বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের আইনজীবী তালিকাভুক্তির লিখিত পরীক্ষা ২৩ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। প্রার্থীদের প্রস্তুতির সুবিধার জন্য লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতির পরামর্শ প্রকাশ করা হচ্ছে। আজ দ্বিতীয় পর্বে সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন–১৮৭৭ বিষয়ে প্রস্তুতির পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা জজ কোর্টের আইনজীবী রিয়াজুর রহমান।
সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন-১৮৭৭ বিষয়ে ১৫ নম্বরের একটি প্রশ্ন আসে। অপেক্ষাকৃত ছোট আইন হওয়ায় সব প্রার্থী এ বিষয়ে বেশি নম্বর আশা করেন। সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন–১৮৭৭ কয়েকটি ভাগে ভাগ করে পড়তে পারেন। যেমন ধারা-৪ থেকে ১১ পর্যন্ত দখল ও পুনরুদ্ধার এবং প্রাথমিক বিষয়াবলি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
এ ধারাগুলো থেকেও প্রশ্ন আসতে পারে। তাই এ ভাগের ধারা, ধারাসংশ্লিষ্ট ব্যাখ্যা, উদাহরণ ও ব্যতিক্রমগুলো পড়তে হবে। একই সঙ্গে প্রতিটি ধারাকেন্দ্রিক আগের বছরের প্রশ্নগুলো ভালো করে পড়তে হবে। সাধারণত ধারা-৮, ৯, ১০, ১১ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ৮ ও ৯ ধারা থেকে প্রায় প্রতিবছরই প্রশ্ন থাকে।
চুক্তির সুনির্দিষ্ট কার্যসম্পাদন
সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে চুক্তির সুনির্দিষ্ট কার্যসম্পাদন। এ অংশ বিস্তারিত পড়তে হবে। এখানে কয়েকটি ধারা রয়েছে–১২, ২১, ২১ক, ২২, ২৩, ২৪, ২৫, ২৬, ২৭ক ও ২৮। এসব ধারা থেকে সমস্যামূলক প্রশ্ন বেশি আসে, এমনকি ড্রাফটিং বা মুসাবিদাও আসতে পারে। কখনো কখনো ফ্ল্যাট প্রশ্নও হয়। ৩য়, ৫ম, ১০ম ও ১১তম জুডিশিয়ারি পরীক্ষায় এ ধারাগুলো থেকে প্রশ্ন এসেছে সহজ বাক্যে। আবার ষষ্ঠ জুডিশিয়ারিতে একই বিষয়ে প্রশ্ন এসেছে সমস্যামূলকভাবে। তবে আইনজীবী তালিকাভুক্তি পরীক্ষায় একটি প্রশ্নের হ্যান্ডেলে একাধিক প্রশ্ন থাকবে। এ কারণে সরাসরি রচনামূলক প্রশ্নের পাশাপাশি সমস্যামূলক প্রশ্নও থাকবে।
২০২০ সালের বার কাউন্সিল পরীক্ষায় প্রশ্ন আসে—ক) সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন, ১৮৭৭–এর অধীন মঞ্জুরযোগ্য বিভিন্ন প্রকার সুনির্দিষ্ট প্রতিকার সংক্ষেপে বর্ণনা করুন। স্থাবর সম্পত্তি বিক্রির চুক্তি সুনির্দিষ্টভাবে বলবৎ করার প্রতিকার পেতে হলে কোন কোন শর্ত পূরণ করতে হবে? এ ধরনের মোকদ্দমায় কী কী সুনির্দিষ্ট প্রতিকার বিকল্প হিসেবে প্রার্থনা করা যায়?
আরও পড়ুন: দেওয়ানি কার্যবিধি আইনের প্রস্তুতি নেবেন যেভাবে
খ) ঢ ও ণ তিন মাসের মধ্যে একটি ব্যবসা করার লক্ষ্যে অংশীদারি চুক্তিতে আবদ্ধ হয়। তিন মাস অতিক্রান্ত হওয়ার আগেই ণ অংশীদার হতে অনাগ্রহ প্রকাশ করে। চুক্তিটিতে অংশীদারত্বের মেয়াদকাল সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ ছিল না। ঢ–এর প্রার্থনার পরিপ্রেক্ষিতে ণ–এর বিরুদ্ধে চুক্তিটি সুনির্দিষ্টভাবে বলবৎ করা যাবে কি? যুক্তিসহ উত্তর দিন।
অর্থাৎ একই প্রশ্নের মধ্যে রচনামূলক ও সমস্যামূলক প্রশ্ন আসে। যাঁরা ধারাভিত্তিক উভয় পদ্ধতির প্রশ্নের ওপর বেশি বেশি অনুশীলন করবেন, মূল পরীক্ষায় শুধু তাঁরাই ভালো করবেন। অন্যথায় পরীক্ষার হলে প্রশ্নই বুঝবেন না, তালগোল পাকিয়ে বিপদ বাড়াবেন, সঙ্গে সময়ও হারাবেন।
দলিল সংশোধনী, চুক্তি রদ ও দলিল বাতিল শুধু পরীক্ষার্থীদের জন্যই নয়, বরং যাঁরা আইনজীবী হিসেবে কাজ করেন, তাঁদেরও এ অংশ প্রয়োজন পড়ে। কারণ, দলিল সংশোধনী ও দলিল বাতিলের মামলা নিয়মিত হয়। সুতরাং এই ধারাগুলো পরীক্ষার পাশাপাশি পেশাগত জীবনেও লাগবে। এ অংশে ধারা–৩১ থেকে ধারা–৪১ পর্যন্ত ভালো করে পড়তে হবে।
যেমন দলিল বাতিল বলতে কী বোঝেন? কে এবং কী কী কারণে দলিল বাতিল চাইতে পারেন? রেজিস্ট্রি করা একটি দলিলের কোনো পক্ষ যদি দলিল বাতিল করতে চায়, তাহলে কোন সুনির্দিষ্ট আইনের আওতায় তাকে তা করতে হবে? সেই পক্ষ কি শুধু দলিলটি ভুয়া এবং তার ওপর বাধ্যবাধকতা নয়—এই মর্মে মামলা করতে পারে?
এ ছাড়া এই অংশে আগের বছরে যত প্রশ্ন এসেছে, সব কটি একবার হলেও দেখতে হবে। আমি বারবার একটি কথা পরিষ্কার করে বলার চেষ্টা করছি, প্রশ্ন বুঝতে না পারলে উত্তর ভালো লেখা যাবে না। সুতরাং যত বেশি সম্ভব বিগত বছরের প্রশ্নগুলো পড়তে হবে। অনেক সময় দেখা যাবে, উত্তরটা ঠিকই জানা, শুধু প্রশ্ন না বোঝার কারণে উত্তর লেখা সম্ভব হয়নি। দলিল বাতিলের অংশ থেকে একটি মুসাবিদা অনুশীলন করে রাখতে পারেন। অনেক সময় পরীক্ষায় মুসাবিদা আসতে পারে।
ঘোষণামূলক মামলা ও নিষেধাজ্ঞা
ঘোষণামূলক মামলা অংশ থেকে ৪২ ও ৪৩ ধারা দুটি পড়তে হবে। একই সঙ্গে ঘোষণামূলক ডিক্রি কাকে বলে? কোন কোন মামলায় এবং কোন কোন পরিস্থিতিতে ঘোষণামূলক ডিক্রি দেওয়া যেতে পারে? এর ব্যতিক্রম কী কী?—প্রশ্নগুলো বিস্তারিত পড়তে হবে।
নিষেধাজ্ঞা অংশে ধারা–৫২ থেকে ৫৭ পর্যন্ত পড়তে হবে। এ ছাড়া অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা, স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা ও বাধ্যতামূলক নিষেধাজ্ঞা কেন, কখন ও কীভাবে জারি করা হয়—জানতে হবে। বিষয়টি অতি গুরুত্বপূর্ণ। তাই এখান থেকে বিশ্লেষণ ও রচনামূলক প্রশ্ন আসতে পারে। সঙ্গে সমস্যামূলক প্রশ্নের উত্তর লেখার অনুশীলন করতে হবে। এ অংশের জন্য ধারা-৫, ৭, ৮, ৯, ১২, ১৯, ২১, ২১ক, ২২, ২৩, ২৭, ২৮, ৩১, ৩৫, ৩৯, ৪২, ৪৪, ৫২, ৫৪, ৫৫, ৫৬, ৫৭ পড়তে হবে।