গত নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে আমি “জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট নং — ১” – এ মামলা পরিচালনা করতে যাই এবং এজলাসে অবস্থান করছিলাম। আদালত কার্যক্রম শুরু হওয়ার ঠিক ১০/ ১৫ মিনিট পূর্বে জনৈক আইনজীবী একটি হাজিরা নিয়ে পেশকর কাবেরী রানী পাইক ও এম এল এস এস নাজমা বেগম এর নিকট যান এবং হাজিরার কপির সাথে (১০) দশটি টাকাও দেন।
তখন আমি জনৈক আইনজীবীর কাছে জানতে চাই, এই (দশ) ১০ টাকা দিলেন কেন? তিনি প্রতিউত্তরে বললেন, টাকা না দিলে আচরণ ভালো করেন না এমনকি অনেক সময় হাজিরা সরিয়ে ফেলেন। আবার অনেক সময় সমস্ত হাজিরার নিচেও রেখে দেন।
তাৎক্ষণিক আমি পেশকর কাবেরী রানী পাইক ও নাজমা বেগমকে সরাসরি বলি, এই ১০ (দশটি) টাকা নিলেন কেন? এমনকি টাকাটা তাদের সামনে রাখা। আমি বললাম, সরকারি বেতন ভাতা উত্তোলন করেন না? মাত্র ১০টি টাকা তারও লোভ সামলাতে পারেন না? নিজেদেরকে আর কত নিচে নামাবেন? আমার প্রশ্নে, তারা দুজনই নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেন।
একপর্যায়ে যখন আদালতের কার্যক্রম শুরু হলো, তার কিছুক্ষণ পর আমি বিজ্ঞ আদালতকে বিষয়টি সরাসরি জানালাম। বিজ্ঞ আদালত আমাকে বললেন, এভাবে আমি আপনার কথা শুনবো না। “আপনি লিখিত দেন”। আমি নির্দ্বিধায় অকোপটে বিজ্ঞ আদালতের কাছে বললাম, আমি লিখিত দেব। কিন্তু যেহেতু আমি আমার অভিযোগ আদালতে সরাসরি উপস্থাপন করেছি, সেক্ষেত্রে বিজ্ঞ আদালত তাঁর জুডিসিয়াসি মনোভাব প্রয়োগ করে সামান্যতম হলেও ব্যবস্থা নিতে পারতেন। তাই বলতে দ্বিধা নেই,
“আমি যে দেখেছি প্রতিকারহীন শক্তের অপরাধে
বিচারের বাণী নিরবে নিভৃত্বে কাঁদে।”
যার পরিপ্রেক্ষিতে, আমি গত ইংরেজি ১২/১১/২০২৩ ইং তারিখে রেজিস্ট্রি ডাকযোগ “বিজ্ঞ জেলা ও দায়রা জজ মহোদয় এবং বিজ্ঞ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট নং –১” বরাবর লিখিত দরখাস্ত প্রেরণ করি।
পরবর্তীতে পোস্ট পিওন গোবিন্দ গত ইংরেজি ১৫-১১-২০২৩ তারিখে চিঠি বিলি করার জন্য সংশ্লিষ্ট আদালতের পেশকর কাবেরী রানী পাইকের নিকট দিলে, তখন উক্ত কাবেরী রানী পাইক বলেন যে, চিঠি খানি খুলে দেখে তারপর রিসিভ করবেন। কিন্তু বাংলাদেশ ডাক বিভাগের বিধি মোতাবেক চিঠি খুলে বিলি করা আইনের আওতায় না থাকায় ডাক পিয়ন গোবিন্দ “চিঠি বিলি করা গেল না” মন্তব্যে চিঠিটি আমার নিকট ফেরত দেন।
যেহেতু, যে যে আদালতের পেশকর, এমএসএলএল ও অন্যান্যরা আছেন তারা প্রত্যেকেই স্ব-স্ব আদালতের বিজ্ঞ বিচারকের অধীনস্ত। তাহলে তারা কি নির্দেশনা পেল যে ডাকযোগে প্রেরিত রেজিস্ট্রি চিঠি পড়ে রিসিভ করবেন? এই হচ্ছে, “পেশকর ও পিয়নদের শিক্ষার দৌরাত্ম্য।”
আমার ভাবতে অবাক লাগছে, এই পেশকর কাবেরী রানী পাইকের এত অনিয়ম ও রেজিস্ট্রি চিঠি গ্রহণ না করার শক্তি কোথায়?
কিন্তু দুঃখের বিষয় আমি অদ্যাবধি কোন কিছুই জানতে পারি নাই বা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এই দুই কর্মচারীর বিরুদ্ধে কি পদক্ষেপ নিয়েছেন সেটাও জানা সম্ভব হয় নাই। তাহলে দণ্ডবিধির ১৬১ ধারা প্রয়োগের সার্থকতাই বা কোথায় থাকলো?
বাংলাদেশ সংবিধানের ৩৯। (১) (২) ( ক) দফা মোতাবেক আমি আমার স্বাধীন মতামত প্রকাশ করলাম। এই ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতি চিরতরে নিপাত যাক। জনস্বার্থে এমনই প্রত্যাশা। পাশাপাশি কর্তৃপক্ষের সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
অ্যাডভোকেট নাহিদ সুলতানা: সহকারী সরকারি কৌঁসুলি, জজ কোর্ট, খুলনা এবং সভাপতি, বৃহত্তর খুলনা আইনজীবী সাংবাদিক কাউন্সিল (কোর্ট আঙিনায় অনিয়ম ও দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি)।