ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির (পল্লব) ১৯৭৭ সালে ফরিদপুর জেলার চরভদ্রাসন উপজেলার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চরভদ্রাসন পাইলট হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক ও চরভদ্রাসন সরকারী কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় স্টারমার্ক্স সহ ১ম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। এরপর তিনি প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালের আইন বিভাগের ২৪তম ব্যাচের শিক্ষার্থী হুমায়ন কবির ২০০০ সালে এলএলবি (সম্মান) এবং ২০০১ সালে এলএলএম (স্নাতকোত্তর) ডিগ্রি অর্জন করেন। পরবর্তীতে যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন থেকে ২০০৭ সালে পুনরায় এলএলবি (সম্মান) ডিগ্রি লাভ করেন। ২০০৮ সালে স্বনামধন্য সিটি ইউনিভার্সিটি, লন্ডন থেকে বার ভোকেশনাল কোর্স সম্পন্ন করে অনারেবল সোসাইটি অব লিংকনস ইন থেকে বার এট ল’ ডিগ্রি অর্জন করেন।
হুমায়ন কবির ২০০৩ সালে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়ে এশিয়ার বৃহত্তম বার ঢাকা আইনজীবী সমিতিতে সদস্যপদ লাভ করেন এবং নিয়মিত প্র্যাকটিস শুরু করেন। ২০০৫ সালে হাইকোর্ট পারমিশনের লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও লন্ডনে চলে যাওয়ায় মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা হয়নি।
ইংল্যান্ডে বার এট ল’ ডিগ্রি অর্জনের পর যুক্তরাজ্যে আইন পেশায় নিযুক্ত হয়ে বিভিন্ন ট্রাইব্যুনাল ও কাউন্টি কোর্টে প্রায় তিন বছর নিয়মিত দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু লন্ডনের তৎকালীন বিভিন্ন সুযোগ পরিত্যাগ করে দেশের আইন পেশার টানে ২০১১ সালে ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে আসেন। এরপর ২০১৫ সালে হাইকোর্ট বিভাগে আইন পেশা পরিচালনায় অনুমতিপ্রাপ্ত হন।
বর্তমানে নিজস্ব ল’ ফার্ম ‘এইচ কবির এন্ড এসোসিয়েটস’ এর মাধ্যমে আইন পেশা পরিচালনা করে মানুষের সেবা করার প্রত্যয় চালিয়ে যাচ্ছেন। পাশপাশি মানবাধিকার সংগঠন ল’ এন্ড লাইফ ফাউন্ডেশন ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।
আসন্ন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০২৪–২০২৫ বর্ষের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ মনোনীত প্যানেলে ‘সহ-সম্পাদক’ পদপ্রার্থী তিনি। সম্প্রতি তাঁর মুখোমুখি হয়েছিল ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকম। একান্ত সাক্ষাৎকারে এই আইনজীবী জানিয়েছেন নির্বাচিত হলে আইনজীবী ও সমিতির কল্যাণে তাঁর বিশেষ পরিকল্পনার কথা।
ল’ইয়ার্স ক্লাব: বার নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার প্রয়োজনীয়তা কেন অনুভব করলেন?
ব্যারিস্টার হুমায়ন কবির: প্রথিতযশা আইনজীবীদের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা আমাদের প্রাণপ্রিয় বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি, যার রয়েছে গৌরবময় ইতিহাস এবং সুহমান ঐতিহ্য। আমাদের প্রাণের এই সমিতির মর্যাদা সমুন্নত রাখা এবং যুগের সাথে তাল মিলিয়ে আরও উৎকর্ষ সাধন করা এখন সময়ের দাবী। সময়ের পরিক্রমায় আমি অত্র সমিতির আসন্ন নির্বাচনে ‘সহ-সম্মাদক’ পদে একজন প্রার্থী হয়েছি। যাতে করে নির্বাচিত হলে আইনজীবী ও সমিতির কল্যাণে অবদান রাখতে পারি।
ল’ইয়ার্স ক্লাব: আইন পেশায় আপনার উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ সম্পর্কে কিছু বলুন …
ব্যারিস্টার হুমায়ন কবির: আমি একজন আইনি সেবক। আমাদের পবিত্র সংবিধানের ২১ অনুচ্ছেদের মর্মমতে আইনজীবী, রাষ্ট্র ও সাধারণ মানুষের কল্যাণের কাজে অনুপ্রাণিত বোধ করি। সুপ্রিম কোর্টে আমার অনেক রিট মামলার মাধ্যমে বিজ্ঞ আইনজীবীগণ ও দেশের জন্য অনেক যুগান্তকারী রায় ও আদেশে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন সাধিত হয়েছে।
এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে –
- সুপ্রিম কোর্টের বিজয় ৭১ ভবন, অ্যাডভোকেট লাউঞ্জসহ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি প্রাঙ্গণে মাননীয় হাইকোর্টের আদেশের মাধ্যমে নিরবিচ্ছিন্ন মোবাইল নেটওয়ার্ক নিশ্চিত করেছি। ঢাকা আইনজীবী সমিতি ও তৎসংলগ্ন প্রাঙ্গণে নিরিবিচ্ছিন্ন মোবাইল নেটওয়ার্ক সেবা নিশ্চিতে রিট পিটিশন দায়ের করেছি যা শুনানির জন্য অপেক্ষাধীন।
- গ্রীষ্মকালে অতিরিক্ত তাপ প্রবাহের প্রেক্ষাপটে দেশের সকল বিজ্ঞ আইনজীবী ও বিজ্ঞ বিচারকদের জন্য গ্রীষ্ম ও শীতকালীন ভিন্ন ভিন্ন ড্রেস কোড নির্ধারনের জন্য ২০২৩ সালে বাংলাদেশের মাননীয় প্রধান বিচারপতি বরাবর আবেদন করি এবং আইনি নোটিশ প্রেরণ করি। অতঃপর গ্রীষ্মকালে অধস্তন আদালতের বিজ্ঞ বিচারক ও বিজ্ঞ আইনজীবীদের কালো কোট ও গাউন পরিধানের আবশ্যকতা নেই মর্মে সুপ্রিম কোর্ট বিজ্ঞপ্তি জারি করে।
- আমার দায়েরকৃত রিটের রায়ের মাধ্যমে গুগল, আমাজন, ফেসবুক, ইউটিউব, মাইক্রোসফটসহ সকল অনলাইন বিদেশি কোম্পানিকে বাংলাদেশ ট্যাক্স ও ভ্যাটের আওতাভুক্ত করতে সক্ষম হয়েছি। ফলে ২০২০ সাল থেকে বিদেশি কোম্পানিগুলো প্রতি বছর রাষ্ট্রীয় কোষাগারে শত শত কোটি টাকা রাজস্ব জমা করতে বাধ্য হচ্ছে।
- করোনা মহামারীর সময় সুপ্রিম কোর্টসহ দেশের প্রতিটি জেলা জজ আদালতে এবং আইনজীবী সমিতি প্রাঙ্গণে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রক মেশিন স্থাপন, সুরক্ষা সরঞ্জাম নিশ্চিত করতে হাইকোর্টের নির্দেশে বার কাউন্সিলের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করেছি।
- দেশের গর্ভবতী নারী এবং বয়স্কদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করোনা টিকা প্রদান নিশ্চিত করতে হাইকোর্ট আদেশ প্রদান করেন। করোনা মহামারীর সময় দেশের প্রতিটি থানা ও ইউনিয়নে সাধারণ জনগণের দোরগোড়ায় সুলভমুল্যে টিসিবি পণ্য বিক্রি নিশ্চিত করতে হাইকোর্ট আদেশ দেন।
- হাইকোর্টের ঐতিহাসিক রায়ের মাধ্যমে বৃটিশ আমল থেকে অবহেলিত ‘বাংলাদেশ গ্রাম পুলিশ’ বাহিনীর প্রায় ৪৭ হাজার সদস্যের চাকুরি জাতীয়করণে তাঁদের জীবন ধারা বদলে গেছে।
- আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। দেশের সকল শিশু-কিশোরদের নৈতিক ও সামাজিক অবক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষা করতে পাবজি, ফ্রি ফায়ার, ব্লু হোয়েলের মতো ধ্বংসাত্মক অনলাইন গেম ও লাইকি, টিকটক অ্যাপস নিষিদ্ধকরণের ফলে আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘ওয়ার্ল্ড ভিশন’ এর পক্ষ থেকে আমাকে অভিনন্দিত করা হয়।
- দেশে হৃদরোগীদের চিকিৎসায় হার্টের রিং এর সহনীয় মূল্য নির্ধারনে সম্প্রতি মহামান্য হাইকোর্ট রুল জারি করেন। এই রিটও আমি দায়ের করেছি।
- বিনা দোষে ৫ বছর জেল খাটা মিরপুরের বেনারসী কারিগর আরমান বিহারীর মুক্তি ও ২০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করতে মহামান্য হাইকোর্টে বিনা ফি তে আইনি সেবা দিয়েছি।
- দেশের শিল্প সাহিত্য ও সংস্কৃতি অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য সম্প্রতি জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ঐতিহাসিক ও বিখ্যাত গান ‘কারার ঐ লৌহ কপাট’ গানের মূল সুর রক্ষায় হাইকোর্টে রিট দায়ের করি। উক্ত রিটের প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট সকল অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে ভারতীয় সঙ্গীত শিল্পী এ. আর. রহমানের বিকৃত সুরে গাওয়া ‘কারার ঐ লৌহ কপাট’ গানটি অপসারণ করতে নির্দেশ প্রদান করেন।
ল’ইয়ার্স ক্লাব: নির্বাচিত হলে আইনজীবী ও সমিতির কল্যাণে আপনার বিশেষ কোন পরিকল্পনা আছে কিনা?
ব্যারিস্টার হুমায়ন কবির: সহকর্মীদের দোয়া, সমর্থন ও মূল্যবান ভোটে আমি সুপ্রিম কোর্ট বার এসোসিয়েশনের ‘সহ সম্পাদক’ পদে নির্বাচিত হলে আইনজীবীদের আস্থা ও মর্যাদা রক্ষার্থে নির্বাচিত কমিটির সকল সদস্যের সম্মতি ও সহযোগিতায় নিম্নোক্ত বিষয়ে অগ্রণী ভূমিকা রাখবো।
- জ্ঞান ভিত্তিক ও পেশাদার বার গড়ার প্রত্যয়ে আত্মনিয়োগ করব।
- সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন এবং বিজ্ঞ সদস্যদের মর্যাদা রক্ষা ও পেশাগত মান উন্নয়ন এবং বিকাশের জন্য নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও সেমিনার আয়োজনে দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করব।
- বিশেষ করে নবীন আইনজীবীদের জন্য বছরব্যাপী নিয়মিত বিষয় ভিত্তিক আইনি আলোচনা এবং ওয়ার্কশপ আয়োজন করবো।
- বিজ্ঞ সদস্যগণের প্রয়োজনে কোন চলমান মামলার সুনির্দিষ্ট ল’ পয়েন্টে গবেষণার জন্য বার লাইব্রেরিতে একটি গবেষণা সেল প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করব।
- বিজ্ঞ আইনজীবীগণের শিশু সন্তানদের জন্য মানসম্মত চাইল্ড কেয়ার/ডে কেয়ার সার্ভিস সম্প্রসারণ এবং কাউন্সেলিং ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করব।
- খাবার ক্যান্টিনগুলোতে মানসম্মত, পরিচ্ছন্ন ও স্বাস্থ্যকর খাবার পরিবেশন নিশ্চিতকরণে কাজ করব।
ল’ইয়ার্স ক্লাব: নির্বাচন ঘিরে সহকর্মীদের উদ্দেশে কিছু বলতে চান?
ব্যারিস্টার হুমায়ন কবির: আমি সুপ্রিম কোর্টের একজন নিয়মিত আইনজীবী। আপনাদের স্নেহ, দোয়া, ভালোবাসা ও ভোটে আমি ‘সহ-সম্পাদক’ নির্বাচিত হলে কমিটি কর্তৃক আমার উপর অর্পিত যে কোন দায়িত্ব আপনাদের মতামতকে প্রাধান্য দিয়ে পূর্ণ দক্ষতা, সততা, নিষ্ঠা ও জাবাবদিহিতার সাথে আপনের অঙ্গীকার করছি। সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সার্বিক কল্যাণে আপনাদের যে কোন সুচিন্তিত মতামত সাদরে গ্রহণ করে তা বাস্তবায়নে সদা সচেষ্ট থাকবো। আপনাদের ও পরিবারের সদস্যদের প্রতিটি দিন সুন্দর ও মঙ্গলময় হোক সেই কামনা করি।