা পরিচালনা করেন আইনজীবী মোহাম্মদ ছিদ্দিক উল্লাহ মিয়া। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাস গুপ্ত।
আইনজীবী মোহাম্মদ ছিদ্দিক উল্লাহ মিয়া বলেন, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ পরীক্ষা-২০১৪ এর লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার ফল অনুযায়ী ১০ শতাংশ প্রতিবন্ধী কোটা পূরণ করে রিটকারী প্রতিবন্ধী প্রার্থীকে সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ না দেওয়ায় বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা চ্যালেঞ্জ করে এবং লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার ফল অনুযায়ী রিটকারী প্রতিবন্ধী প্রার্থীকে সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগের নির্দেশনা চেয়ে রিট দায়ের করা হয়।
রিটে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ মোট পাঁচ জনকে বিবাদী করা হয়।
আইনজীবী মোহাম্মদ ছিদ্দিক উল্লাহ মিয়া বলেন, রিটকারী মো. সুমন একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, তিনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী প্রতিবন্ধী কোটায় নিয়োগের জন্য আবেদন করেন। পরে লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে সফলভাবে উত্তীর্ণ হন এবং ভাইভা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। ২০১৮ সালে উক্ত নিয়োগ পরীক্ষার চূড়ান্ত ফল প্রকাশিত হয়, যেখানে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ১৯৯৭ সালের পরিপত্র অনুযায়ী নির্ধারিত ১০ শতাংশ প্রতিবন্ধী কোটা অনুযায়ী মো. সুমনকে সুযোগ দেওয়া হয়নি। অথচ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা, ২০১৯ এর ৮ এর ২ বিধিতে বলা হয়েছে ‘উপ-বিধি (২) এর দফা (গ) তে উল্লেখিত মহিলা, পোষ্য ও পুরুষ কোটা পূরণের ক্ষেত্রে, আপাতত বলবৎ অন্যকোনো বিধি বা সরকারি সিদ্ধান্তে কোনো বিশেষ শ্রেণির কোটা নির্ধারিত থাকিলে উক্ত কোটা সংক্রান্ত বিধান অনুযায়ী নিয়োগ করিতে হইবে’ এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন, ২০১৩ এর ধারা ৩৫ এর ১ এ বলা হয়েছে ‘আপাতত বলবৎ অন্যকোনো আইনে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও, প্রতিবন্ধিতার ধরন অনুযায়ী, উপযোগী কোনো কর্মে নিযুক্ত হইতে কোনো প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে বঞ্চিত বা তাহার প্রতি বৈষম্য করা বা তাহাকে বাধাগ্রস্ত করা যাইবে না’ এবং আমাদের দেশের সংবিধান এর অনুচ্ছেদ ২৮ এর ৪ এ উল্লেখ্য আছে যে ‘Nothing in this article shall prevent the State form making special provision in favour of women or children or for the advancement of any backward section of citizens’ অর্থাৎ পিটিশনার নিয়োগ পরীক্ষা-২০১৪ এর ২০১৮ সালে প্রকাশিত চূড়ান্ত ফলে ১০ শতাংশ প্রতিবন্ধী কোটা পূরণ করে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ পাওয়ার বৈধ অধিকারী, কিন্তু চূড়ান্ত ফল প্রকাশের সময় উক্ত বিধিগুলো অনুযায়ী প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ১০ শতাংশ কোটা অনুসরণ না করায় সুমন রিট দায়ের করেন।
আইনজীবী মোহাম্মদ ছিদ্দিক উল্লাহ মিয়া আরও বলেন, মো. সুমন-এর পক্ষে সম্পূর্ণ বিনা ফি-তে আইনি লড়াই লড়েছি এবং যদি ভবিষ্যতেও কখনো প্রয়োজন হয় আমি তার পক্ষে সম্পূর্ণ বিনা ফি-তে আইনি লড়াই লড়ব।