কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে পূর্ণাঙ্গ আইন প্রণয়নের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছে ‘জেন্ডার প্লাটফর্ম বাংলাদেশ’। তারা বলছে, কর্মপরিবেশ উন্নয়ন এবং নারীশ্রমিকের শ্রম অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য দ্রুত আইন প্রণয়ন খুবই জরুরী।
গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি জানানো হয়েছে। কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে পূর্ণাঙ্গ আইন প্রণয়নের দাবিতে ২০১৭ সাল থেকে কাজ করে যাচ্ছে ‘জেন্ডার প্লাটফর্ম বাংলাদেশ’।
২০১৮ সালে জেন্ডার প্লাটফর্ম কর্তৃক আইনের খসড়া তৈরি করে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে দাখিল করার পর বিভিন্ন সময়ে প্রতিশ্রুতি দেওয়া স্বত্ত্বেও এখন পর্যন্ত কাঙ্খিত আইন আলোর মুখ দেখেনি। বরং ২০২২ সালের শ্রম বিধিমালা সংশোধনীতে খুব অপ্রত্যাশিতভাবে বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬-এর ৩৩২ বিধিতে বর্ণিত ‘মহিলাদের প্রতি আচরণ’ সংক্রান্ত ধারার সাথে যৌন হয়রানির সংজ্ঞা ও কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি গঠনের ব্যাপারে কিছু অসম্পূর্ণ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যা ২০০৯ সালে মহামান্য হাইকোর্ট প্রদত্ত নির্দেশনার সাথে সাংঘর্ষিক। বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালার বর্ণিত অসম্পূর্ন বিধি বিধানের কারনে যে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে তার ফলশ্রুতিতে কর্মক্ষেত্রে ভুক্তভোগীরা প্রতিনিয়ত ন্যায়বিচার প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় এই যে, যৌন হয়রানিমুক্ত শিক্ষা ও কর্মপরিবেশের জন্য ২০০৯ সালে প্রদত্ত মহামান্য হাইকোর্টের নিদের্শনা এত বছরেও যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে না। অপরদিকে, উক্ত নীতিমালা প্রণয়নের পর যত দ্রুত সম্ভব আইন প্রণয়নের নির্দেশনা থাকার পরও এই ১৪ বছরেও তার বাস্তব প্রতিফলন হয়নি। উপরন্ত যৌন হয়রানির অভিযোগে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ সমাধান নিশ্চিতকরণে অভিযোগ কমিটিতে প্রতিষ্ঠানের বাহিরের দুইজন অভিজ্ঞ সদস্য থাকার বিষয়ে হাইকোর্ট প্রদত্ত বিধানটিকে ২০২২ সালের শ্রম বিধিমালাতে সুকৌশলে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে- যার ফলে অধিকাংশ অভিযোগ কমিটির নিরপেক্ষতা ক্ষুন্ন হওয়ার কারনে ভুক্তভোগীদের ক্ষতিগ্রস্ত হবার আশংকা আরও বেড়েছে। এছাড়াও ২০২২ সালের শ্রম বিধিমালা সংশোধনীতে নারীশ্রমিকদের প্রসূতি কল্যাণ সুবিধার পরিমানও হ্রাস করা হয়েছে।
উল্লেখ্য যে, কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে যাওয়ার পরেও আমরা শ্রম আইন, ২০০৬ এর সংশোধনী ২০২৩ এ কোথাও এ বিষয়ে কোনো বিধি-বিধান বা নির্দেশনা দেখতে পাইনি যা আমাদের চরমভাবে হতাশ করেছে।
গত ২৯ অক্টোবর, ২০২৩-এ শ্রম আইন, ২০০৬ -এর সংশোধনীর আলোকে বাংলাদেশ জেন্ডার প্লাটফর্ম-এর পক্ষ থেকে আমরা সরকারকে ধন্যবাদ সাধুবাদ জানাই যে, আইনের সর্বত্র উল্লিখিত মহিলা’ শব্দের পরিবর্তে নারী’ শব্দটি প্রতিস্থাপিত করা হয়েছে যা নারীর মর্যাদাকে অনেকাংশে বাড়িয়ে দিয়েছে। এই সংশোধনীর ৩৪৫(ক) ধারায় জাতি, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি নির্বিশেষে সকল শ্রমিকদের প্রতি বৈষম্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
তবে শ্রম আইন এ সংযোজন কর্মক্ষেত্রে জেন্ডার সমতাকে প্রতিষ্ঠিত করতে ও মানুষে-মানুষে ভেদাভেদ দূর করতে সহায়তা করবে বলে আশা করা হলেও এ নির্দেশনা সমূহের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া সংক্রান্তে কোন সুনির্দিষ্ট বিধি বিধান সংযোজন করা হয় নাই। বিধায় ২০২৩ সালের সংশোধিত আইনে সংযোজিত এই ইতিবাচক বিষয়টি কার্যকর হওয়ার ক্ষেত্রে অনিশ্চিয়তা থেকেই যাবে।
অন্যদিকে একই সংশোধনীতে নারী শ্রমিকদের প্রসূতি কল্যাণ ছুটির পরিমাণ ১১২ দিন থেকে বাড়িয়ে ১২০ দিন করা হয়েছে। এছাড়াও, প্রসূতি কল্যাণ ছুটি সন্তান জন্মগ্রহনের পূর্বে ৮ (আট) সপ্তাহ ও পরে ৮ (আট) সপ্তাহ গ্রহনের বাধ্যবাধকতা অপসারন করা হয়েছে। সরকারের এরূপ সিদ্ধান্ত খুবই ইতিবাচক বটে।
এমতাবস্থায়, জেন্ডার প্লাটফর্ম বাংলাদেশ’-এর পক্ষ থেকে সকলের প্রতি আহ্বান এবং জোর দাবি জানাচ্ছি যে, দেশের ভাব-মূর্তি অক্ষুন্ন রাখা ও অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখার জন্য কর্মক্ষেত্রকে যৌন হয়রানি মুক্ত এবং শ্রমিকের অধিকার সমুন্নত রাখতে হবে। যেহেতু, শ্রম আইন, ২০০৬ এর সংশোধনী ২০২৩ এ আলাদা এবং পূর্ণাজ্ঞ ভাবে যৌন হয়রানি বা এর প্রতিরোধে কোন বিস্তারিত বিধিবিধান সংযুক্ত করা হয়নি, তাই অভিযোগ কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে হাইকোর্টের রায়ের পরিপন্থী ২০২২ সালের শ্রম বিধিমালার বিধান সমূহ নহে, বরং ২০০৯ সালে হাইকোর্ট প্রদত্ত নির্দেশনা এক্ষেত্রে প্রাধান্য পাবে বলে আমরা মনে করি।
এমতাবস্থায়, আমাদের দাবি সরকার এ বিষযে অস্পষ্টতা দূর করবার জন্য অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে উদ্যোগ গ্রহণ করবেন। এছাড়াও, সরকার যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কর্মক্ষেত্রে যৌন হযরানী প্রতিরোধে পূর্ণাঙ্গ আইন প্রনয়নের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে আমরা এ দাবী পুনর্ব্যক্ত করছি, যা কর্মপরিবেশ উন্নয়ন এবং নারীশ্রমিকের শ্রম অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য খুবই জরুরী।