হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাটে অন্তঃসত্ত্বা এক গৃহবধূকে হত্যার দায়ে পাঁচজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে অন্যতম হলেন নিহত গৃহবধূর ননদ হোছনা বেগম (২৫)।
আদালতে যার কোলে এক দুধের শিশুকে দেখা গেছে। আর রায়ের পর মায়ের সঙ্গে কারাগারে যেতে হয়েছে দেড় বছরের সেই শিশুকেও। এছাড়া নেই কোনো উপায়। নিষ্পাপ এই শিশুটি যেহেতু মায়ের বুকের দুধ পান করে; তাই আদালত তাকেও মায়ের সঙ্গে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
শিশুটির নাম মাদিহা আক্তার। সাদেকপুর গ্রামের মিজান মিয়া-হোছনা দম্পতির মেয়ে সে। আদালত প্রাঙ্গণে দেখা গেছে, মাকে দুই হাতে জড়িয়ে ধরে ফ্যালফ্যালিয়ে এদিক-ওদিক তাকাচ্ছিল মাদিহা।
আজ বৃহস্পতিবার (২৬ অক্টোবর) দুপুরে হবিগঞ্জ আদালত প্রাঙ্গণের এ দৃশ্য প্রত্যক্ষদর্শীদের হৃদয়ে দাগ কেটেছে।
অনেকের অভিমত, দুধের শিশুটি কী বুঝতে পেরেছে মায়ের সঙ্গে চার দেয়ালে বন্দি জীবনে যাচ্ছে সে? না বুঝলেই বা কী হবে— এ যেন চরম বাস্তবতা।
যৌতুকের জন্য আয়েশা আক্তার নামে অন্তঃসত্ত্বা এক গৃহবধূকে হত্যার দায়ে তার স্বামী, শাশুড়ি, দেবর ও ননদসহ পাঁচজনকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন আদালত।
আদালতের পেশকার মো. জিয়াউল হক বলেন, শিশুটি যেহেতু মায়ের বুকের দুধ পান করে। তাই আইন অনুযায়ী বিচারক তাকেও মায়ের সঙ্গে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন।
বেলা আড়াইটার দিকে স্ত্রী ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অন্যান্য আসামির জন্য খাবার জোগাড় করছিলেন কারাগারে শিশু মাদিহার বাবা মিজান।
তার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলে ‘খাবার দেওয়ার নির্দিষ্ট সময় চলে যাচ্ছে, এখন নয়; আমার স্ত্রী নির্দোষ, আমি আমার স্ত্রী ও সন্তানের মুক্তি চাই’ বলে দ্রুত চলে যান তিনি।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালে চুনারুঘাট উপজেলার পঞ্চাশ গ্রামের আব্দুস সাত্তারের মেয়ে সাত মাসের অন্তঃসত্তা আয়েশা আক্তারকে যৌতুকের জন্য নির্যাতন করে হত্যা করা হয়। নিহতের বাবা আব্দুস সাত্তার ওই বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর চুনারুঘাট থানায় মামলা দায়ের করেন।
পরে নিহতের স্বামী রাসেল মিয়া হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। ২০১৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি আদালতে প্রতিবেদন দেয় পুলিশ। ১২ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে বৃহস্পতিবার হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে হবিগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক মো. জাহিদুল হক এ রায় দেন।
দণ্ডাদেশপ্রাপ্তরা হলেন- নিহতের স্বামী জেলার চুনারুঘাটের সাদেকপুর গ্রামের রাসেল মিয়া (২৬), শাশুড়ি তাহেরা বেগম (৫৫), দেবর কাউছার মিয়া (৩৫), ননদ হোছনা বেগম (২৫) ও রোজি বেগম (৩২)। তাদের মধ্যে দেবর কাউছার মিয়া পলাতক।
আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট আবুল মনসুর চৌধুরী জানান, এ রায়ের মধ্য দিয়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা পেয়েছে।
তবে আসামিপক্ষের আইনজীবী এমএ মজিদ এ রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তারা উচ্চ আদালতে এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন বলে জানিয়েছেন।