বিচারকের স্বাক্ষর জাল করে মিথ্যা সার্টিফিকেটের মাধ্যমে মোটরযান ফেরত দেওয়ার অভিযোগে আদালতে কর্মরত দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-১০ এর বেঞ্চ সহকারী ইমরান হোসেন বাদী হয়ে গতকাল সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) কোতয়ালি থানায় মামলাটি করেন।
আসামিরা হলেন- আদালতের মোটরযান শাখার ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক ফুয়াদ উদ্দিন এবং কনস্টেবল আবু মুছা।
আজ মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) মামলার এজাহার আদালতে আসে। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বেগম ফারাহা দিবা ছন্দার আদালত তা গ্রহণ করেন।
কোতোয়ালী থানার সাব-ইন্সপেক্টর সাইফুল ইসলামকে মামলাটির তদন্ত শেষ করে আগামী ২৬ অক্টোবর প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন আদালত।
কোতোয়ালী থানার আদালতের সাধারণ নিবন্ধন শাখার কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক আশ্রাব আলী এ তথ্য জানিয়েছেন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, লাইসেন্স না থাকায় (ঢাকা মেট্রো-ল ২ ৫৫ ৮২২০ এবং ঢাকা মেট্রো- ল ৩৪ ০৯১৮) এই দুটি গাড়ির চালককে জরিমানা করে ট্রাফিক পুলিশ। জরিমানার টাকা না দেওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে নন এফআইআর পৃথক দুটি মামলা আদালতে প্রেরণ করা হয়। এরপর আদালত দুই চালকের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।
পরবর্তীতে পরোয়ানা ফেরতের কাগজে এসআই ফুয়াদ উদ্দিন ও কনস্টেবল আবু মুসা বিচারকের সই জাল করেন। এ ঘটনা জানাজানি হলে পালিয়ে যান তারা।
এই দুই পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে সোমবার রাজধানীর কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন সিএমএম আদালত-১০ এর বেঞ্চ সহকারী ইমরান হোসেন। একই সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে কমিশনার বরাবর লিখিত দিয়েছে আদালতের প্রসিকিউশন বিভাগ।
এরপর মঙ্গলবার ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ফারহা দিবা ছন্দা এজাহার গ্রহণ করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ২৬ অক্টোবর দিন ধার্য করেন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শেখ সাদী ১০ নং আদালতের পাশাপাশি মোটরযান সম্পর্কিত মামলা পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত।
গত ২৪ সেপ্টেম্বর আড়াইটার দিকে মোটরযান শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত ইনচার্জ এসআই ফুয়াদ উদ্দিন অন্যান্য নথির সঙ্গে নন এফআইআরের দুটি মামলা বিচারকের কাছে উপস্থাপন করেন। কিন্তু, আসামি না থাকায় বিচারক কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেনি।
পরবর্তীতে বিচারক জানতে পারেন, মামলা দুটির জব্দকৃত আলামত মোটরযান শাখার ইনচার্জ ফুয়াদ উদ্দিন ও কনস্টেবল আবু মুছা তাদের অন্যান্য সহযোগীদের যোগসাজশে বিচারকের স্বাক্ষর জাল করে পরোয়ানা ফেরত কাগজে ম্যাজিস্ট্রেটের স্বাক্ষরের জায়গায় নিজেরা স্বাক্ষর প্রদান করে আসামিদের দিয়ে দেয়।
তাছাড়া এ মামলার নথিতে বিচারকের কোনও স্বাক্ষর নেই এবং কোনও জরিমানা করা হয়নি। বিচারক ইতোমধ্যে অবগত হয়েছেন, মোটরযান শাখার ইনচার্জ এসআই ফুয়াদ উদ্দিন ও জিআরও আবু মুছা তাদের অন্যান্য সহযোগীদের যোগসাজশে দীর্ঘ দিন ধরে বিচারকের স্বাক্ষর জাল করে একই ধরনের অপরাধ করে আসছেন বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়।
এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রসিকিউশন বিভাগের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (প্রশাসন) মো. কামরুল আহসান বলেন, বিষয়টি অত্যন্ত খারাপ ও ঘৃণিত কাজ। আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য হেডকোয়ার্টারে লিখিত অভিযোগ পাঠিয়েছি। বর্তমানে তারা পলাতক থাকায় আইনে সোপর্দ করতে পারি নাই।
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিনুর রহমান বলেন, ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শেখ সাদীর সই জালিয়াতি করায় আদালতের মোটরযান শাখায় দায়িত্বপ্রাপ্ত ইনচার্জ ফুয়াদ উদ্দিন ও জিআরও আবু মুসার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আসামিরা পলাতক থাকায় তাদের গ্রেফতার করা যায়নি। তাদের গ্রেফতারের অভিযান চলছে।