অবসরে যাচ্ছেন ‘দেশটা তো জাহান্নাম বানিয়ে ফেলেছেন’ মন্তব্য করা দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি মো. ইমদাদুল হক আজাদ। রীতি অনুযায়ী অবসরে যাওয়া বিচারপতিদের শেষ কর্মদিবসে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি কোন ধরনের সংর্বধনা নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।
আজ রোববার (১৫ অক্টোবর) বিচারপতি মো. ইমদাদুল হক আজাদের শেষ কর্মদিবস। তাঁর সংবর্ধনা না নেওয়ার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কোর্ট ও সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের একাধিক সূত্র গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।
সুপ্রিম কোর্টে রীতি অনুযায়ী শেষ কর্মদিবসে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি থেকে বিদায়ী বিচারপতিকে সংর্বধনা দেওয়া হয়ে থাকে। কিন্তু বিচারপতি মো. ইমদাদুল হক আজাদ সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনকে জানিয়ে দিয়েছেন তিনি কোন ধরনের সংর্বধনা নেবেন না।
জানা গেছে, সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে আনুষ্ঠানিকভাবে বিচারপতিদের যে সংর্বধনা দেওয়া হয় ওই সংর্বধনাও তিনি নেবেন না। তবে প্রধান বিচারপতির পক্ষ থেকে সুপ্রিম কোর্টের কর্মকর্তারা তাকে ফুল ও ক্রেস্ট পৌঁছেয়ে দেবেন বলে সূত্রে জানা গেছে।
বিচারপতি মো. ইমদাদুল হক আজাদের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
আজাদ ১৯৫৬ সালের ১৬ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে ডিগ্রী সম্পন্ন করেন।
আজাদ ১৯৮৫ সালের ১১ মার্চ রাজশাহী জেলা আদালতে কাজ শুরু করেন। তিনি ১৩ এপ্রিল ১৯৮৭ সালে হাইকোর্ট বিভাগে আইনজীবী হন। ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০০১-এ, আপিল বিভাগের আইনজীবী হন।
তিনি ২৩ আগস্ট ২০০৪-এ হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারপতি নিযুক্ত হন এবং ২৩ আগস্ট ২০০৬ এ স্থায়ী হন।
‘দেশটা তো জাহান্নাম বানিয়ে ফেলেছেন’
গত ১০ অক্টোবর সকালে মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের সম্পাদক আদিলুর রহমান খান ও পরিচালক এ এস এম নাসির উদ্দিনের জামিন শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষ বিরোধিতা করায় উষ্মা প্রকাশ করেন হাইকোর্ট। আদালত তাদের উদ্দেশে বলেছন, ‘দেশটা তো জাহান্নাম বানিয়ে ফেলেছেন।’ বিচারপতি মো. ইমদাদুল হক আজাদের একক বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন।
ওইদিন শুনানির শুরুতে আদিলুর-এলানের পক্ষে জামিন শুনানি করতে ডায়াসের সামনে দাঁড়ান জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী। এসময় রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. রেজাউল করিম দাঁড়িয়ে যান। তিনি বলেন, আমাদেরও বক্তব্য আছে। তখন হাইকোর্ট বলেন, আসামিদের আইনজীবীদের আগে বলতে দিন। আপনি এখনই লাফ দিয়ে উঠছেন কেন?
এরপর আসামিদের আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, তথ্য প্রযুক্তি আইনের মামলায় আসামিদের দুই বছরের সাজা দেওয়া হয়েছে। ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। আদালত জানতে চান, জামিনের আবেদন দেওয়া হয়েছে কি না? আইনজীবী বলেন, দেওয়া আছে।
এ সময় আবারও জামিনের বিরোধিতা করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল রেজাউল করিম। তখন আদালত উষ্মা প্রকাশ করে রাষ্ট্রপক্ষকে উদ্দেশ্য করে বলেন, তাহলে তাদের ২ বছরের সাজা দিলেন কেন? যাবজ্জীবন দণ্ড দিতে পারলেন না?
আরও কিছু মন্তব্যের পর এক পর্যায়ে আদালত বলেন, দেশটা তো জাহান্নাম বানিয়ে ফেলেছেন।
শপথ ভঙ্গের অভিযোগ
এ মন্তব্য করার কারণে সংশ্লিষ্ট বিচারপতির বিরুদ্ধে প্রধান বিচারপতির কাছে অভিযোগ করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, একটি মামলার ফৌজদারি আপিল শুনানিকালে বিচারপতির এ ধরনের মন্তব্য অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।
এ ধরনের মন্তব্য করে ওই বিচারপতি সংবিধানবলে যে শপথ নিয়েছিলেন তা ভঙ্গ করেছেন। এ ধরনের মন্তব্য সম্পূর্ণ অসাংবিধানিক এবং অত্যন্ত গর্হিত। যা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয় বলেও মন্তব্য করেন অ্যাটর্নি জেনারেল।
প্রধান বিচারপতির খাস কামলায় তলব
ওই দিন সন্ধ্যায় ‘দেশটা তো জাহান্নাম বানিয়ে ফেলেছেন’ মন্তব্য করা বিচারপতিকে খাস কামরায় ডেকেছিলেন প্রধান বিচারপতি। এ সময় প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগের বিচারপতিরা বিচারপতি মো. ইমদাদুল হক আজাদকে কথা বার্তায় যত্নশীল হওয়ার পরামর্শ দেন।