মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সঠিক তালিকা প্রণয়নের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। ইতিহাসবিদ-গবেষকদের প্রতি এ আহ্বান জানান তিনি। এসময় প্রধান বিচারপতি মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের তালিকা অনুযায়ী স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের অনুরোধও জানান।
আজ মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) সুপ্রিম কোর্টের মূল ভবনে স্থাপিত মুক্তিযুদ্ধ কর্নারের বর্ধিত অংশ উদ্বোধন শেষে তিনি এই আহ্বান জানান।
প্রধান বিচারপতি বলেন, আজকে স্বাধীনতার যে সুফল আমরা ভোগ করছি, এর পেছনে অনেকের রক্ত-আত্মত্যাগ রয়েছে। কিন্তু তাদের সঠিক তালিকা না থাকাতে স্মরণটুকু আমরা করতে পারি না। তাই শহীদদের সঠিক তালিকা প্রণয়ন হওয়া উচিত।
হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানা প্রয়োজন। ১৯৭১ সালে আমাদের মাটিতে যে বর্বরতা হয়েছে, তাতে ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হয়েছেন। দুই লাখ মা-বোন ইজ্জত হারিয়েছেন। এক কোটিরও বেশি মানুষ দেশত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নিয়ে অবর্ণনীয় দুর্দশার শিকার হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধারা জীবন বাজি রেখে এই দেশ স্বাধীন করেছেন। আর এখন আমরা সেই স্বাধীনতার সুফল ভোগ করছি। সে জন্য আমাদের দায়িত্ব হলো মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানা। যাদের ত্যাগ রয়েছে, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো।
প্রধান বিচারপতি বলেন, আপনারা হয়ত অনেকেই জানেন, ১৯৭১ সালে রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলায় জাড়ুয়ার বিলে দুই তিন ঘণ্টার ভেতর প্রায় ১২০০ লোককে হত্যা করা হয়, এই ইতিহাস কেউ জানে না। সেখানে কোনো স্মৃতিসৌধ রয়েছে কি-না, সেটাও আমরা জানি না। অথচ ওইসব শহীদের রক্তেই আমরা সুফল ভোগ করছি।
তিনি বলেন, একইভাবে খুলনার চুকনগরেও একই দিনে প্রায় ১২ হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। সেখানে না থাকার মতো একটি স্মৃতিস্তম্ভ রয়েছে। ওই স্তম্ভে সেদিনের গণহত্যায় নিহত অনেক শহীদেরই নাম নেই। তাই চুকনগর ও ঝাড়ুয়ার বিলের মতো গণহত্যায় শহীদ হওয়া মানুষদের সঠিক তালিকা তৈরি করতে আমি ইতিহাসবিদ-গবেষকদের প্রতি অনুরোধ করব। আর সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ করব- ভালো স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করে সেখানে শহীদদের তালিকা লিপিবদ্ধ করতে।
নিজের বাস্তব অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, আমি নিজে দেখেছি, আমার বাড়ির পাশে একটি গ্রাম পরে একটি জমিদার বাড়িতে পাক আর্মিরা ক্যাম্প করে। তারা যখন চলে যায় সেখানে অনেক লোক মেরে রেখে গেছে। আমি নিজে গিয়ে আটটি লাশ দেখেছি। কাউকে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করা হয়েছে, কাউকে গুলি করা হয়েছে। কাউকে জবাই করে রেখে গেছে।
প্রধান বিচারপতি বলেন, স্বাধীনতার প্রকৃত ইতিহাস জানার জন্যই আমাদের আজকের এই আয়োজন। আমি আমার মাননীয় বিচারপতিবৃন্দ, কর্মকর্তাবৃন্দ এবং কর্মচারীদের অনুরোধ করব, আপনারা মুক্তিযুদ্ধ কর্নারে এসে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসসমৃদ্ধ বই পড়বেন এবং মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানার চেষ্টা করবেন।
এ সময় আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, বিচারপতি বোরহান উদ্দিন, বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম, বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম, বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী, বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন, সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. গোলাম রব্বানী, আপিল বিভাগের রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ সাইফুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।