মো: আল-আমিন: বিচ্ছেদ শব্দটি ছোট শব্দ হলেও এর ব্যাপকতা ও ভার অত্যন্ত বিশাল৷ দুজন মানুষকে দুই মেরুতে নিয়ে দুটো আলাদা পথের পথিক করে দেয় এই বিচ্ছেদ৷ বিভিন্ন সমীক্ষা এবং বাস্তবতায় দেখা গেছে বিচ্ছেদের হার দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে৷ এর পেছনে কাজ করছে নানা ধরনের কারণ৷ কিছু উল্লেখযোগ্য কারণ নিম্নে আলোচনা করা হলো-
একসাথে থাকার মানসিকতা হ্রাস পাওয়া: দীর্ঘ দিন এক সাথে দুজন মানুষ বসবাস করে কিন্তু একসাথে থাকলেও তাদের মনের দূরত্ব থাকে হাজারো আলোকবর্ষ দূরে৷ যার ফলে তাদের মধ্যে একটি দূরত্ব সৃষ্টি হয়ে যায় যা তারা নিজেরাও বুঝতে পারে না৷
সম্পর্কে যত্নবান না হওয়া: দুজনের মধ্যে যখন মনের দূরত্ব এসে যায় তারা আর সম্পর্কে যত্নবান হতে পারে না৷ ফলে আগের মত কিছুই ঠিক থাকে না৷
শ্রদ্ধাশীল না থাকা: টুকটাক ঝগড়া প্রতিটি সম্পর্কেই থাকে৷ তবে সে ঝগড়াঝাটি দীর্ঘ স্থায়ী হয়ে যখন সেখানে শ্রদ্ধার জায়গাটা কমে যায় তখন আর এক সাথে থাকতে ইচ্ছে করে না৷
অন্য নারী বা পুরুষের প্রতি আসক্ত: এই জায়গাটা খুব স্পর্শকাতর। দেখা যায় বিয়ের অনেক বছর পরেও অন্য নারী না পুরুষের প্রতি আসক্ত থাকলে সেই সম্পর্ক বিচ্ছেদে রূপ নিতে সময় লাগে না।
অত্যন্ত সন্দেহপ্রবণ: সম্পর্ক যত পুরোনো হয় তত ভালোবাসা বাড়ে৷ আর এই অতিরিক্ত বেশি ভালোবাসা আবার কখন যে সন্দেহ এর দিকে মোড় নেয় সেটা বুঝতে পারা যায় না৷ বিচ্ছেদ এর বড় কারণ হচ্ছে অতিরিক্ত সন্দেহ।
অবহেলা করা: সাধারণত বিয়ের পরে মানুষের সাইকোলজিতে ব্যাপক পরিবর্তন আসে। তারা সম্পর্কে অবহেলা শুরু করে৷ তাদের ভাবনা থাকে যে এ তো আমার স্ত্রী বা স্বামী, এমনিতেই আমার সাথে বসবাস করবে, থেকে যাবে৷ কিন্তু তাদের মনের যে একটি বন্ধুত্বপূর্ন চাহিদা আছে সেটা অনেকেই পূর্ণ করতে পারে না কিংবা এক ধরণের অবহেলা করে৷ যার কারণ ধীরে ধীরে দূরত্ব বাড়ে। বিচ্ছেদ হয় চূড়ান্ত পরিণতি।
মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল না থাকা: পারস্পারিক মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল না থাকাটাও বিচ্ছেদ এর অন্যতম কারণ৷
প্রাধান্য বিস্তার: স্বামী, স্ত্রী এক অপরের সহযোগী। কখনো তারা যোদ্ধা না৷ কিন্তু এক সাথে বসবাস করতে করতে তারা
যখন একে অপরের প্রতি প্রাধান্য বিস্তার করতে থাকে তখনি তাদের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হয় এবং বিচ্ছেদ ঘটে
মাদকাসক্ত ও অগোছালো জীবন যাপন: যখন নারী বা পুরুষ মাদকাশক্ত বা অগোছালো জীবনে অভ্যস্ত হয় এবং সম্পর্কের গুরুত্ব ও পরিধি অনুধাবন করার অবস্থায় না থাকে তখন বিচ্ছেদ দেখা যায়৷
হৃদয়ের শূন্যতা: যখন স্বামী স্ত্রী এক সাথে থাকার পরেও তাদের হৃদয়ে শূন্যতা কাজ করে তখন ভালোবাসা সেখানে বৃদ্ধি পায় না৷ বিয়ের পরেও যদি হৃদয় শূন্য থাকে এবং দুজন মানুষ দুজনকে পূর্ণ করতে না পারে তাহলে সেখানে বিচ্ছেদ ঘটবেই৷
বিচ্ছেদ না হোক এটাই আমরা প্রত্যাশা করি। মানব জীবন অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত। সৃষ্টিকর্তা আমাদের একটি উদ্দেশ্যে নিয়ে দুনিয়ায় প্রেরণ করেছেন সেই উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করা যেতে পারে। এছাড়াও নবী রাসূল ও তাদের স্ত্রীদের জীবনী অনুসরণ করলে দেখা যায় তাদের স্বামী-স্ত্রীগণের প্রতি আচরণ ও দায়িত্ববোধ কেমন সুন্দর ছিলো।
লেখক: মো: আল-আমিন; আইনজীবী, জেলা ও দায়রা জজ আদালত, ঢাকা।