দুর্নীতির মামলায় দুই বছরের ওপর সাজাপ্রাপ্ত আসামি সাংবিধানিকভাবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অযোগ্য বলে পর্যবেক্ষণ দিয়েছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ।
আজ রোববার (২২ অক্টোবর) সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে এ সংক্রান্ত রায় প্রকাশ করা হয়েছে।
৪৪ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সংবিধানের ৬৬(২)(ডি) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আপিলকারীদের সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুবিধার্থে তাদের সাজা স্থগিত করার কোনো সুযোগ নেই। তারা সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বা অংশগ্রহণের অযোগ্য।
রায়ে আদালত বলেছেন, জামিন বা সাজা স্থগিত থাকলেও তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না, যদি না তার সাজা উপযুক্ত আদালত কর্তৃক বাতিল না হয়। আপিল বিচারাধীন থাকা মানে দণ্ডিত ব্যক্তি নির্দোষ নয়। একমাত্র উপযুক্ত আদালত কর্তৃক সাজা বাতিল হলে দণ্ডিত ব্যক্তি নির্দোষ হবেন। দণ্ড বাতিল না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচনে অংশগ্রহণের কোনো সুযোগ নেই।
এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, সংবিধানের ৬৬ (২) (ডি) এর ব্যাখ্যা দিয়ে হাইকোর্ট আদেশ দিয়েছেন। সেই আদেশে বলা হয়েছে— সাজা কখনও স্থগিত হয় না। দুর্নীতি মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত কয়েকজন ব্যক্তি আপিলে সাজা স্থগিতের একটা আবেদন করেছিলেন। কারণ সাজা স্থগিত না হলে তারা সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। সেটার বিষয়ে হাইকোর্ট ডিভিশন বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন। ইন্ডিয়ান সুপ্রিম কোর্ট ও বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের রায়ের আলোকে মূল কথা হলো— যখনই কোনো ব্যক্তির দুই বছর বা তার বেশি সাজা হবে তখন তিনি সংসদ নির্বাচনে অযোগ্য হবেন।
তিনি বলেন, এর চেয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল সাজা স্থগিত হয় কি না? দণ্ডিত ব্যক্তিরা আপিলে বিচারাধীন থাকা অবস্থায় ফৌজদারি কার্যবিধির ৪২৬ ও ৫৬১ (ক) ধারা অনুয়ায়ী একটি আবেদন করেছিলেন। সেখানে হাইকোর্ট বলেছেন— সাজা কখনও স্থগিত হয় না। অল্প কিছুদিনের জন্য স্থগিত হতে পারে। কিন্তু আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত দণ্ড বহাল থাকবে। রায়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন হাইকোর্ট।
এর আগে দুর্নীতির দায়ে বিচারিক আদালতের দেয়া দণ্ড ও সাজা স্থগিত চেয়ে আমান উল্লাহ আমানসহ বিএনপির পাঁচ নেতার আবেদন খারিজ করে ২০১৮ সালের ২৭ নভেম্বর রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।
রায়ে বিচারিক (অধস্তন) আদালতে দুই বছরের বেশি সাজাপ্রাপ্ত হলে আপিলে বিচারাধীন অবস্থায় কোনো ব্যক্তি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে না বলে আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। অবশ্য দণ্ড স্থগিত হলে নির্বাচনে অংশগ্রহণে কোনো বাধা থাকবে না বলে জানান আদালত।
আদালতে সাবেক প্রতিমন্ত্রী আমান উল্লাহ আমানের পক্ষে আইনজীবী জাহিদুল ইসলাম, ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেনের পক্ষে ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ, আহসানুল করীম ও খায়রুল আলম চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া ওয়াদুদ ভূঁইয়া ও আব্দুল ওহাবের পক্ষে ব্যারিস্টার রফিক-উল-হক ও ব্যারিস্টার একেএম ফখরুল ইসলাম এবং মশিউর রহমানের পক্ষে ব্যারিস্টার আমিনুল হক ও ব্যারিস্টার মাহবুব শফিক উপস্থিত ছিলেন।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. খুরশিদ আলম খান এবং রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক উপস্থিত ছিলেন।
রায়ের পর দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেছিলেন, ‘পাঁচজনের আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ ক্ষেত্রে আদালত সুনির্দিষ্টভাবে বলেছেন, সংবিধানের ৬৬(২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ফৌজদারি মামলায় দুই বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত হলে আপিল বিভাগে তা স্থগিত না হওয়া পর্যন্ত কেউ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। এ ক্ষেত্রে ফৌজদারি কার্যবিধিতে যা কিছুই থাকুক না কেন, সংবিধানই এখানে প্রাধান্য পাবে।’
বিএনপির পাঁচ নেতার দুর্নীতির পৃথক মামলায় বিচারিক আদালতের দেয়া দণ্ড ও সাজা স্থগিত চেয়ে করা পৃথক আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ আদেশের পাশাপাশি কিছু অভিমত দেন আদালত।
আদেশের পর আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেছিলেন, দুই বছরের বেশি সাজা হলে সাজা মাথায় নিয়ে কেউ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না বলে আদালত অভিমত দিয়েছেন। সাজার রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিল বিচারাধীন, আবেদনকারী জামিনে আছেন, জরিমানার আদেশ স্থগিত হয়েছে -এসব দণ্ড বা সাজা স্থগিতের যুক্তি হতে পারে না বলে জানিয়েছেন আদালত। সংবিধান সর্বোচ্চ আইন। দণ্ডিত সাজাপ্রাপ্তদের নির্বাচন করার বিষয়ে সংবিধানের ৬৬ (২)(ঘ) অনুচ্ছেদে বাধা আছে।
বিএনপি নেতা এ জেড এম জাহিদ হোসেনের আইনজীবী খায়রুল আলম চৌধুরী বলেছিলেন, ফৌজদারি কার্যবিধির ৪২৬ ধারা অনুসারে দণ্ড স্থগিতের সুযোগ নেই বলেছেন আদালত। দণ্ড ও সাজার রায়ের বিরুদ্ধে আপিল আদালতে কোনো অভিযুক্ত ব্যক্তির করা আপিল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় ওই ব্যক্তি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না বলেও বলেছেন আদালত।