কক্সবাজার জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসীতে ভার্চুয়ালি প্রথম সাক্ষ্য গ্রহণ

কক্সবাজার জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসীতে ভার্চুয়ালি প্রথম সাক্ষ্য গ্রহণ

মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী : কক্সবাজার জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসীতে একটি মাদক মামলায় তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে অনলাইনে ভার্চুয়ালি প্রথম সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। অনলাইনে সংযুক্ত হয়ে বর্ণিত মামলায় ভার্চুয়ালি সাক্ষ্য প্রদান করেন মামলার বাদী এসআই মোঃ আরিফ হোসেন। যিনি বর্তমানে সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানার সাব ইন্সপেক্টর পদে কর্মরত আছেন।

কক্সবাজারের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-১ এর বিচারক শ্রীজ্ঞান তঞ্চঙ্গাঁ সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের ২০২৩ সালের ২০ আগস্টের ৪৯০ নম্বর আদেশের বিধান মতে রোববার (২৬ নভেম্বর) তাঁর আদালতে ভার্চুয়ালি এ সাক্ষ্য গ্রহণ করেন।

একই আদালতের বেঞ্চ সহকারী মোহাম্মদ শফি ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ২১ মে বিকেল সাড়ে চারটার দিকে রামু থানার তৎকালীন এএসআই মোঃ আরিফ হোসেন ডিউটিরত অবস্থায় কক্সবাজারের রামু-মরিচ্যা সড়কে চেকপোস্ট বসিয়ে একটি নম্বরবিহীন সিএনজি আটক করে। পরে সিএনজি’র যাত্রী আবদুর নুরের কাছ থেকে ১৪০০ পিচ ইয়াবা টেবলেট উদ্ধার করা হয়।

এ ঘটনায় এএসআই মোঃ আরিফ হোসেন বাদী হয়ে আবদুর নুরকে আসামী করে রামু থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। যার জিআর মামলা নম্বর : ১৫২/২০১৯ ইংরেজি (রামু)।

এ মামলায় সাক্ষ্য দিতে আসার জন্য কক্সবাজারের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত নম্বর-১ থেকে মামলার বাদী বর্তমানে সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানার এসআই মোঃ আরিফ হোসেনের কাছে সমন প্রেরণ করা হয়।

সমন পেয়ে এসআই মোঃ আরিফ হোসেন জরুরী সরকারি কাজের ব্যস্ততা, সময়ক্ষেপণ, অর্থের অপচয় রোধ, মামলার আধিক্য হ্রাসকরণের জন্য সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের ২০২৩ সালের ২০ আগস্টের ৪৯০ নম্বর আদেশের বিধান মতে অনলাইনে সংযুক্ত হয়ে ভার্চুয়ালি সাক্ষ্য দিতে আদালতে আবেদন করেন।

আরও পড়ুনকক্সবাজার জেলা জজ আদালতে ভার্চুয়ালি প্রথম সাক্ষ্য গ্রহণ

বিজ্ঞ বিচারক গত ১১ সেপ্টেম্বর আবেদনটি মঞ্জুর করে এসআই মোঃ আরিফ হোসেনকে সুনামগঞ্জ থেকে অনলাইনে সংযুক্ত হয়ে ভার্চুয়ালি সাক্ষ্য দিতে আদেশ দেন। আদেশে একইসাথে সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ ইখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরীকে অনলাইনে সাক্ষ্য ও অন্যান্য কার্যক্রম চলাকালে সমন্বয়কারী হিসাবে উপস্থিত থাকতে নির্দেশনা দেন।

বেঞ্চ সহকারী মোহাম্মদ শফি ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমকে আরো জানান, আদালতের আদেশ মতে, রোববার (২৬ নভেম্বর) এসআই মোঃ আরিফ হোসেন সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানা থেকে অনলাইনে সংযুক্ত হয়ে বর্ণিত মামলায় ভার্চুয়ালি সাক্ষ্য প্রদান করেন।

রাষ্ট্রপক্ষে একই আদালতের এপিপি রফিক উদ্দিন চৌধুরী অনলাইনে সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানার এসআই মোঃ আরিফ হোসেন এর জবানবন্দী নেন এবং সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শ্রীজ্ঞান তঞ্চঙ্গাঁ আইনানুযায়ী তাঁর সাক্ষ্য রেকর্ড করেন। কিন্তু মামলার একমাত্র আসামী আবদুর নুর পলাতক থাকায় সাক্ষ্য প্রদানকারী সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানার এসআই মোঃ আরিফ হোসেনকে জেরা করা সম্ভব হয়নি।

কক্সবাজার চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ আশেক ইলাহী শাহজাহান নুরী ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমকে জানান, সুনামগঞ্জ এসআই মোঃ আরিফ হোসেন এর ভার্চুয়ালি সাক্ষ্য প্রদান ছিলো-কক্সবাজার জেলা জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসীর সর্বপ্রথম ভার্চুয়ালী সাক্ষ্য গ্রহণ। এ সাক্ষ্য গ্রহণের মাধ্যমে কক্সবাজার জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসী সাক্ষ্য গ্রহণে ভার্চুয়াল জগতে প্রবেশ করলো।

কক্সবাজার জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসী সর্বপ্রথম ভার্চুয়ালি সাক্ষ্য গ্রহণ বিষয়ে কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ তারেক ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমকে বলেন, অনলাইনে সর্বপ্রথম সাক্ষ্য গ্রহণ কক্সবাজার জেলা জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসীর জন্য একটা রেকর্ড। এটা একদিকে, কক্সবাজার জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসীর বিচার কার্যক্রমের ইতিহাসে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। অপরদিকে, কক্সবাজার জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসীর বিচার প্রক্রিয়াকে আরো আধুনিক ও গতিশীল করবে বলে অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ তারেক আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

সর্বপ্রথম ভার্চুয়ালি সাক্ষ্য গ্রহণের বিষয়টিকে কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট ইকবালুর রশিদ আমিন সোহেল স্মার্ট যুগের স্মার্ট কাজ হিসাবে উল্লেখ করে ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমকে বলেন, অনলাইনে সাক্ষ্য গ্রহণ কক্সবাজার বিচার বিভাগকে সমৃদ্ধ করবে। এতে বিচার বিভাগের প্রতি বিচারপ্রার্থীদের আস্থা ও বিশ্বাস নিঃসন্দেহে আরো অনেক বৃদ্ধি পাবে।

ভার্চুয়ালী সাক্ষ্য গ্রহণ করা বিষয়ে কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ তাওহীদুল আনোয়ার ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমকে বলেন, অনলাইনে ভার্চুয়াল সাক্ষ্য গ্রহণের ফলে মামলার চলমান জট কিছুটা হলেও হ্রাস পাবে।

এছাড়া, দুর দুরন্ত থেকে মামলার সাক্ষীদের স্বশরীরে আদালতে এসে সাক্ষ্য দেওয়ার বিড়ম্বনা আর পোহাতে হবেনা। বিচারপ্রার্থীরাও অপেক্ষাকৃত দ্রুততম সময়ে বিচারিক সেবা পাবে বলে আইনজীবী নেতা অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ তাওহীদুল আনোয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।