মো: আল-আমিন: বিকেলে বারান্দায় বসে চা খেতে খেতে যখন আকাশের দিকে চোখ যায় তখন মনে হয় গোটা মহাবিশ্ব তাকিয়ে আছে। মহাকাশ আমাদের চারপাশের সব কিছুতেই বিরাজমান। এই মহাকাশের ব্যাপ্তি ও ব্যবহার নিয়ে যে আইন আছে এটি হয়তোবা অনেকের এখনো আজানা৷
বিশ্বের উন্নত দেশ তথা রাশিয়া, আমারিকা, চীন এসব দিক দিয়ে ব্যাপক এগিয়ে আছে৷ বলা হয়ে থাকে মহাবিশ্ব সকলের জন্য উন্মুক্ত এবং সকলের তাতে সমান অধিকার বা সবাই সমানভাবে ব্যবহার করতে পারবে।
The Outer Space Treaty provides the basic framework on international space law, including the following principles:
The exploration and use of outer space shall be carried out for the benefit and in the interests of all countries and shall be the province of all mankind;
Outer space shall be free for exploration and use by all States;
তাহলে এখানে একটি প্রশ্ন থেকেই যায় মহাকাশের নিয়ন্ত্রণে উন্নত দেশগুলো যেমন সুযোগ সুবিধা ভোগ করছে তেমন অনুন্নত বা উন্নয়নশীল দেশের তো অধিকার আছে সেসব সুযোগ সুবিধা পাবার৷ যদিও অনুন্নত দেশগুলোর প্রযুক্তির ব্যবহার ব্যাপক নাজেহাল অবস্থা৷ তবুও তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করার তো সুযোগ নেই৷
উদাহরণ স্বরুপ বলা যায়, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট এর কথা৷ এর অবস্থান ১১৯.১ ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমার কক্ষপথে। এর ফুটপ্রিন্ট বা কভারেজ হবে ইন্দোনেশিয়া থেকে তাজিকিস্তান পর্যন্ত বিস্তৃত।পনের বছরের জন্য রাশিয়ার কাছ থেকে অরবিটাল স্লট কেনা হয়েছে। তবে বিএস ওয়ানের স্থায়িত্ব হতে পারে ১৮ বছর পর্যন্ত।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, The Outer Space Treaty অনুসারে যদি মাহাকাশ সকলের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত হয়ে থাকে তাহলে বাংলাদেশ কেনো টাকা দিয়ে রাশিয়ার থেকে অরবিটাল স্লট কিনবে? অরবিটাল স্লট তো বাংলাদেশের এমনিতেই পাবার অধিকার রয়েছে৷
শুধুমাত্র রাশিয়া প্রযুক্তিতে উন্নত এবং স্লট নিয়ন্ত্রণ করে এই যুক্তিতে তারা তো অন্য যেসব দেশ প্রযুক্তিতে অগ্রসর নয় তাদের কাছে ব্যবসা করতে পারেন না। শুধু রাশিয়া নয় আমেরিকা সহ অন্য সব উন্নত দেশ গুলো তাদের প্রযুক্তি ব্যবহার করে মহাকাশকে নিয়ন্ত্রণ করছে৷
কিন্তু এই মহাকাশে যে আমাদের সকলের সমান অধিকার আছে সেই বিষয়টি থেকে আমরা বঞ্চিত হচ্ছি৷ অনেক ক্ষেত্রে আমরা জানিই না যে সমুদ্র কিংবা ভূমির মত মহাকাশেও আমাদের অধিকার আমরা বাস্তবায়ন করতে পারি।
মহাকাশ আইন এর অগ্রগতিতে করণীয়
১/ গবেষণায় প্রচুর সময় দিতে হবে৷ দক্ষ লোকবল প্রস্তুত করতে হবে৷ দীর্ঘমেয়াদি কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে৷
২/ এককভাবে এয়ার এন্ড স্পেস বিশ্ববিদ্যালয় চালু করতে হবে৷
৩/LLB, LLM পাঠ্যক্রমের মধ্যে এসব বিষয় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
৪/জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিরোধ হলে তার নিষ্পত্তি কীভাবে হবে সেই বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে৷
৫/উন্নত দেশের সাথে সাথে অনুন্নত দেশ গুলোও সমান ভাবে সকল সুবিধা ভোগ করতে পারে সেই বিষয় তদারকির ব্যবস্থা করতে হবে৷
৬/প্রতিটি দেশে এয়ার এন্ড স্পেস ল বিষয়ক দূত থাকবে জাতিসংঘ তাদের কে নিয়োগ দিবে। এবং তারা ওই দেশের মহাকাশ জনিত সকল সমস্যা সমাধানে জাতিসংঘ এর সাথে সমন্বয় করবে৷
৭/মহাকাশ বিষয়ক মনিটরিং সেল থাকবে যেটা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দুটোকেই সমন্বয় করবে৷
৮/যেহেতু মহাকাশে অনুন্নত দেশ গুলো প্রযুক্তিগত কারণে যেতে পারে না, তাই উন্নত দেশ গুলোর জোড় যার মুল্লুক তার অবস্থান এর ব্যাপারেও সচেতন হতে হবে।
৯/, উন্নত দেশগুলোর নিজস্ব মহাকাশ আইন কেমন?? কিভাবে রিসার্চ সেন্টার পরিচালিত হয়, সেসব বিষয়ে যারা অভিজ্ঞ তারা কীভাবে কাজ করে এসব বিষয়ে রাষ্ট্র সমন্বয় করতে পারেন এবং নিজ দেশে প্রয়োগ করতে পারে৷
১০/সঠিক নীতিমালা প্রণয়ন, অর্থায়ন, রিসার্চ মেটারিয়াল সংগ্রহ, আধুনিক রিসার্চ যন্ত্রপাতি সংগ্রহ , দক্ষ গবেষক সহ একটি পূর্ণাঙ্গ রিসার্চ সেন্টার প্রয়োজন৷
মহাকাশের নিজেই এক রহস্যময় বিষয়বস্তু, তেমনি মহাকাশ নিয়ে কাজ করতে হলে প্রয়োজন সময় ও সঠিক দিক নির্দেশনা, কঠোর সাধনা ও লেগে থাকার মানসিকতা৷ আমাদের দেশে অত্যন্ত জ্ঞানী গুণী ও মেধাবী মানুষ রয়েছেন৷ তাদের কে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে একদিন মহাবিশ্বে বাংলাদেশের পতাকাও উড়বে।
লেখক: মো: আল-আমিন; আইনজীবী, জেলা ও দায়রা আদালত, ঢাকা৷