নবনিযুক্ত প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানকে তাঁর জন্মস্থান নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে নাগরিক সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। শনিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) মোহনগঞ্জ পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয় প্রাঙ্গণে নাগরিক সমাজের ব্যানারে এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠান হয়। প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নেওয়ার পর ওবায়দুল হাসানের এটাই প্রথম মোহনগঞ্জ সফর।
এদিন বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। পরে প্রধান বিচারপতির উদ্দেশে মানপত্র পড়েন সংস্কৃতিকর্মী ও শিক্ষক তাহমিনা সাত্তার। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক ও পৌর মেয়র মো. লতিফুর রহমান। সঞ্চালনা করেন বড়কাশিয়া-বিরামপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মোতাহার হোসেন।
‘আমি সংবিধান ও আইন সংরক্ষণ করব। রাগ-অনুরাগের বশবর্তী না হয়ে সবার প্রতি সমান আচরণ করব। একজন বিচারককে এই শপথ নিতে হয়। একজন বিচারপতিকে প্রধান বিচারপতি হওয়া পর্যন্ত চারবার শপথ নিতে হয়। ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত চারবার শপথ নিয়েছি। কখনো শপথের অঙ্গীকার থেকে বিচ্যুত হইনি, ভবিষ্যতেও হব না। শপথ থেকে বিচ্যুত না হওয়াই একজন বিচারকের দায়িত্ব ও কর্তব্য।’
বক্তব্য দেন নেত্রকোনা-৪ (মদন-মোহনগঞ্জ-খালিয়াজুরি) আসনের সংসদ সদস্য ও প্রধান বিচারপতির ছোট ভাই সাজ্জাদুল হাসান, জ্যেষ্ঠ জেলা ও দায়রা জজ শাহজাহান কবীর, জেলা প্রশাসক শাহেদ পারভেজ, পুলিশ সুপার মো. ফয়েজ আহম্মেদ, সরকারি কৌঁসুলি ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আমিরুর ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক আইনজীবী শামছুর রহমান প্রমুখ।
সংবিধান ও আইন সংরক্ষণ করার শপথ থেকে বিচ্যুত না হওয়ার অঙ্গীকার করে নবনিযুক্ত প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, ‘আমি সংবিধান ও আইন সংরক্ষণ করব। রাগ-অনুরাগের বশবর্তী না হয়ে সবার প্রতি সমান আচরণ করব। একজন বিচারককে এই শপথ নিতে হয়। একজন বিচারপতিকে প্রধান বিচারপতি হওয়া পর্যন্ত চারবার শপথ নিতে হয়। ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত চারবার শপথ নিয়েছি। কখনো শপথের অঙ্গীকার থেকে বিচ্যুত হইনি, ভবিষ্যতেও হব না। শপথ থেকে বিচ্যুত না হওয়াই একজন বিচারকের দায়িত্ব ও কর্তব্য।’
প্রধান বিচারপতি তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের সংবিধান দিয়ে গেছেন। এই পবিত্র সংবিধান রক্ষা করা আমাদের বিচার বিভাগের সবার দায়িত্ব। বিচারপতি হিসেবে সংবিধান সংরক্ষণ করার শপথ নিয়েছি। ২৬ তারিখে আবারও শপথ নিয়েছি বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি হিসেবে। এই সংবিধান সংরক্ষণ, দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার যে আমানত আমার হাতে তুলে দেওয়া হলো, তা যেন পবিত্রভাবে পালন করতে পারি।’
তিনি বলেন, ‘দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সংবিধান থেকে যেন বিচ্যুত না হই। যাতে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও তাঁর নির্দেশিত পথে আমরা থাকতে পারি। রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গ—নির্বাহী বিভাগ, আইন সভা ও বিচার বিভাগ। এ তিনটি অঙ্গ সংবিধান অনুযায়ী জনগণের স্বার্থে কার্যাবলি সম্পাদন করে থাকে। এর একটির গুরুদায়িত্ব আমাকে দেওয়া হয়েছে। যদি ঠিকঠাক না হয়, তবে তা অকল্যাণ হয়ে যাবে।’
প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, ‘সমাজে বিভিন্ন ধরনের আন্দোলন আছে, তা থাকবে। তবে আপনারা একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন, সহিষ্ণু হোন। তাহলে সমস্ত সংকট থেকে উত্তরণের পথ খুলে যাবে।’
বক্তব্যের একপর্যায়ে প্রধান বিচারপতি তাঁর নিজ গ্রাম উপজেলার হাটনাইয়া ছয়াশি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মোহনগঞ্জ পাইলট সরকারি উচ্চবিদ্যালয় নিয়ে স্মৃতিচারণা করেন। তিনি বলেন, ‘এখন শরৎকাল, কিন্তু তাপদাহ কমেনি। ছোটবেলায় যখন শরৎকালে সহপাঠীদের সঙ্গে স্কুলে হেঁটে আসা-যাওয়া করতাম, তখন ঠান্ডা অনুভূত হতো। চারদিকে গাছপালা, নানা ধরনের ফুল ফুটে থাকত। এসব মনে হলে এখনো পুলকিত হই, সুখ অনুভব করি।’
শিক্ষকদের করা স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের যে শিক্ষকেরা ছিলেন, তাঁরা যেভাবে আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন, তাঁদের প্রতি আমি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই। আমার মরহুম পিতা মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও মহেশখলা ক্যাম্পের ইনচার্জ আখলাকুল হোসাইন সংবিধানের একজন স্বাক্ষরকারী। তাঁর প্রতি আমি গভীর শ্রদ্ধা জানাই।’
মোহনগঞ্জ পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘ভালো করে পড়ালেখা করে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করবে। আমি ২৪তম প্রধান বিচারপতি। আমাদের দেশে নারী প্রধানমন্ত্রী, নারী স্পিকার আছেন, কিন্তু এখন পর্যন্ত নারী প্রধান বিচারপতি কেউ হননি। তোমরা লেখাপড়া করে সেই চেষ্টা করবে।’