আইনের সংস্কার যদি না করা হয়, তাহলে মামলার জট থেকে রেহাই পাওয়া যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন নবনিযুক্ত প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান।
নেত্রকোনা শহরের আধুনিক স্টেডিয়ামে দেওয়া নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে রোববার (১ অক্টোবর) সন্ধ্যায় তিনি এ কথা বলেন। নাগরিক সমাজ এই সংবর্ধনার আয়োজন করে।
এদিন বিকেল চারটার দিকে দুর্গাপুরের বিরিশিরি ক্ষুদ্র নৃ–গোষ্ঠীর কালচারাল একাডেমিসহ স্থানীয় সাংস্কৃতিক সংগঠনের শিল্পীরা নেচে–গেয়ে প্রধান বিচারপতিকে অভ্যর্থনা জানান। পরে জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। উত্তরীয় প্রদান ও মানপত্র পাঠের পর তাঁকে সম্মাননা স্মারক দেন আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক ও পৌরসভার মেয়র মো. নজরুল ইসলাম খান।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি বলেন, যুগোপযোগী আইন তৈরি করতে সরকারকেই উদ্যোগ নিতে হবে। আইনের অনেক ডালপালার জন্য একটি মামলার জন্য বিচারপ্রার্থীদের বিভিন্ন আদালতে যেতে হয়। জজ কোর্ট থেকে হাইকোর্ট, হাইকোর্ট থেকে সুপ্রিম কোর্টে। আবার আপিল হয়, আবার রিভিউ হয়। এ জন্য মামলার জট শুরু হয়। এর সঙ্গে আইনজীবী, বিচারক—প্রায় সবাই জড়িত।
তিনি বলেন, এ দেশে আইনের কিছু ত্রুটি অবশ্যই রয়েছে। এই ত্রুটিগুলো সরিয়ে যুগোপযোগী আইন করার জন্য সরকারের দায়িত্ব রয়েছে। সিভিল প্রসিডিউর দেশে সংস্কার করা হয় বহু বছর পর পর। সিভিল প্রসিডিউরসহ অন্যান্য আইনের সংস্কার না করা হলে মামলার জট ছুটবে না। আইন কমিশন থেকে যেসব পরামর্শ দেওয়া হয়, তা বাস্তবায়ন করার আহ্বান জানান তিনি।
প্রধান বিচারপতি শিক্ষার্থী ও তরুণদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের মানুষ হিসেবে তৈরি হতে হবে। আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণে তরুণদেরই দায়িত্ব নিতে হবে। পরিবার হলো পৃথিবীর সর্বপ্রথম ও সর্বশ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ। তাই সন্তানদের বৈষম্যহীন ও ধর্মের ভেদাভেদহীন অসাম্প্রদায়িক সমাজ চর্চায় অভ্যস্ত হওয়ার শিক্ষা দিতে হবে। তারপর গুরুত্বপূর্ণ স্থান হলো স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়। তাই তিনি শিক্ষকদের বলবেন, তাঁরা যেন শিক্ষকতাকে চাকরি হিসেবে গণ্য না করেন।
প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, ‘আমি নেত্রকোনার সন্তান। গ্রামের স্কুলে পড়াশোনা করে প্রধান বিচারপতি হয়েছি। গ্রামে থেকে পড়াশোনা করেও এত বড় পদে যাওয়া যায়। আজকের এই সংবর্ধনা থেকে আমাদের শিক্ষার্থীরা এই অনুপ্রেরণা পাবে। এই কারণেই নাগরিক সংবর্ধনা গ্রহণে আমি আগ্রহী হয়েছি।’
নেত্রকোনা পৌরসভার মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম খানের সভাপতিত্বে ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামছুর রহমান লিটনের সঞ্চালনায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী মো. আশরাফ আলী খান খসরু, হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি কেএম কামরুল কাদের, মোস্তফা জামান ইসলাম, সংসদ সদস্য অসীম কুমার উকিল, সাজ্জাদুল হাসান, সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য হাবিবা রহমান খান শেফালি, জাকিয়া পারভীন মনি, পরিকল্পনা কমিশনের সচিব এ কে এম ফজলুল হক, সিনিয়র জেলা জজ মো. শাহজাহান কবির, মোহাম্মদ ইফতেখার বিন আজিজ, শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. গোলাম কবীর, জেলা প্রশাসক শাহেদ পারভেজ, পুলিশ সুপার মো. ফয়েজ আহমেদ, জেলা জজকোর্টের জিপি বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাড. আমিরুল ইসলাম, সাবেক যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয় প্রমুখ।