ডুয়াল সেমিস্টারভিত্তিক (১ বছরে দুই সেমিস্টার) শিক্ষা কার্যক্রমের সঙ্গে সমন্বয় করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের এলএলবি (ব্যাচেলর অব ল) প্রোগ্রাম এবং সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি আসন সংখ্যা পুনরায় নির্ধারণ করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
ফলে এখন থেকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে প্রতি সেমিস্টারে ৫০ জনের পরিবর্তে ৭৫ জন ভর্তি হতে পারবে। একইসঙ্গে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন বিভাগে ১০০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করবে বলে আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির পক্ষে দায়ের করা এক রিভিউ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আজ বৃহস্পতিবার (২৪ আগস্ট) প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ এই রায় প্রদান করেন।
এদিন আদালতে শিক্ষার্থীদের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আহসানুল করিম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। বার কাউন্সিলের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার এস এম কফিল উদ্দিন।
অন্যদিকে ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন সুপ্রিম কোট আইনজীবী সমিতির সভাপতি সিনিয়ার অ্যাডভোকেট মমতাজ উদ্দিন ফকির। তাকে সহযোগিতা করেন ব্যারিস্টার মোতাহার হোসেন ও খন্দকার দিদার উস সালাম।
এর আগে আপিল বিভাগের দেওয়া রায় অনুযায়ী দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রতি সেমিস্টারে ৫০ জন করে বছরে দুই সেমিস্টারে ১০০ জন আইনের ছাত্র ভর্তি করতে পারত। আজকের এই রিভিউ রায় ২০১৭ সালে দেওয়া আপিল বিভাগের রায় থেকেই কার্যকর হবে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে প্রতি সেমিস্টারে ৫০ জনের বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি না করতে নির্দেশনা জারি করে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল। এ রায়ের ফলে বার কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত প্রতিপালন করতে হবে না বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে।
তবে আদালতের ওই আদেশ অমান্য করে যেসব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতি সেমিস্টারে ৫০ এর অধিক আইনের ছাত্র ভর্তি করেছে সেসব বিশ্ববিদ্যালয়কে ভর্তি করা প্রতি ছাত্রের জন্য মাথাপিছু ২৫ হাজার টাকা করে জরিমানা দিতে বলেছেন আদালত। ২০১৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত এই আদেশ প্রযোজ্য হবে।
এ জরিমানারা টাকার ৮০ শতাংশ বাংলাদেশ বার কাউন্সিলকে ও ২০ শতাংশ সুপ্রিম কোর্টের ডে কেয়ার সেন্টারকে দিতে বলা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই জরিমানার টাকা পরিশোধ করবে।
প্রসঙ্গত, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এলএলবি প্রোগ্রামে আসন সংখ্যা নির্ধারণ নিয়ে চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে (ইউজিসি) চিঠি দেয় সারাদেশে আইনজীবীদের সনদ প্রদান ও নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বাংলাদেশ বার কাউন্সিল।
সংস্থার সচিব সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ ড. ওয়াহিদুজ্জামান শিকদার সই করা ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের পরিচালক মো. ওমর ফারুক বরাবর প্রেরিত চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের ২০১৭ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি প্রদত্ত রায়ে সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অভিন্ন যে নির্দেশনা জারি করা হয়েছে সে অনুযায়ী এলএলবি প্রোগ্রামে প্রতি সেমিস্টারে ৫০ (পঞ্চাশ) জনের অধিক শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমতি নেই।
আদালত কর্তৃক কোনোরূপ আদেশ/রায় ব্যতিরেকে এলএলবি প্রোগ্রামে প্রতি সেমিস্টারে ৫০ (পঞ্চাশ) জনের অধিক শিক্ষার্থী ভর্তি করার আইনগত সুযোগ নাই বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।
পরে এ বিষয়ে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বার কাউন্সিলে আপত্তি জানায়। তাদের ভাষ্য মতে, তিন সেমিস্টার পদ্ধতিতে প্রতি বছর ১৫০ জন শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ ছিল। কিন্তু ডুয়াল সেমিস্টার পদ্ধতিতে বছরে ১০০ জনের বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করা যাচ্ছিলো না। এ প্রেক্ষিতে প্রতি সেমিস্টারে ৭৫ জন শিক্ষার্থী ভর্তির দাবি জানায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
তবে বার কাউন্সিল জানায় এ বিষয়ে তাদের করণীয় কিছু নেই, ইউজিসি আসন সংখ্যা নির্ধারণ করবে। আবার ইউজিসির পক্ষ থেকে বলা হয় আদালত কর্তৃক কোনোরূপ আদেশ/রায় ব্যতিরেকে আসন সংখ্যা পুনরায় নির্ধারণ করা সম্ভব নয়।
এমতাবস্থায় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের ২০১৭ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি প্রদত্ত রায়ের শুধুমাত্র এলএলবি প্রোগ্রামে আসন সংখ্যা নির্ধারণ সংক্রান্ত অংশটি পুনর্বিবেচনা করতে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির পক্ষ থেকে আদালতে আবেদন জানানো হয়।
এছাড়াও আইন বিভাগের এলএলবি প্রোগ্রামে প্রতি সেমিস্টারে সর্বোচ্চ ৫০ জনের বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করা যাবে না সংক্রান্ত নিয়ম ভঙ্গ করে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে আইন বিভাগে অধিক শিক্ষার্থী ভর্তি করায় বেশ কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে বিভিন্ন সময় জরিমানা করেছিল সুপ্রিম কোর্ট।
এই বিধান না মেনে অতিরিক্ত ৫২ জন শিক্ষার্থীকে ভর্তি করে আরও একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। এলএলবি পাস করে যাওয়া ওই শিক্ষার্থীরা আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্তির প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে গেলে তাঁদের আটকে দেওয়া হয়।
এরপরে আদালতে রিট করেন ভুক্তভোগী ৫২ শিক্ষার্থী। ওই রিটের শুনানি নিয়ে আদালত ওই শিক্ষার্থীদের ৩০ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ হিসেবে দিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন।
পরবর্তীতে এসব শিক্ষার্থীর আপিল এবং ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির আবেদন একসঙ্গে নিষ্পত্তি করে রায় দেন আপিল বিভাগ। এ রায়ের ফলে বার কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত প্রতিপালন করতে হবে না বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে।