দুর্নীতি দমন কমিশন বরং ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয় বলে মন্তব্য করেছেন দুদকের প্রধান আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। ‘দুদক রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হচ্ছে’- টিআইবির এই বক্তব্যকে ফলস বলেও অভিহিত করেন তিনি।
আজ বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে টিআইবির বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় খুরশীদ আলম খান এ মন্তব্য করেন।
দুদক আইনজীবী বলেন, আমি সর্বশেষ আপনাদের একটা উদাহরণ দেই। ড. ইউনূসকে একটি নোটিশের মাধ্যমে দুদকে তলব করে হয়। দুদকের প্রশ্নোত্তর শেষে কার্যালয় থেকে বের হবার সময় সাংবাদিকরা তাকে প্রশ্ন করেন এটি কি কোন রাজনৈতিক ইস্যু কিনা। উত্তরে ড. ইউনূস বলেন, এটি একটি লিগ্যাল ইস্যু। লিগ্যাল ভাবেই সম্পন্ন হচ্ছে। আমি এ নিয়ে কোন মন্তব্য করবো না।
তিনি বলেন, ড. ইউনূস একজন নোবেল বিজয়ী হয়েও এমন কথা বলেননি। টিআইবি কিভাবে এ কথা বলতে পারে। তারা অন্তত একটি উদাহরণ দেখাক।
দুদক আইনজীবী আরও বলেন, দুদকের মামলার ক্ষেত্রে তথ্য-উপাত্ত লাগে। আমি বলবো টিআইবি নিজে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়। আজ ড. ইউনূসের বক্তব্যই সেটি প্রমাণ করে।
টিআইবি ওয়াচডগের ভূমিকা পালন করে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে খুরশীদ আলম খান বলেন, আমরা টিআইবিকে ওয়াচডগ মনে করি না। টিআইবি একটা পলিটিক্যাল মোটিভেটেড এনজিও।
এর আগে বৃহস্পতিবার সকালে জাতিসংঘের দুর্নীতিবিরোধী সনদ (আনকাক) বাস্তবায়ন পর্যালোচনা বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে টিআইবি নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ২০০৪ সালে সরকার কর্তৃক দুর্নীতিবিরোধী আইন প্রণীত হয়। ২০০৭ সালে জাতিসংঘ দুর্নীতিবিরোধী সনদে স্বাক্ষরের পর একই বছর দুর্নীতি দমন নীতিমালা প্রণীত হয়।
পরবর্তীতে ২০০৯ সালে তথ্য অধিকার আইন, এরপর ২০১১ সালে জনস্বার্থ সম্পর্কিত তথ্য প্রকাশ সুরক্ষা আইন, ২০০৮ সালে ক্রয় বিধিমালা, ২০১২ সালে অর্থপাচার প্রতিরোধ আইন ও জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল প্রণীত হয়। আইন প্রণয়নের দিক থেকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হলেও বাংলাদেশ বাস্তবায়নের দিক থেকে আরো অগ্রগতির সুযোগ রয়েছে।
তিনি বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আইন, ২০০৪ অনুযায়ী দুর্নীত দমনে বিশেষায়ীত প্রতিষ্ঠান হিসেবে দুর্নীতি দমন কমিশন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এর আইনগত ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো জাতীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ে দুর্নীতি দমন কার্যক্রম বাস্তবায়নে সহায়ক হিসেবে বিবেচিত।
তবে কমিশনকে আরও শক্তিশালী ও কার্যকর করতে এর আইনগত বাধা যেমন সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের পূর্বানুমতির আইনগত বাধ্যবাধকতা দূর করতে হবে। অন্যদিকে, দুদকের ওপর রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক প্রভাব নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, একটি দক্ষ সিভিল সার্ভিস গঠনে ইতিপূর্বে যেসকল আইনগত ও প্রাতিষ্ঠানিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তার মধ্যে সিভিল সার্ভিস নীতিমালা ১৯৮১ ও সরকারি কর্মচারি (আচরণ) বিধিমালা ১৯৭৯ এবং এর ভিত্তিতে গৃহীত বিভিন্ন বিধি অন্যতম।
এছাড়া সাম্প্রতিককালে প্রণীত সরকারি চাকরি আইন ২০১৮ এবং জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল বাস্তবায়ন সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ইতিবাচক ভূমিকা পালনে সুযোগ সৃষ্টি করেছে। তবে তদন্তের স্বার্থে সরকারি কর্মকর্তার গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে সরকারের পূর্বানুমতির বিষয়টি দুর্নীতি দমনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।