মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি: মুন্সীগঞ্জের চাঞ্চল্যকর কিশোরী লায়লা আক্তার লিমুকে (১৭) হত্যার দায়ে এক যুবককে ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে দণ্ডিত আসামিকে ১০ হাজার টাকা অর্থদন্ড দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি লাশ গুম করার দায়ে আসামিকে আরো ৭ বছরের সশ্রম কারাদন্ড ও সাত হাজার টাকা জরিমানার রায় প্রদান করেন আদালত।
মুন্সীগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক জেলা ও দায়রা জজ ফাইজুন্নেসা গত বৃহস্পতিবার (২৪ আগস্ট) এই রায় ঘোষণা করেন।
মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত মো. খোকন (৪৩) সিরাজদিখান উপজেলার পাউসার গ্রামের বাবুল মিয়ার পুত্র। খোকন দুই সন্তানের জনক।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) অ্যাডভোকেট লাবলু মোল্লা। আসামিপক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মো আতিকুর রহমান জুয়েল ও ব্যারিস্টার হাসান সাঈদ রসি।
মামলা সংক্ষিপ্ত বিবরণ
২০১৮ সালের ২৮ আগস্ট বিকালে মা হারা এই কিশোরী ড্রেস বানাতে যায়। আসামী মো: খোকন তার দোকনে কৌশলে আটকে রেখে একাধিকবার ধর্ষণ করে। শেষ রাতের দিকে কিশোরী লায়লা আক্তার লিমু যখন তাকে বিয়ে করার জন্য চাপ প্রয়োগ করছিল।
সেই সাথে তাকে বিয়ে না করলে সে সকালে দোকান থেকে বেরিয়ে সবাইকে বলে দিবে এমন সব কথা বলে তখন খোকন লিমুকে হত্যার পরিকল্পনা করে এবং এক পর্যায়ে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে লাশ বস্তাবন্দি করে পাশের ইছামতি নদীতে ফেলে দিয়ে গুম করে।
এদিকে মেয়েকে চারিদিকে খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে বাবা আব্দুল মতিন স্থানীয় শ্রীনগর থানায় ৩০ আগষ্ট/১৮ তারিখে ১২৭০ নম্বর সাধারণ ডায়েরী করেন। পরের দিন ৩১ আগষ্ট তারিখে এলাকাবাসী চান সুপার মার্কেটের পাশেই ইছমতি নদীতীরে বস্তাবন্দি লাশের খবরে আব্দুল মতিন ছুটে আসেন এবং পুলিশের সহায়তায় বস্তা খুলে তার মেয়ে লিমুর লাশ শনাক্ত করেন।
এছাড়া খোকনের দোকান থেকে পচা দুর্গন্ধ পেয়ে আশেপাশের লোকজনের কাছ থেকে খবর পেয়ে খোকনের দোকানে জমাটবদ্ধ রক্তসহ খুনের বেশ কিছু আলামত পুলিশ জব্দ করে।
লাশ উদ্ধারের পর সন্দেহজনক খোকনকে আটক শ্রীনগর থানা পুলিশ। এরপর সে আদালতে গিয়ে স্বেচ্ছায় এই লোমহর্ষক ধর্ষণ ও খুনের বিষয়ে স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করে।
এরপরই লিমুর বাবা জেলার শ্রীনগর থানার বাড়ৈখালী গ্রামের আব্দুল মতিন বাদী হয়ে শ্রীনগর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন করে। থানা পুলিশ দীর্ঘ তদন্ত শেষে নারী শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(১) ধারাসহ বাংলাদেশ দন্ডবিধির ৩০২/২০১/৩৪ ধারায় প্রাথমিক সত্যতা পেয়ে সিএস দাখিল করেন।
বিচার ও রায়
পরবর্তীতে ট্রাইব্যুনাল ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(২) ধারাসহ বাংলাদেশ দন্ডবিধির ৩০২/২০১/৩৪ ধারায় চার্জ গঠন করে মামলাটি বিচার ও নিষ্পত্তির লক্ষ্যে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু করেন।
রাষ্ট্রপক্ষ মোট ২০ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য উপস্থাপন করেন এবং আসমী নিজেও সাফাই সাক্ষী প্রদান করেন। ২০ জন সাক্ষী এবং আসামীর সাফাই সাক্ষ্য গ্রহণের পর ট্রাইব্যুনাল সাক্ষ্য প্রমানের ভিত্তিতে আসামী খোকনের বিরুদ্ধে এই রায় প্রদান করেন। জনাকীর্ণ আদালতে রায়ের সময় আসামী কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
রায়ের পর আসামীর বাবা বাবুল মিয়া জানান, এই রায়ের ব্যাপারে উচ্চ আদালতে আপীল করবেন তারা।
তবে এই রায়ের আগেই মামলার বাদী নিহত লিমুর বাবা আব্দুল মতিন মারা গেছেন। লিমুর বড় ভাই রিপন মিয়া ও ফুফু নাসরিন বেগম এই রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন।
রিপন মিয়া বলেন, আমার বোনকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে আমরা আসামির শাস্তির জন্য অপেক্ষা করছিলাম। আদালত অভিযুক্ত খোকনকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন। আমরা চাই যেন দ্রুত রায়ের বাস্তবায়ন হয়।