কলকাতা হাইকোর্টের সাবেক বিচারক ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার সদরপুর ইউনিয়নের কাকিলাদহ গ্রামের কৃতী সন্তান ড. রাধা বিনোদ পালের সম্মানে নিজের টাকায় তৈরি করা ৪৮তম ব্রিজ উৎসর্গ করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।
কুষ্টিয়া সদর উপজেলার আলামপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের রাজাপুর গ্রামে গত বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে সেতুর উদ্বোধন করেন ব্যারিস্টার সুমন।
এসময় ব্যারিস্টার সুমন বলেন, আমার ৪৮তম ব্রিজটি বিচারপতি ড. রাধা বিনোদ পালের নামে উৎসর্গ করেছি। তিনি (রাধা বিনোদ পাল) হচ্ছেন কুষ্টিয়ায় জন্ম নেওয়া সেই কৃতী সন্তান, যার জন্য জাপান ‘বাঙালির চিরকালের নিঃস্বার্থ বন্ধু’।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাপানের সেনাবাহিনীর শীর্ষ নেতাদের আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে বিচারের সম্মুখীন করা হয়। সেই ট্রাইব্যুনালে ১১ জন বিচারকের একজন ছিলেন কুষ্টিয়া জেলার সন্তান রাধা বিনোদ পাল। ওই ট্রায়ালে ১১ জন বিচারকের মধ্যে শুধুমাত্র রাধা বিনোদ পালই জাপানের পক্ষে অবস্থান নিয়ে রায় দিয়েছিলেন।
বলা হয়ে থাকে জাপানের পক্ষে মি. পালের রায়ের জন্যই ওই ট্রায়ালের কয়েকজন বিচারক প্রভাবিত হয়ে তাদের রায় কিছুটা নমনীয় করেছিলেন। ফলশ্রুতিতে জাপান দীর্ঘ মেয়াদি বিভিন্ন শাস্তি এবং নিষেধাজ্ঞা থেকে মুক্তি পেয়েছিল।
এজন্য জাপানের তৎকালীন সম্রাট বলেছিলেন, ‘যতদিন জাপান থাকবে, বাঙালি খাদ্যাভাবে, অর্থকষ্টে মরবে না। জাপান হবে বাঙালির চিরকালের নিঃস্বার্থ বন্ধু।’
ব্যারিস্টার সুমন বলেন, গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ খালের (জিকে খাল) ওপর ব্রিজ না থাকায় রাজাপুরসহ আশপাশের এলাকার হাজারো মানুষ বাঁশের সাঁকো দিয়ে হেঁটে যাতায়াত করতো। একটি সেতুর অভাবে দীর্ঘদিন ধরে দুই পারের মানুষের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল। যে কোনো ধরনের গাড়ি নিয়ে যাতায়াত করতে প্রায় আড়াই থেকে তিন কিলোমিটার দূরের ব্রিজ ব্যবহার করতে হতো। এতে নানা ধরনের সমস্যা ও কষ্ট হতো পথচারী, কৃষকসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষের।
গত বছরের ১৯ মার্চ ওই এলাকায় গিয়েছিলেন ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন। মানুষের দীর্ঘদিনের সমস্যার কথা শুনে সমাধানের আশ্বাস দেন। সেই লক্ষ্যে নিজের অর্থায়নে করে দেন পাকা সেতু। এতে মিলন ঘটলো দুই পারের মানুষের। ওই এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ করলেন ব্যারিস্টার সুমন।
সুমন বলেন, নিজের এলাকার বাইরে এ প্রথম কুষ্টিয়ায় আমি একটি ব্রিজ করেছি। বিচারপতি রাধা বিনোদ পালের সম্মানে আমার এ ব্রিজ উৎসর্গ করলাম।
তিনি বলেন, আমার কাছে এ ব্রিজের গুরুত্ব অনেক বেশি। ব্রিজটি এলাকার মানুষের অনেক উপকারে আসবে। প্রত্যেক মানুষ যদি একে অন্যের পাশে দাঁড়ায়, তাহলে অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে যে দেশপ্রেম আছে সেটাকে জাগিয়ে তুলতে পারলে আমরা অনেক ভালো করতে পারবো। জীবনে যতদিন বেঁচে থাকবো, ততদিন মানুষের কল্যাণে কাজ করে যেতে চাই।
কারণ আমি বিশ্বাস করি, মানুষের মধ্যেই তিনিই উত্তম, যিনি মানবতার পথে বের হন। যে কারণে আমার ৪৮তম ব্রিজটি বিচারপতি রাধা বিনোদ পালের নামে উৎসর্গ করেছি।
রাধা বিনোদ পালের কলকাতা হাইকোর্টের সাবেক বিচারক ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন। তিনি কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার সদরপুর ইউনিয়নের কাকিলাদহ গ্রামের কৃতী সন্তান।
১৯৪১ থেকে ১৯৪৩ সাল পর্যন্ত তিনি কলকাতা হাইকোর্টের বিচারক ছিলেন। এরপর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে কাজ করেন ১৯৪৪-১৯৪৬ সাল পর্যন্ত। তিনি ৮০ বছর বয়সে ১৯৬৭ সালের ১০ জানুয়ারি কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।