দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টসহ সারাদেশের অধস্তন আদালতসমূহে ডিজিটাল পেমেন্ট তথা পিওএস (পয়েন্ট অব সেল) মেশিনের মাধ্যমে কোর্ট ফি আদায় করতে আবেদন করেছেন এক আইনজীবী।
প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের কাছে গতকাল মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) এ আবেদন জানান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মাহমুদুল হাসান।
আবেদনে বলা হয়, কিছুদিন পূর্বে দেশে কোর্ট ফির ব্যাপক সংকট দেখা গিয়েছিল। এমতাবস্থায় সাবেক প্রধান বিচারপতি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে চিঠি দিয়েছিলেন। কোর্ট ফি নিয়ে বিভিন্ন ধরণের জটিল সমস্যা রয়েছে।
প্রথমত, বর্তমানে উন্নত প্রিন্টিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে কোর্ট ফি জাল করা হচ্ছে। অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে কোর্ট ফি জাল করার কারণে সাধারণভাবে তা বুঝা দুরূহ ব্যাপার।
দ্বিতীয়ত, ভেন্ডরদের কাছ থেকে কোর্ট ফি কিনতে অতিরিক্ত ১৫ থেকে ২০ শতাংশ টাকা বেশি দিতে হয়।
তৃতীয়ত, এডভোলেরম কোর্ট ফির ক্ষেত্রে ট্রেজারি চালান জমা দিয়ে জুডিসিয়াল স্ট্যাম্প সংগ্রহ করা খুবই কঠিন ও সময় সাপেক্ষ কাজ। এ ছাড়া ভেন্ডরদের মাধ্যমে এডভোলেরম কোর্ট ফি কিনতে অতিরিক্ত কয়েক হাজার টাকা বেশি দিতে হয়।
চতুর্থত, দেওয়ানি কার্যবিধির ধারা ৮৯ক(১১) অনুযায়ী বিরোধ সমূহ মধ্যস্থতার মাধ্যমে নিষ্পত্তি হলে কোর্ট ফি ফেরতের বিধান আছে। কিন্তু বাস্তবে এই অর্থ ফেরত পাওয়া দুরূহ ব্যাপার। কারণ সরকার বাজেটে এ ধরণের বরাদ্দ রাখেনা এবং অর্থ বিভাগ টাকা ফেরত দেয়না।
এমতাবস্থায় কোর্ট ফি সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানে ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেম খুবই সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে। সুপ্রিম কোর্ট ও সারা দেশের অধস্তন আদালতগুলোতে কোর্ট ফি সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানে বিশেষ ধরণের পিওএস মেশিন ব্যবহার করা যেতে পারে।
এতে করে কোর্ট ফির সমপরিমাণ অর্থ ডেবিট/ক্রেডিট কার্ডে পেমেন্টের সাথে সাথে আঠাযুক্ত স্টিকার প্রিন্ট হয়ে আসবে এবং সেই আঠাযুক্ত স্টিকার রিসিট মামলার পিটিশনে লাগিয়ে দিলেই কোর্ট ফি পরিশোধ বলে গণ্য হবে।
এ ধরণের স্টিকার কোর্ট ফি -কে ‘ডিজিটাল কোর্ট ফি’ হিসেবে স্বীকৃতি দিলেই বিদ্যমান আইনের কোন সংশোধনের প্রয়োজন পড়বে না। তবে এক্ষেত্রে টু স্টেপ ভেরিফিকেশন সিস্টেম রাখতে হবে।
সেক্ষেত্রে প্রতিটি স্টিকার রিসিটের মধ্যে পেয়েমেন্টের তথ্য লেখা সহ পৃথক কিউআর কোডও থাকবে এবং কোর্টের একজন কর্মকর্তা কিউআর রিডার মেশিনের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে পেমেন্টের তথ্য যাচাই করে দিবেন।
দেশে পিওএস মেশিনে কোর্ট ফি নেওয়ার প্রচলন হলে, কোর্ট ফি জালিয়াতির কোন সুযোগ থাকবে না। কোর্ট ফি তৈরি ও সরবরাহ করার জন্য ব্যাপক কর্মযজ্ঞের কোন প্রয়োজন পড়বে না।
এছাড়া তাৎক্ষণিকভাবে অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা হবে। পাশাপাশি বিকল্প বিরোধের মাধ্যমে কোন মামলা নিষ্পত্তি হলে সেক্ষেত্রে দ্রুত রিফান্ড করা সম্ভব হবে।
তবে কোন একক ব্যাংকের পিওএস মেশিন না বসিয়ে একাধিক ব্যাংকের পিওএস মেশিন বসালে আইনজীবী/বিচারপ্রার্থীরা খুব স্বচ্ছন্দে কোর্ট ফি প্রদান করতে পারবে।
দেশের বিচার ব্যবস্থার উন্নয়নে কোর্ট ফি জালিয়াতি প্রতিরোধ এবং পিওএস মেশিনের মাধ্যমে কোর্ট ফি পেমেন্ট ও সরকারি কোষাগারে তাৎক্ষণিকভাবে অর্থ জমাদানে ডিজিটাল কোর্ট ফি সিস্টেম প্রচলন করতে বলা হয় আবেদনে।