উচ্চ আদালত থেকে জামিন পাওয়া কয়েকজন আসামি ও তাদের স্বজনদের ওপর নির্যাতন চালিয়ে ৭২ লাখ টাকা আদায়ের ঘটনায় শরীয়তপুরের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আল ইমরানকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন হাইকোর্ট। পাশপাশি শরিয়তপুর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের জিআরও, পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার পুলিশ কর্মকর্তা সুরজ উদ্দিন ও আসামিদের আইনজীবীকে তলব করেছেন হাইকোর্ট। আগামী ২ নভেম্বর তাদের আদালতে হাজির হতে বলা হয়েছে।
উচ্চ আদালত থেকে আগাম জামিন পাওয়া আসামিদের পুলিশের ল’ইয়ার সার্টিফিকেট ছিঁড়ে ফেলার বিষয়ে শুনানিতে রোববার (১৫ অক্টোবর) বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আমিনুল ইসলামের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে পুলিশ কর্মকর্তাদের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক।
তিনি শুনানিতে বলেন, পুলিশের বিরুদ্ধে আগাম জামিনের ল’ইয়ার সার্টিফিকেট ছিঁড়ে ফেলার যে অভিযোগ আনা হয়েছে, সেটা সঠিক নয়। পত্র-পত্রিকায় খবর সঠিকভাবে আসেনি। তাই শুধু পত্রিকার রিপোর্টের ভিত্তিতে কোনো সিদ্ধান্ত না নেওয়ার আর্জি জানান তিনি।
এ পর্যায়ে বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম বলেন, সব বিষয় আমরা দেখব। জুডিশিয়ারির মর্যাদা রক্ষা করার দায়িত্ব সবার। আমরা একদিন থাকব না কিন্তু জুডিশিয়ারি থাকবে। তাই এই জুডিশিয়ারিকে ব্যর্থ প্রমাণ করবেন, এটা হতে পারে না।
পরে উচ্চ আদালত থেকে জামিন পাওয়া কয়েকজন আসামি ও তাদের স্বজনদের ওপর নির্যাতন চালিয়ে ৭২ লাখ টাকা আদায়ের ঘটনায় শরিয়তপুরের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের জিআরও, পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার পুলিশ কর্মকর্তা সুরজ উদ্দিন ও আসামিদের আইনজীবীকে তলব করেন হাইকোর্ট। আগামী ২ নভেম্বর তাদের আদালতে হাজির হতে বলা হয়।
একইসঙ্গে উচ্চ আদালতের জামিন পাওয়া আসামিদের কারাগারে পাঠানোর ঘটনায় শরীয়তপুরের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আল ইমরানকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন আদালত।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন বাপ্পী, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আনিসুর রহমান। রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মজিবুর রহমান।
এর আগে গত ২০ আগস্ট এই মামলার শুনানিতে হাইকোর্ট বলেছিলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ভালো কাজ করছে। কিন্তু বাহিনীর দু’একজন সদস্যের নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের জন্য পুরো বাহিনীকে দায়ী করা ঠিক নয়। কারণ পুলিশ বাহিনীর দু’একজন সদস্যের এ ধরনের কর্মকাণ্ডে দুর্নামের ভাগীদার হতে হয় সরকারকে।
আদালত বলেন, এই মামলায় আমরা আসামিদের আগাম জামিন দিয়েছি। সেই জামিনের ল’ইয়ার সার্টিফিকেটও ছিঁড়ে ফেলেছেন পুলিশ কর্মকর্তারা। শুধু ছিঁড়েই ফেলেননি, আসামিদের গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠিয়েছেন। এমনকি রিমান্ডের আবেদন দিয়েছেন। পাশাপাশি আসামিদের গ্রেপ্তার করে নির্যাতন করেছেন। এত ধৃষ্টতা পুলিশ পায় কোথায়? এ ধরনের কর্মকাণ্ড করার পর এখন তারা সবকিছু অস্বীকার করছে। যেন ‘ঠাকুর ঘরে কে রে আমি কলা খাই নাই।
গত ১৩ জুন উচ্চ আদালত থেকে জামিন পাওয়া কয়েকজন আসামি ও তাদের স্বজনদের ওপর নির্যাতন চালিয়ে ৭২ লাখ টাকা আদায়ের ঘটনায় ব্যাখ্যা দিতে শরীয়তপুরের নড়িয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল মনির ও পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমানকে তলব করেন হাইকোর্ট।
একইসঙ্গে উচ্চ আদালতের জামিন পাওয়া আসামিদের কারাগারে পাঠানোয় শরীয়তপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে তলব করা হয়। এছাড়া উচ্চ আদালত থেকে জামিন পাওয়া কয়েকজন আসামি ও তাদের স্বজনদের ওপর নির্যাতন চালিয়ে ৭২ লাখ টাকা আদায়ের ঘটনায় পুলিশ মহাপরিদর্শককে তার অবস্থান ব্যাখ্যা করতে বলা হয়।
হাইকোর্টের এই আদেশে গত ২০ আগস্ট পুলিশ কর্মকর্তারা হাজির হয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করেন এবং ব্যাখ্যা দাখিল করেন।
প্রসঙ্গত, ২১ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের অভিযোগে পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানায় করা মামলায় গত ২৯ মে কয়েকজন আসামিকে আগাম জামিন দেন হাইকোর্ট। আগাম জামিন সংক্রান্ত ল’ইয়ার্স সার্টিফিকেট দেখানোর পরও তাদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরদিন তাদের আদালতে হাজির করলে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয় জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত।
এ নিয়ে পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে ৪ জুন তাদের জামিন মঞ্জুর করে আদালত। এ মামলায় আসামিদের কাছ থেকে ৭২ লাখ টাকা চাঁদা দাবিরও অভিযোগ রয়েছে পুলিশের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে প্রাথমিক অনুসন্ধানের পর সংশ্লিষ্ট থানার ওসি এবং এক অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে পুলিশ প্রশাসন।