মায়ের দুধ পানে নিরাপদ পরিবেশ চেয়ে ৯ মাসের শিশুর রিট, যে রায় দিলেন হাইকোর্ট
হাইকোর্ট

এক একর জমি লিখে দেওয়ার শর্তে জামিন

ধর্ষণের মামলায় হয়েছে যাবজ্জীবন সাজা। পরবর্তীকালে ধর্ষণের শিকার ঐ ছাত্রীকে বিয়েও করেন ধর্ষক। সেই সাজার রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে উচ্চ আদালতে চান জামিন।

ভিকটিমকে এক একর জমি লিখে দেওয়ার শর্তে ধর্ষকের জামিন মঞ্জুর করেন হাইকোর্ট। জমি রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত সেই দলিল আগামী ১৬ জুলাই আদালতে দাখিলের আদেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।

বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান ও বিচারপতি শাহেদ নূর উদ্দিনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। গত মাসে দেওয়া এই আদেশের অনুলিপি সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে।

মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ

২০২০ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর সকালে ওই ছাত্রী ছাগল খুঁজতে বের হয়। মো. আবদুল রহিম তখন তাকে ডেকে বিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসের ভেতরে নিয়ে ধর্ষণ করেন। এ ঘটনায় মামলা না করতে হুমকি দেন আব্দুর রহিম। এর ৯ দিন পর, একই বছরের ৫ অক্টোবর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করে ধর্ষিতার পরিবার।

স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের দায়ে ২০২২ সালের ২৯ নভেম্বর রাঙামাটির লংগদু উপজেলার করল্যাছড়ি আর এস উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রহিমের যাবজ্জীবন সাজা হয়। এ ছাড়া তাকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তিন মাসের মধ্যে ১০ লাখ টাকা আদায় করে ভুক্তভোগী ছাত্রীকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে দেওয়ার নির্দেশও দেন আদালত।

রায়ে বিচারক তার পর্যবেক্ষণে বলেন, “ছাত্রীকে ধর্ষণের মাধ্যমে শিক্ষকতার মহান পেশাকে কলঙ্কিত করেছেন আসামি।”

এ রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন অভিযুক্ত আবদুর রহিম। জানান, সেই শিক্ষার্থীকে বিয়ে করেছেন, তাই যে কোনো শর্তে জামিন চান তিনি।

ঘটনা এখানেই থেমে থাকেনি। রাষ্ট্রপক্ষও আদালতকে সাফ জানিয়ে দেন, এ ধরনের বিয়ের কোনো ভিত্তিই নেই। আর পুরো বিষয়টি জেনে আসতে রাষ্ট্রপক্ষকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

পরে রাষ্ট্রপক্ষ এক একর জমি ধর্ষিতা সেই নারীর নামে লিখে দেয়ার শর্তে, জামিন দেয়ার বিষয়টি আদালতে উপস্থাপন করেন। সব শুনে হাইকোর্ট এক একর জমি লিখে দেয়ার শর্তেই জামিন দেন শিক্ষক আবদুর রহিমকে।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুজিত চ্যাটার্জি বাপ্পী বলেন, আদালত নির্দেশ দেন যে তাদেরকে জামানত স্বরূপ একটা কিছু দিতে হবে। তার প্রেক্ষিতে আসামি পক্ষ থেকে নগদ তিন লক্ষ টাকা ধর্ষিতা সেই নারীর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা দিয়ে রশিদ আদালতে দাখিলের মাধ্যমে জামিন পান শিক্ষক আবদুর রহিম।

বিচারপতি কুদ্দুস জামানের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ বলেন, যদি ধর্ষিতার সাথে কোনো অন্যায় আচরণ করা হয়, তবে সাথে সাথে বাতিল হবে জামিন।

সুজিত চ্যাটার্জি বাপ্পী বলেন, যেহেতু একটি মেয়ের এবং তার পরিবারের মাথা গোঁজার ঠাই হয়েছে এবং রাঙ্গামাটির আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে আমরা উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হইনি।

এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হয়নি ধর্ষিতার পরিবার।