দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের দুই বিচারপতির পদত্যাগের দাবিতে সুপ্রিম কোর্ট চত্বরের বাইরে কালো পতাকা মিছিল করেছেন বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীরা।
আজ বুধবার (৩০ আগস্ট) দুপুর ১টা ১৫ মিনিটের সুপ্রিম কোর্ট বার ভবনের প্রবেশমুখে বিএনপির আইনজীবীরা সমবেত হন। এরপর কালো পতাকা হাতে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণের বাইরে হাইকোর্টের মাজার গেট থেকে মিছিল শুরু করেন।
সুপ্রিম কোর্টসহ সব আদালত প্রাঙ্গণে কোনো ধরনের মিছিল সমাবেশ না করার বিষয়ে হাইকোর্টের রায় কঠোরভাবে অনুসরণের জন্য আইনজীবীদের নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ। এ কারণে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে তারা কোনো ধরনের শ্লোগান দেননি।
জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম সুপ্রিম কোর্টের ঈদগাহ ময়দানের পাশের গেট থেকে বের হয়ে প্রধান ফটক পর্যন্ত মিছিল করে।
মিছিলে তারা ‘গড়ে তোলো একতা, আইনজীবী জনতা’, ‘দফা এক, দাবি এক- শেখ হাসিনার পদত্যাগ’, ‘বিচারপতি এজলাস ছাড়ো- রাজনীতি করলে মাঠে আসো’, ‘অ্যাকশন অ্যাকশন- ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘লড়াই লড়াই লড়াই চাই- লড়াই করে বাঁচতে চাই’ ইত্যাদি স্লোগান দেন৷
কালো পতাকা মিছিলে নেতৃত্ব দেন ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, অ্যাডভোকেট আব্দুল জব্বার ভূঁইয়া, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম সজল প্রমুখ।
মিছিল পরবর্তী সমাবেশে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে- মাহবুব উদ্দিন খোকন ও ব্যারিস্টার কাজল সাহেব যে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন সেই নির্বাচনে আমাদের আইনজীবী ও সাংবাদিক ভাইবোনদের কারা পিটিয়েছিল। তাদের নির্দেশদাতা ছিলেন আইনমন্ত্রী ও অ্যাটর্নি জেনারেল।
তিনি বলেন, আমি আমার মুখের কথা বলছি না। এফআইআর-এ সুস্পষ্টভাবে লেখা আছে আইনমন্ত্রী ও অ্যাটর্নি জেনারেলের নির্দেশে সুপ্রিম কোর্টে পুলিশ প্রবেশ করে৷
কায়সার কামাল বলেন, আইনমন্ত্রী ও অ্যাটর্নি জেনারেলের কাছে জানতে চাই কোন মদতে আপনারা আমাদের আইনজীবী ও সাংবাদিকদের পেটাতে পুলিশ পাঠিয়েছিলেন। এই দুজন সুপ্রিম কোর্টকে কলঙ্কিত করেছে। সুতরাং আইনজীবী সমাজ আপনাদের ছাড়বে না।
তিনি বলেন, ‘শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ’ এই শব্দটি আজ শুধু জাতীয়ভাবে নয়, বরং আন্তর্জাতিকভাবে একটি কোডে পরিণত হয়েছে। আমরা আগেও বলেছি এখনও বলছি- যারা নিজেদের শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ মনে করেন তারা দয়া করে পদত্যাগ করুন। শপথ নিয়ে কেউ রাজনৈতিক নেতা হতে পারে না।
এই বিএনপি নেতা বলেন, শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ একটি নতুন টার্ম। আপনারা যেহেতু সেই টার্মে নিজেদের অভিহিত করেছেন সেহেতু নিজেরা পদত্যাগ করে অন্তত সুপ্রিম কোর্টকে বাঁচান। এই মহামান্য সুপ্রিমকোর্ট মানুষের সর্বশেষ আশ্রয়স্থল৷ এ জায়গাকে কলঙ্কিত করবেন না।
এর আগে, সকালে সুপ্রিম কোর্টসহ সব আদালত প্রাঙ্গণে কোনো ধরনের মিছিল সমাবেশ না করার বিষয়ে হাইকোর্টের রায় কঠোরভাবে অনুসরণের জন্য আইনজীবীদের নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ।
একইসঙ্গে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলীসহ বিএনপির সাত আইনজীবী নেতার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার আবেদনের শুনানি ১৯ অক্টোবর ঠিক করেন আদালত।
বুধবার (৩০ আগস্ট) প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বিভাগ এ আদেশ দেন।
আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট নাহিদ সুলতানা যুথি। এসময় অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।
২০০৫ সালে বিচারপতি আব্দুল মতিন ও বিচারপতি এ এফ এম আব্দুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে আইনজীবীদের মিছিল সমাবেশ না করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। বুধবার এ রায় কঠোরভাবে আপিল বিভাগ আইনজীবীদের মেনে চলতে নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন আইনজীবী নাহিদ সুলতানা যুথি।
গতকাল মঙ্গলবার (২৯ আগস্ট) আপিল বিভাগের দুই বিচারপতির বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন ও মিছিল সমাবেশ করায় বিএনপির সাত আইনজীবী নেতার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার আবেদন দায়ের করা হয়।
তারা হলেন- জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব ও বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট ফাহিমা নাসরিন মুন্নি, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম সুপ্রিম কোর্ট শাখার সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুল জব্বার ভূঁইয়া, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সহ-সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান খান ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সুপ্রিম কোর্ট শাখার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট গাজী কামরুল ইসলাম সজল।
মঙ্গলবার সকালে আপিল বিভাগের দুই বিচারপতির বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন ও মিছিল সমাবেশ করায় বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার আবেদন করা হয়। জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব ও বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামালসহ সাতজনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার আবেদন দায়ের করা হয়। আইনজীবী নাজমুল হুদার পক্ষে অ্যাডভোকেট নাহিদ সুলতানা যুথি এ আবেদন দায়ের করেন।
গত ১৫ আগস্টের শোক দিবসের আলোচনা সভায় ‘বিচারপতিরা শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ’ উল্লেখ করে বক্তব্য দেওয়ায় আপিল বিভাগের দুইজন বিচারপতির বিরুদ্ধে একাধিকবার সংবাদ সম্মেলন করে আসছে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম। এছাড়া ওই দুজন বিচারপতিকে বিচারকার্য থেকে বিরত রাখতে কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। করা হয়েছে মিছিল সমাবেশও।
আলোচনা সভায় ‘বিচারপতিরা শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ’ উল্লেখ করে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম বলেন, এ সংবিধান হলো আমাদের সর্বোচ্চ রাজনৈতিক দলিল। বঙ্গবন্ধুর যে রাষ্ট্র-দর্শন, রাজনৈতিক দর্শন, সামাজিক দর্শন—সব দর্শনের প্রতিফলন ঘটেছে এ সংবিধানে।
অনুষ্ঠানে বিচারপতি আবু জাফর সিদ্দিকী প্রশ্ন রাখেন- সারা বিশ্বে নির্বাচন হয় কেউ তাকিয়েও দেখে না, নির্বাচন ঘিরে সব নজর বাংলাদেশের দিকে কেন?